একে-৪৭ নিয়ে ধরা পড়া আকাশ পালিয়েছিলো মালয়েশিয়ায়

 

গুলশান হামলায় সন্দেহভাজন পরিকল্পনাকারীর সাথে সাক্ষাত হয়েছিল তার

স্টাফ রিপোর্টার: সন্ত্রাসবাদের সাথে জড়িত সন্দেহে মালয়েশিয়া থেকে ফেরত পাঠানো ব্যবসায়ীর নাম পিয়ার আহমেদ ওরফে আকাশ। মালয়েশিয়া পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম বিভাগের বুকিত আমান শাখা গত ১৯ আগস্ট মালয়েশিয়ার পুচং-এর একটি বাসা থেকে তাকে গ্রেফতার করে। পরে গত ২ সেপ্টেম্বর মালয়েশিয়ার পুলিশ তাকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠায়। পিয়ার আহমেদ বর্তমানে ফেনী কারাগারে আটক রয়েছেন। তবে এর আগে ২০১৪ সালের ১৫ ডিসেম্বর সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে কুয়ালালামপুরের সিরি সার দাং থানা পুলিশ তাকে গ্রেফতার করেছিল। সূত্র জানায়, ওই সময় পর্যাপ্ত সাক্ষ্যপ্রমাণ না পাওয়ায় তিনি ছাড়া পান। এদিকে মালয়েশিয়ার পুলিশ কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে গতকাল শুক্রবার স্টার লাইনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ৩৭ বছর বয়সী ওই হোটেল ব্যবসায়ী (মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরে ‘রসনা বিলাস’ নামে একটি হোটেল রয়েছে, তবে নাম উল্লেখ করেনি) গুলশান হামলায় জড়িত একজনের সঙ্গে দেখা করেছিলেন। কর্তৃপক্ষ মনে করছে, ওই ব্যক্তি নিজ দেশে হামলার পরিকল্পনায় ছিলেন। নিজের দেশের লোকজনের সাথে তিনি নিয়মিত বৈঠক করতেন। এছাড়া বাংলাদেশে একে-৪৭ রাইফেল পাচারের সঙ্গেও তার সংশ্লিষ্টতা রয়েছে বলে বলা হয়। সেখানো আরও বলা হয়, ওই ব্যক্তি (পিয়ার) বাংলাদেশের গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলায় জড়িত সন্দেহভাজন আন্দালিব আহমেদের সঙ্গে সাক্ষাত্ করেছিলেন। মোনাশ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্র আন্দালিব ২০১২ সাল থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত মালয়েশিয়ায় থাকার পর ইস্তাম্বুলে পাড়ি জমান। তবে মালয়েশিয়ার স্টার লাইনে যে আন্দালিবের কথা বলা হয়েছে , তিনি অন্য কেউ কি-না, সে ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া যায়নি। মালয়েশিয়ান পুলিশ গত ২ আগস্ট থেকে ১৯ সেপ্টেম্বর সন্ত্রাসবাদে জড়িত সন্দেহে পিয়ার আহমেদসহ চারজনকে গ্রেফতার। এদের মধ্যে অপর তিন বিদেশিকে ইতোমধ্যে যার যার দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে বলে বৃহস্পতিবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানান দেশটির পুলিশ মহাপরিদর্শক খালিদ আবু বকর।

 

এদিকে ফেনী জেলা পুলিশ সুপার রেজাউল করিম বলেন, পিয়ার আহমেদ ওরফে আকাশ দুই অস্ত্র মামলার ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি। একটি ফেনী সদর ও অপরটি নোয়াখালী সদর থানায়। দুই মামলাই বিচারাধীন। পিয়ার আহমদে গ্রেফতার এড়াতে ২০০৭ সালে মালয়েশিয়ায় পালিয়ে যান। এরপর তার নামে ইন্টারপোলে রেড নোটিসও জারি হয়। তিনি আরো বলেন, প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, তার অপর তিন ভাইও মালয়েশিয়ায় রয়েছে। তারা চার ভাই মিলে মালয়েশিয়ায় হোটেল ব্যবসায় জড়িত রয়েছে। গ্রামের বাড়িতে বাবা একা থাকেন।

