বৈরী আবহাওয়ায় ফলন বিপর্যয় হলেও মেহেরপুরের আম প্রথম যাবে বিদেশে

 

মহাসিন আলী: বৈরি আবহাওয়ার কারণে এ বছর মেহেরপুর জেলায় আমের ফলন ভালো হয়নি। তারপরও এ বছর মেহেরপুরের সুস্বাদু আম দেশের বাইরে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নে রফতানির উদ্যোগ নিয়েছে কৃষি বিভাগ। ইতোমধ্যে বেশ কিছু চাষির সাথে চুক্তি করেছেন রফতানিকারকরা। চুক্তি অনুযায়ী মানসম্মত আম পেতে গাছে ফ্রুট ব্যাগের মাধ্যমে আম ঢেকে দেয়া হচ্ছে। তবে ব্যাগের দাম বেশি এবং এ পদ্ধতিতে আম উৎপাদনে খরচ বেশি হওয়ায় আম চাষিদের আগ্রহ কম বলে জানিয়েছেন সাধারণ চাষিরা।

দেশে সুস্বাদু আম উৎপাদনের জন্য খ্যাতি রয়েছে মেহেরপুর জেলার। এ জেলায় হিমসাগর, ল্যাংড়া, বোম্বাই, ফজলি, আম্রপালিসহ বিভিন্ন জাতের আম উৎপাদন হয়ে থাকে। এখানকার উৎপাদিত আমের চাহিদাও রয়েছে দেশজুড়ে। সাতক্ষীরা, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও রাজশাহীর পর এবার মেহেরপুর জেলার ঐতিহ্যবাহী সুস্বাদু হিমসাগর আম রফতানির উদ্যোগ নিয়েছে কৃষি বিভাগ। রফতানি হবে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নে। ইতোমধ্যে বায়ারদের সাথে স্থানীয় চাষিদের চুক্তিও সম্পন্ন হয়েছে। তাদের পরামর্শ অনুযায়ী মানসম্মত আম উৎপাদনে চুক্তিবদ্ধ চাষিরা এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন আম ব্যাগিঙে। ফল ছিদ্রকারী পোকা থেকে আমকে রক্ষা করতে ফ্রুট ব্যাগের মাধ্যমে ঢেকে দেয়া হচ্ছে গাছের রফতানিযোগ্য আম। জেলার আম দেশের বাইরে রফতানি হলে বাজার দর ভালো পাবেন এমনটি ভেবে খুশি এ জেলার চাষিরা।

প্রতিটি ফ্রুট ব্যাগের বাজার মূল্য ৪ টাকা। এ হিসেবে ব্যাগিং পদ্ধতিতে প্রতি কেজি আম উৎপাদনে ২৫ থেকে ৩০ টাকা বাড়তি খরচ হবে। যেখানে বালাইনাশক প্রয়োগ করে কেজিপ্রতি আম উৎপাদনে খরচ হয় ৪ থেকে ৫ টাকা। কাজেই কাঙ্ক্ষিত দাম না পেলে অথবা বায়াররা আম নিতে অপারগতা প্রকাশ করলে চুক্তিবদ্ধ চাষিদের মোটা অঙ্কের লোকসান গুনতে হবে। এ নিয়েও শঙ্কা কাজ করছে চুক্তিবদ্ধ চাষিদের মাঝে। আবার বায়ারদের সাথে চাষিদের চুক্তি নিয়েও লুকোচুরি করা হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে চাষিদের।

বায়ার প্রতিনিধি মফিজুর রহমান জানান, ব্যাগিং করে উৎপাদন করা রফতানিযোগ্য প্রতিটি আম নেয়া হবে। কোনোটিই বাদ দেয়া হবে না। পাশাপাশি সাধারণ বাজার মূল্যের চেয়ে বেশি দাম প্রদান করা হবে বলেও জানান তিনি।

মেহেরপুর শহরের কয়েকজন আমচাষি জানান, ব্যাগের দাম বেশি এবং এ পদ্ধতিতে আম উৎপাদনে খরচ বেশি হওয়ায় আগ্রহ কম সাধারণ আম চাষিদের মাঝে। ব্যাগ সহজ লভ্যতা ও দাম কম হলে তারাও মানসম্মত আম উৎপাদন করে ভোক্তাদের মাঝে সরবরাহ করতে পারবে বলে দাবি আম চাষিদের।

মেহেরপুর শহরের উপকণ্ঠ বামনপাড়ার বিশিষ্ট আমব্যবসায়ী ও বাগানমালিক আলাউদ্দিন জানান, এ বছর প্রথম থেকে বৃষ্টি না হওয়ায় গাছে আম দাঁড়ায়নি। এছাড়া মাঝে কালবোশেখি ঝড় ও শিলের কারণে গাছের আম পড়ে যাওয়ায় চাষিদের ক্ষতি হয়েছে। তিনি আরো জানান, বৈরি আবহাওয়ার কারণে এ বছর চাষিরা বাগান থেকে শতকরা ৪০ ভাগ আমের ফলন পাচ্ছেন। তার ওপর প্রশাসনের বেধে দেয়া সময় অনুযায়ী গাছ থেকে আম ভাঙতে গেলে চাষি আরও ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। তিনি বলেন, প্রশাসন দেখতে পারছে মানবদেহের ক্ষতিকর কোনো রাসায়নিক দ্রব্য চাষি আমে মিশাচ্ছে কি-না। সে অনুযায়ী অসাধু বাগানমালিক তথা আমচাষি কিংবা ব্যবসায়ীদের জেল-জরিমানা করতে পারে প্রশাসন। তবে কবে কখন আম ভাঙতে হবে সেটা আম বাগানমালিক ও ব্যবসায়ীদের হাতে ছেড়ে দেয়া উচিত বলে এলাকার বাগানমালিক ও চাষিরা মনে করেন।

মেহেরপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপপরিচালক এসএম মোস্তাফিজুর রহমান জানান, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের হিসেব মতে জেলায় এবার আড়াই হাজার হেক্টর জমির বাগান থেকে প্রায় ২০ হাজার মেট্টিক টন আম উৎপাদনের লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। তিনি আরো বলেন, বিদেশ থেকে ব্যাগ আমদানি করায় দাম একটু বেশি। তবে চাহিদা বাড়লে দেশীয়ভাবে ব্যাগ তৈরি করা হবে। আর তখন এ পদ্ধতিতে আম উৎপাদন করে ভোক্তাদের মাঝে সরবরাহ করা সম্ভব হবে।

 

Leave a comment