ঈদের ছুটিতে চুয়াডাঙ্গায় সড়ক দুর্ঘটনায় ৫ জনসহ সারাদেশে নিহত ২৭

 

স্টাফ রিপোর্টার: ঈদের ছুটির চারদিনে চুয়াডাঙ্গায় সড়ক দুর্ঘটনায় ৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। গতকাল শনিবার বিকেলে ভালাইপুরে পাখিভ্যানে ওড়না জড়িয়ে এক নারীর মৃত্যু হয়েছে। শুক্রবার পৃথক দুর্ঘটনায় আলমডাঙ্গার ডম্বলপুরে আলমসাধু উল্টে ৩ জন নিহত হন। এদিন দর্শনার রামনগরে অপর এক দুর্ঘটনায় এক ব্যক্তি নিহত হন। এছাড়াও কুষ্টিয়ায় পৃথক দুর্ঘটনায় কলেজছাত্রসহ ৩ জনের মৃত্যু হয়েছে।

এদিকে রংপুর, নারায়ণগঞ্জ, মাদারীপুর, ঝালকাঠি ও কুমিল্লায় সড়ক দুর্ঘটনায় ২৭ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। এদের মধ্যে রংপুরে মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় নীলফামারীর এক পরিবারের নারী-শিশুসহ পাঁচজন নিহত হন। রংপুর-দিনাজপুর মহাসড়কে তারাগঞ্জ উপজেলার জিগাতলা এলাকায় শুক্রবার বিকেলে বাসের ধাক্কায় ভ্যানযাত্রী এক পরিবারের নারী-শিশুসহ পাঁচজন ও ভ্যানচালক নিহত হয়েছেন।

আলমডাঙ্গা ব্যুরো জানিয়েছে, কুষ্টিয়া-আলমডাঙ্গা সড়কের ডম্বলপুর নামকস্থানে শ্যালোইঞ্জিনচালিত আলমসাধু উল্টে ৩ জন মারা যান। আহত হন আরও দুজন। গত শুক্রবার দুপুর আড়াইটার দিকে এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলো- আলমডাঙ্গা উপজেলার পারকুলা গ্রামের জাহাঙ্গীর হোসেনের ছেলে প্রিন্স (১৮), রফিকুল হকের ছেলে সজল (১৭) ও গ্রামের মুকুল মণ্ডলের ছেলে ইমন (১৬)। এছাড়া গুরুতর আহত অপর দু যুবক হৃদয় ও রুবেলের বাড়িও একই গ্রামে। তাদেরকে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রাখা হয়েছে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, কুষ্টিয়ার পোড়াদহ থেকে একটি আলমসাধুযোগে ওই ৫ যুবক আলমডাঙ্গাতে আসছিলেন। দুপুর আড়াইটার দিকে আলমসাধুটি আলমডাঙ্গা-কুষ্টিয়া সড়কের ডম্বলপুর মোড়ে অতিক্রম করার সময় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সড়কের পাশের একটি গাছের সাথে ধাক্কা মারে। এতে ঘটনাস্থলেই নিহত হয় আলমসাধু আরোহী প্রিন্স। পরে স্থানীয়রা আহতদের উদ্ধার করে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে নিলে সেখানে মারা যায় সজল ও ইমন ।

অপরদিকে আলমডাঙ্গার অভয়নগর গ্রামের মহিলাসহ কতিপয় ব্যক্তি শুক্রবার কুষ্টিয়ার ঝাউদিয়া মসজিদে মানত শোধ দিতে যায়। ফিরে আসার সময় ইবি থানার আসাননগর গ্রামে পৌঁছুলে তাদের আলমসাধুর একটি চাকা খুলে গেলে মারাত্মক দুর্ঘটনা ঘটে। এতে ৫ জন মারাত্মক আহত হন। এরা হলেন- অভয়নগর গ্রামের আসরুফ আলীর মেয়ে আসমা (১৫), আব্দুর রশিদের মেয়ে মিম (১৫), ইবাদত হোসেনের মেয়ে শারমিন (১৫), আতিয়ার রহমানের স্ত্রী উজালা ও আব্দুস কুদ্দুস মন্ডল (৫৫)। তাদের সকলকে উদ্ধার করে আলমডাঙ্গার শেফা ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়েছে।