গ্রেফতারের ব্যাপারে পুলিশ সুপার বলেন, ২ সেপ্টেম্বর মালয়েশিয়া থেকে তাকে ফেরত পাঠানো হয়। পরে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ইমিগ্রেশন পুলিশ তাকে আটক করে। ওই দিন তাকে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা দফতরে রাখা হয়। পরের দিন তাকে (৩ সেপ্টেম্বর) ফেনীতে আনা হয়। ৪ সেপ্টেম্বর তাকে আদালতে পাঠানো হয়। পরে আদালতের নির্দেশে তাকে পাঠানো হয় কারাগারে। বিমানবন্দর সূত্র জানায়, ২ সেপ্টেম্বর শুক্রবার রাত ১১টায় মালয়েশিয়া মালিন্দো এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইট ১১টায় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে। এরপরই পুলিশ তাকে আটক করে।

গুলশানে হামলার ব্যাপারে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে কি-না এমন প্রশ্নের জবাবে পুলিশ সুপার বলেন, আমাদের হেফাজতে পিয়ার আহমেদ খুব অল্প সময় ছিল। ফলে তাকে ব্যাপকভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করা সম্ভব হয়নি। নতুন করে জিজ্ঞাসা করবেন কি না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, প্রয়োজনে তাই করা হবে।

কে একই পিয়ার আহমেদ: ফেনীর দাগনভুইয়া উপজেলার রামচন্দ্রপুর ইউনিয়নের নয়নপুর গ্রামের বাসিন্দা পিয়ার আহমেদ আকাশ। ১৯৯৩ সালে ফেনী শহরে জামায়াত পরিচালিত শাহীন একাডেমী স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে এসএসসি পাস করেন। স্কুলে পড়ার সময় থেকেই ভগ্নিপতি ও জেলা জামায়াতের নায়েবে আমির আবু ইউসুফের হাত ধরে জামায়াত-শিবিরের রাজনীতিতে যুক্ত হন। পরে অস্ত্র-ব্যবসায় জড়িয়ে পড়েন তিনি।

সংশ্লিস্ট সূত্র জানায়, ২০০৪ সালে চট্টগ্রামে বহুল আলোচিত দশ ট্রাক অস্ত্র থেকে খোয়া যাওয়া একে-৪৭ রাইফেল বিক্রির সময় র্যাব ২০০৫ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর পিয়ার আহমেদসহ তিনজনকে গ্রেফতার করে। পিয়ার আহমেদ খোয়া যাওয়া ৪টি একে-৪৭ রাইফেল ফটিকছড়ির শিশির ক্যাডার আজরাইল দেলোয়ারের কাছে বিক্রি করেছিল। পরে ধরা পরে র্যাবের হাতে ক্রসফায়ারে নিহত হয় শিবির ক্যাডার আজরাইল দেলোয়ার। তবে আজরাইল দেলোয়ার নিহত হওয়ার আগে অস্ত্র ব্যবসায়ী পিয়ারের এসব অস্ত্রের তথ্য প্রকাশ করেছিল। আর ওই সূত্র ধরেই র্যাব পিয়ারকে গ্রেফতার করে। তবে বেশি দিন কারাগারে থাকতে হয়নি পিয়ার আহমেদকে। বিগত চার দলীয় জোট সরকারের সময় জামায়াত নেতা দুলাভাই ফেনী জেলা জামায়াতের নায়েবে আমীর আবু ইউসুফের হস্তক্ষেপে কারাগার থেকে জামিনে মুক্তি পান তিনি। জামিনে বের হয়ে আবারও অস্ত্র ব্যবসা শুরু করেন পিয়ার। ২০০৭ সালে ওয়ান ইলেভেনের সময় পরিচয় গোপন করে মালয়েশিয়া পালিয়ে যান পিয়ার। পরবর্তীতে তাকে ধরিয়ে দেয়ার জন্য ইন্টারপোলের মাধ্যমে রেড নোটিস জারি করা হয়। আর ইন্টারপোলের হুলিয়া মাথায় নিয়ে পিয়ার আহমেদ মালয়েশিয়ায় বসে হোটেল ও ম্যানপাওয়ার সংক্রান্ত এজেন্টসহ বিভিন্ন ব্যবসায় জড়িয়ে পড়েন। পিয়ার আহমেদ মালয়েশিয়াতে অবস্থান করে রাষ্ট্র ও সরকারবিরোধী ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ছিলেন এবং জঙ্গিদের বিভিন্নভাবে সহায়তা দিয়েছেন।