কেরানীগঞ্জে নেয়া হলো সব বন্দী : ফুল দিয়ে বরণ
স্টাফ রিপোর্টার: রাজধানীর নাজিমউদ্দিন রোডের ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের ঠাঁই হলো ইতিহাসের পাতায়। গতকাল শুক্রবার থেকে এর নতুন ঠিকানা হলো কেরানীগঞ্জের রাজেন্দ্রপুরে। সেখানেই স্থানান্তর করা হয়েছে এই কারাগারে থাকা সব বন্দীকে। পরিত্যক্ত হলো পুরনো ঢাকার কারাগারটি। গতকাল বিজিবি, ৱ্যাব, পুলিশের কঠোর নিরাপত্তার মধ্যে ভোর ৬টা থেকে ২৫টি প্রিজন ভ্যানে করে স্থানান্তর করা হয় বন্দীদের। রজনীগন্ধা ফুল দিয়ে নতুন কারাগারের ফটকে বরণ করা হয় বন্দীদের। নিরাপত্তার খাতিরে মেয়র হানিফ ফ্লাইওভার এবং চানখারপুল, বংশাল, চকবাজার ও বেগমবাজারে কয়েকটি সড়কে জনসাধারণের চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়।
কারা অধিদফতরে গতকাল শুক্রবার এক সংবাদ সম্মেলনে কারা মহাপরিদর্শক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ ইফতেখার উদ্দিন বলেন, ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে প্রায় ৮ হাজার বন্দী ছিলো। এদের মধ্যে আগেই জঙ্গি, রাজনৈতিক ও যুদ্ধাপরাধীর মামলার হাই প্রোফাইল আসামি, নারী বন্দীদের (কেরানীগঞ্জের নারী সেল না থাকায়) কাশিমপুর কারাগারে স্থানান্তর করা হয়েছিলো। আর ৬ হাজার ৪০০ বন্দীকে ( পুরুষ) শুক্রবার কেরানীগঞ্জ কারাগারে নেয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, নতুন কারাগারে বন্দীদের মানবাধিকার সর্বোচ্চ মাত্রায় রক্ষিত হবে। জাতিসংঘের ন্যূনতম মানদণ্ড অনুযায়ী প্রতি বন্দীর জন্য ৩৫ বর্গফুট স্থান নিশ্চিত করার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু নতুন এ কারাগারে প্রতি বন্দীর জন্য গড়ে ৯০ বর্গফুট স্থান রাখা হয়েছে। ৮ হাজার বন্দীর জন্য দোতলা একটি ভবন রাখা হয়েছে স্বজনদের সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য। এ দুই তলা মিলিয়ে সর্বোচ্চ ৪০ জন বন্দী সাক্ষাতের সুযোগ পাবে বলে জানান তিনি।
নতুন কারাগারে বন্দীদের দেখা করার জায়গা অনেক ছোট, সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে কারা মহাপরিদর্শক বলেন, এটা সত্যি। বর্তমানে আসামিদের দেখা করার জন্য একটি দোতলা ভবন রয়েছে যাতে মাত্র ৪০ জন আসামি তার পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে পারবে। তবে আগামীতে এই ভবনকে ৪ তলা করা হবে এবং পাশে আরেকটি ৪ তলা ভবন তৈরি করা হবে যাতে একবারে ৮০ জন আসামি দেখা করতে পারে। তিনি আরও বলেন, কেরানীগঞ্জের নতুন কারাগারের আশপাশে কোনো দোকানপাট ও অবৈধ স্থাপনা বসতে দেয়া হবে না।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার শেখ মারুফ হাসান বলেন, বন্দী স্থানান্তরকে কেন্দ্র করে গতকাল ভোর ৪টা থেকে কেন্দ্রীয় কারাগার ও এর আশপাশের এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়। তিনি বলেন, সকাল থেকেই ঢাকা নাজিমউদ্দিন রোড থেকে কেরানীগঞ্জ নবনির্মিত কারাগার পর্যন্ত ব্যাপক নিরাপত্তা বলয় তৈরি করা হয়েছে। রাস্তায় ২০০ গজ পরপর অবস্থানে ছিলো ৱ্যাব, পুলিশ, বিজিবি ও এপিবিএন।
তিনি আরও বলেন, বন্দী স্থানান্তরে কোনো (হুমকি) ছিলো না। তারপরেও যেহেতু এটি দেশের ইতিহাসের একটি বড় ঘটনা, তাই সর্বোচ্চ নিরাপত্তা দিয়েই বন্দী স্থানান্তর করা হচ্ছে। বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) সদর দফতরের জনসংযোগ কর্মকর্তা মুহসীন রেজা জানান, কারাবন্দী হস্তান্তর নির্বিঘ্ন করতে মোতায়েন করা হয় ২৪ প্লাটুন বিজিবি।
ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার জাহাঙ্গীর কবির জানান, বন্দী স্থানান্তরের কাজ গতকাল শুক্রবার শুরু হলেও আসবাবপত্রসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম, প্রয়োজনীয় ফাইলসহ অনেক কিছু আগেই স্থানান্তর করা হয়েছে।
পুরনো ঢাকার নাজিমউদ্দিন রোডের পুরনো কারাগার থেকে প্রায় ১২ কিলোমিটার দূরে ঢাকা-মাওয়া সড়কের দক্ষিণে রাজেন্দ্রপুরে নতুন কারাগারের অবস্থান। সাড়ে চার হাজার বন্দী ধারণ ক্ষমতার নতুন কেন্দ্রীয় কারাগারটি গত ১০ এপ্রিল উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। ১৯৪ একর জায়গার ওপর চারশ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত এ কারাগারটি এশিয়ার সর্বাধুনিক ও বৃহত্তম।
প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, ১৭৮৮ সালে একটি ক্রিমিনাল ওয়ার্ড চালুর মাধ্যমে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের (পুরনো ঢাকার নাজিমউদ্দিন রোডে) যাত্রা শুরু। সুদীর্ঘ যাত্রাপথে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের রয়েছে হাজারো স্মৃতি। এ কারাগারে এক সময় বন্দী ছিলেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। এ কারাগারেই ১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বর হত্যা করা হয়েছিলো জাতীয় চার নেতাকে।