এদিকে দামুড়হুদার দর্শনা-মজিবনগর সড়কে রামনগরে রাস্তা পার হয়ার সময় দ্রুতগামী একটি মোটরসাইকেল ধাক্কা দিলে জামাত আলী গুরুতর আহত হন। তাকে উদ্ধার করে প্রথমে দর্শনার একটি ক্লিনিকে পরে যশোর আড়াইশ বেড হাসপাতালে ভর্তি করা হলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বিকেল ৫টার দিকে মারা যান তিনি। জামাত আলী রামনগর গ্রামের মৃত বাবর আলীর ছেলে।

অপরদিকে গতকাল শনিবার বিকেলে চুয়াডাঙ্গা মেহেরপুর সড়কের ভালাইপুরে পাখিভ্যানের চাকায় ওড়না জড়িয়ে শাহাতন নেছা (৫০) নামের এক মহিলার মৃত্যু হয়েছে। তিনি আলমডাঙ্গার আনন্দিপুর গ্রামের আশকার আলীর স্ত্রী। বিকেলে পাখিভ্যানযোগে বাড়ি থেকে গোকুলখালী যাওয়ার পথে ভালাইপুরে পৌঁছুলে চাকায় উড়না জড়িয়ে যায়। এ সময় শাহাতন নেছা ভ্যান থেকে ছিটকে পড়েন পাকা রাস্তার ওপর। গুরত্বর আহত অবস্থায় তাকে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সন্ধ্যায় মারা যান তিনি।

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি জানিয়েছেন, কুষ্টিয়ায় সড়ক দুর্ঘটনায় টিপু সুলতান ওরফে ময়না (৪০) ও সজল হোসেন (১৭) নামে দু বর যাত্রী ও দৌলতপুরে এক কলেজছাত্র নিহত হয়েছে। নিহত ময়না কুষ্টিয়া মার্কেন্টাইল ব্যাংকের অফিস পিয়ন। আর সজল ঢাকার গাজিপুর মাওনা চৌরাস্তার রফিকুল ইসলামের ছেলে। কলেজছাত্র দৌলতপুর উপজেলার ফিলিপনগরআইনাল হকের ছেলে শাকিল (১৯)।

কুষ্টিয়া হাইওয়ে ক্যাম্প পুলিশের উপ-পুলিশ পরিদর্শক আব্দুর জব্বার জানান, কুষ্টিয়া-ভেড়ামারা সড়কের নওদা গোবিন্দপুর এলাকায় বিয়ের দাওয়াত খেয়ে ফেরার পথে কুষ্টিয়া মার্কেন্টাইল ব্যাংকের অফিস পিয়ন টিপু সুলতান ওরফে ময়না দু মোটরসাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষে ঘটনাস্থলেই নিহত হয়।

অপরদিকে একই মহাসড়কের ত্রিমোহনী নামক স্থানেও দুই মোটরসাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষে চালক সজল আহত হয়। পরে তাকে উদ্ধার করে কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সে মারা যায়।

এদিকে দৌলতপুরে কল্যাণপুর বাজারে বাসের ধাক্কায় শাকিল (১৯) নামে এক কলেজ ছাত্রের মৃত্যু হয়েছে। শনিবার সকালে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সে মারা যায়। নিহত শাকিল উপজেলার ফিলিপনগর মণ্ডলপাড়া গ্রামের আইনাল হকের ছেলে। পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছে শুক্রবার শাকিল তার বন্ধুদের সাথে কল্যাণপুর এলাকায় বেড়াতে যায়। বেড়ানো শেষে রাত সাড়ে ১১টার দিকে বাড়ি ফিরে যাবার জন্য কুষ্টিয়া-প্রাগপুর সড়কের ওই স্থানে দাড়িয়ে ছিলো। এ সময় একটি বাস তাকে ধাক্কা দিয়ে চলে যায়। এ ঘটনায় শাকিল গুরুতর আহত হয়। আহত অবস্থায় কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সে মারা যায়। শাকিল কুষ্টিয়া সরকারি কলেজে উচ্চ মাধ্যমিকের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র।

 

Leave a comment