স্টাফ রিপোর্টার: খুশির পিতাপক্ষসহ স্বামীর প্রতিবেশীদের বদ্ধমূল ধারণা খুশিকে হত্যা করে ঘরের আড়ায় ঝুলিয়ে রাখা হয়েছিলো। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনেও আত্মহত্যা বলে উল্লেখ করা হয়েছে। পুলিশ এ তথ্য দিয়ে বলেছে, খুশিকে আত্মহত্যায় প্ররোচনার অভিযোগটির ওপরও গুরুত্ব দিচ্ছেন মামলার তদন্তকারী অফিসার চুয়াডাঙ্গা সদর থানার এসআই ইবনে খালিদ স্ট্যালিন। তিনি বলেছেন, মামলার মূল আসামি রাকিবুলসহ ৫জনকে জেলহাজতে প্রেরণ করা হয়েছে।
এদিকে গতকালও চুয়াডাঙ্গা শহরতলী দৌলাতদিয়াড় বঙ্গজপাড়ার নারী-পুরুষ বিক্ষোভ করেছেন। আত্মহত্যায় প্ররোচনা নয়, খুশিকে তার স্বামী রাকিবুল পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেছে। হত্যা করে গলায় ফাঁস লাগিয়ে ঘরের আড়ার সাথে ঝুলিয়ে রাখে বলেও অভিযোগ বিক্ষোভকারীদের। গতরাত সাড়ে ৮টার দিকে বিক্ষোভ নিয়ে চুয়াডাঙ্গা-১ আসনের সংসদ সদস্য জাতীয় সংসদের হুইপ বীর মুক্তিযোদ্ধা সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার ছেলুনের নিকট খুশির প্রতিবেশীরা গেলে তিনি প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের প্রতিশ্রুতি দেন।
গতপরশু ভোরে খুশির স্বামী রকিবুল ইসলামকে তার দাদাবাড়ি দামুড়হুদার দলকালক্ষ্মীপুর থেকে গ্রেফতার করা হয়। চুয়াডাঙ্গা সদর থানার এসআই ইবনে খালিদ স্ট্যালিন ও এসআই মাসুদ পারভেজ সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে দলকালক্ষ্মীপুর থেকে তাকে গ্রেফতার করেন। গতকাল বুধবার তাকে খুশিকে আত্মহত্যায় প্ররোচনা মামলায় আদালতে সোপর্দ করা হয়। বিজ্ঞ আদালত তাকে জেলহাজতে প্রেরণের অদেশ দেন।
অপরদিকে একই মামলার অপর আসামি রকিবুলের পিতা জসিম উদ্দীন, রকিবুলের ফুফু রজিনা খাতুন, রাকিবুলের মা শেফালী খাতুন ও রকিবুলের মামা জাহাঙ্গীর হোসেন একই আদালতে হাজির হয়ে জমিনের আবেদন করেন। বিজ্ঞ আদালত এদের জামিনের আবেদন না মঞ্জুর করে সকলকে জেলহাজতে প্রেরণের আদেশ দেন। পুলিশ প্রহরায় এদেরকে জেলহাজতে প্রেরণ করা হয়।
জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গা জেলা সদরের আলুকদিয়া ইউনিয়নের হাতিকাটা গ্রামের মোকাম আলীর মেয়ে খুশির সাথে বছর খানেক আগে দৌলাতদিয়াড় বঙ্গজপাড়ার বাসিন্দা জসিম উদ্দীনের ছেলে রকিবুল ইসলামের বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকে নানা অজুহাতে মারধর করতো খুশিকে। গত ২৪ জুন সকাল ১১টার দিকে স্বামীর বাড়ির পাকা ঘরের ছাদের ওপর টিন শেডের আড়ায় গলায় ফাঁস দেয়া লাশ উদ্ধার করা হয়। খুশির পিতা মাতার অভিযোগ, তাকে হত্যা করে লাশ ঝুলিয়ে রেখে আত্মহত্যা বলে জানানো হচ্ছে। এ অভিযোগে মামলার প্রস্ততিও নেয়া হয়। পুলিশ হত্যা মামলা গ্রহণ না করে অপমৃত্যু মামলা রুজু করে মৃতদেহ ময়নাতদন্তের সিদ্ধান্ত নেয়। ময়নাতদন্ত করা হয়।
অপরদিকে খুশির মা আকলিমা খাতুন মানবতার সহযোগিতায় আত্মহত্যায় প্ররোচনার অভিযোগে মামলা দায়ের করেন। মামলায় খুশির স্বামী রকিবুল ইসলাম, শ্বশুর জসিম উদ্দীন, শাশুড়ি শেফালী খাতুন, ফুফু শাশুড়ি রজিনা খাতুন ও মামা শ্বশুর জাহাঙ্গীরকে আসামি করা হয়। রকিবুলকে গতপরশু ভোরে গ্রেফতার করা হয়। গতকাল মামলার অপর আসামিরা আত্মসর্পণ করে জামিনের আবেদন জানান। গতকাল সন্ধ্যার পর বঙ্গজপাড়া ও হাতিকাটার নারী-পুরুষ বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে জাতীয় সংসদের হু্ইপ বীর মুক্তিযোদ্ধা সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার ছেলুনের নিকট নালিশ জানিয়ে ঘাতক পরিবারের শাস্তির দাবি জানিয়েছেন। এ সময় হুইপ ছেলুন জোয়ার্দ্দার এমপি প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবেন বলে প্রতিশ্রুতি দিলে বিক্ষোভকারীরা বাড়ি ফেরেন। বাড়ি ফেরার সময় বঙ্গজপাড়ার বিক্ষোভকারীদের প্রায় সকলের মুখেই ছিলো অভিন্ন উক্তি, ওই পরিবাটি খারাপ। বিচার হওয়া উচিত। আত্মহত্যা নয়, খুশিকে মেরে হত্যা করেই ঝুলিয়ে রাখা হয়।
পুলিশ বলেছে, ময়না তদন্ত রিপোর্টে হত্যা বলে উল্লেখ করা হলে অপমৃত্যু মামলাটি অবশ্যই হত্যা মামলায় রূপান্তর করা হতো।