শেষ পর্যন্ত আলমডাঙ্গা রেলপথ শ্রমিকের ওয়েম্যান দলের মিস্ত্রি নাটের গুরু দেলোয়ার হোসেন সাময়িক বরখাস্ত

 

আলমডাঙ্গা ব্যুরো: শেষ পর্যন্ত আলমডাঙ্গা রেলপথ শ্রমিকের ৭ নং ওয়েম্যান দলের মিস্ত্রি অপকর্মের নাটের গুরু দেলোয়ার হোসেনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। গত ১ সেপ্টেম্বর চুয়াডাঙ্গা জেলা রেলপথ শ্রমিক দলের মিস্ত্রিদের জরুরি মিটিঙে চুয়াডাঙ্গা রেলওয়ের সহকারী নির্বাহী প্রকৌশলী সৈয়দ শওকত কামাল তাকে সাময়িক বরখাস্ত করেন। বরখাস্তকৃত দেলোয়ার হোসেনের পরিবর্তে সাময়িকভাবে এ গ্রুপের চাবিম্যান জামাল উদ্দীনের ওপর আলমডাঙ্গা রেলপথের ৭ নং দলের মিস্ত্রির দায়িত্ব অর্পণ করা হয়েছে।

জানা গেছে, আলমডাঙ্গা রেলওয়ে-তে ৭ নং রেলপথ শ্রমিক বা ওয়েম্যানদের গ্রুপে মোট ১১ জন চাকরি করেন। নতুন নিয়োগপ্রাপ্ত থেকে পুরাতন নিয়োগপ্রাপ্ত সকলে মোটামুটি ১৪ হাজার থেকে ২০ হাজার টাকা করে প্রতি মাসে সরকারি কোষাগার থেকে বেতন উত্তোলন করেন। অবাক হলেও সত্য যে, এদের প্রায় অর্ধেক সদস্য মাসে ১ দিনও কর্মস্থলে না গিয়েই প্রতি মাসে বেতন উত্তোলন করে আসছেন বছরের পর বছর। আর এ জন্য ৫ সৌভাগ্যবান ওয়েম্যানকে প্রতি মাসে গুনতে হয় ৬ হাজার টাকা করে। শিরিনা আক্তার নামে এক ওয়েম্যান চুয়াডাঙ্গা সহকারী নির্বাহী প্রকৌশলী সৈয়দ শওকত কামালের বাড়িতে বিশেষ ডিউটি করেন। বসের বাড়ি বিশেষ ডিউটি করে মাসিক নজরানার ৬ হাজার টাকা পরিশোধ করেন তিনি বলে অনেকে মন্তব্য করেন। ১১ জন ওয়েম্যানের মধ্যে নাটের গুরু রেলওয়ে মিস্ত্রি দেলোয়ার হোসেন, চাবিম্যান জামাল উদ্দীন, ওয়েম্যান জামিল উদ্দীন, ওয়েম্যান হাবিবুর রহমান, ওয়েম্যান আশরাফুল ইসলাম নিয়মিত ডিউটি করেন। আর বন্ডবিল গেটে ডিউটি করেন আরেক আশরাফুল ইসলাম।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, আব্দুল করিম, শিরিনা আক্তার, কেএস খোদাবক্স, আনারুল ইসলাম ও রোকেয়া হায়দার নামের ৫ ওয়েম্যান মাসিক ৬ হাজার করে টাকার চুক্তিতে ডিউটি করেন না। এভাবেই চলছে মাসের পর মাস, বছরের পর বছর। হাজিরা খাতা দেখেও কিছুই বোঝার উপায় রাখেনি। কারো পুরো নাম লেখা নেই। আছে শুধু কিছু সঙ্কেত। বসের বাড়িতে বিশেষ দায়িত্ব পালনকারী শিরিনা আক্তার বাদে ডিউটি পালন না করা বাকি ৫ জনের নিকট থেকে প্রতি মাসে ৬ হাজার করে ৩০ হাজার রেলপথ মিস্ত্রি দেলোয়ার হোসেন গুনে গুনে আদায় করেন বলে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রসঙ্গে অভিযুক্ত দেলোয়ার হোসেন বলেন, আমি তো একা টাকা নিইনে। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও নেন। এ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের ব্যাপারে খোঁজ নিতে গেলে চুয়াডাঙ্গা রেলের ২ কর্মকর্তার নাম উঠে আসে। এদের একজন এসএসই/ওয়ে/চুয়াডাঙ্গা সাইফুল ইসলাম ও প্রকৌশলী সৈয়দ শওকত কামালের নাম। মিস্ত্রি দেলোয়ার হোসেনের বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগের সবই এক পর্যায়ে তিনি স্বীকার করে মাফ চান। এ বিষয়ে গত ৩০ আগস্ট দৈনিক মাথাভাঙ্গা পত্রিকায় গুরুত্বের সাথে প্রকাশিত হয়। এ সংবাদ প্রকাশিত হওয়ার পর চুক্তিবদ্ধ ৬ ওয়েম্যানই গত ৩০ আগস্ট কর্মস্থলে যান। সাগরদাড়ি ট্রেনে বেশির ভাগ আলমডাঙ্গা স্টেশনে নামেন। তবে কাজ করেননি। রেললাইনের ঢালে বসে ছিলেন পুরো সময়। তাদেরকে বস (মিস্ত্রি দেলোয়ার হোসেন) কাজ করতে বলেননি। এ প্রসঙ্গে এক ওয়েম্যান আরও জানান, সংবাদপত্রে প্রকাশের পর ৩০ আগস্ট কাজ না করলেও সকল ওয়েম্যান কর্মস্থলে উপস্থিত ছিলেন। নাইট ডিউটির দায়িত্ব ওয়েম্যান আব্দুল করিমের। গত ৩১ আগস্ট রাত ১০টা পর্যন্ত তাকে আলমডাঙ্গা স্টেশন ও তার আশপাশে কোথাও দেখা যায়নি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তিনিও কর্মস্থলে উপস্থিত ছিলেন না। গত ৩১ আগস্ট এ বিষয়ে আবারও দৈনিক মাথাভাঙ্গা পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হয়। দুর্নীতির সংবাদ পড়ে মানুষ চমকে ওঠে। সকলে ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে এ দুর্নীতির বিরুদ্ধে। দাবি ওঠে সীমাহীন দুর্নীতির হোতা মিস্ত্রি দেলোয়ার হোসেন ও তার অপকর্মের অংশীদার চুয়াডাঙ্গা রেলওয়ের দু কর্মকর্তাকে দ্রুত অপসারণপূর্বক তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের। এরই এক পর্যায়ে গত বৃহস্পতিবার ৭ নং ওয়েম্যান দলের নেতা মিস্ত্রি দেলোয়ার হোসেনকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে।

Leave a comment