স্টাফ রিপোর্টার: মুজিবনগর সরকারকে অস্থায়ী সরকার বলতে নারাজ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচটি ইমাম। ওই সরকারকে অস্থায়ী সরকার হিসেবে প্রচার করায় একটি বেসরকারি টেলিভিশনকে তিরস্কারও করেন তিনি। মুজিবনগর সরকার গঠনের ৪৫তম বার্ষিকী উপলক্ষে শুক্রবার সন্ধ্যায় মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে এক আলোচনায়সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন ইমাম। তিনি বলেন, আমি দুঃখের সাথে লক্ষ্য করছি… প্রত্যেকটি মুক্তিযুদ্ধের পরে কিছু দেশদ্রোহী থাকে, কুলাঙ্গার থাকে। একটা সময় ছিলো মুজিবনগরকে বিকৃত করে আমাদের মুজিবনগরী বলে গালি দেয়া হতো, এখনও দেয়। সেজন্য আমি মুজিবনগর সরকার বলতে দ্বিধাবোধ করি, আমি মুজিবনগর সরকার বলি না। আমি বলি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার। এরপর দীর্ঘক্ষণ ধরে মুজিবনগর সরকার এবং এরপরে আরও দুটি সরকার গঠনের পুরো প্রক্রিয়া বিস্তারিতভাবে তুলে ধরেন এইচটি ইমাম। আমি এবারও কয়েকটি টেলিভিশনে দেখেছি… আমি ভাবছিলাম কয়েকটি টেলিভিশনের মালিককে টেলিফোন করবো। এর মধ্যে সময় টিভি- বারেবারেই বলছে অস্থায়ী সরকার। কিসের অস্থায়ী সরকার? অস্থায়ী তো নয়ই, ওটাই চিরস্থায়ী সরকার, ক্ষোভের সাথে বলেন প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা। সরকার তো একই, রাষ্ট্র তো একই, একটি ধারাবাহিকতা চলতে থাকে। কেমন করে অস্থায়ী সরকার হয়? কেমন করে এদের মাথায় (সময় টিভি) এই কথাটা আসে আমি ভেবেই পাই না। একেবারে কুলাঙ্গার ছাড়া আমি অন্য কোনো গাল দেবো না। মঞ্চে বসা প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানি বিষয়ক উপদেষ্টা তৌফিক-ই ইলাহী চৌধুরী এ সময় ইমামকে জানান, সময় টিভির সাংবাদিক এই অনুষ্ঠানে আছেন। এ সময় তিনি বলেন, ওরা শিখে নিক। ইমাম বলেন, ১৯৪৭ সালে কতোজন নিজেদের বাঙালি বলে পরিচয় দিতে গর্ববোধ করতাম? আমাদের জাতিসত্তা, আমাদের যে ঐতিহ্য আছে, ইতিহাস, ভাষা, নিজস্ব চালচলন- যেসব জিনিস নিয়ে জাতি গঠন করা যায় তার সবাই এখানে ছিলো। আমাদের মধ্যে বাঙালি জাতিসত্তা বপন করলেন শেখ মুজিবুর রহমান। তিনি আমাদের আস্তে আস্তে বোঝালেন যে তোমরা পশ্চিমাদের থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন, তোমাদের একটি সত্তা আছে, তোমাদের ভাষা আছে এসব নিয়ে গৌরববোধ করতে পারি। এই গৌরববোধ ও জাতিসত্তা নিয়ে যখন কেউ সচেতন হয় তখন স্বাধীনতার চেতনা আসে। পাকিস্তান এখনও বাংলাদেশকে মেনে নেয়নি উল্লেখ করে উপদেষ্টা বলেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতানায় যারা বিশ্বাস করে না, বঙ্গবন্ধুকে ও বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতিকে যারা বিশ্বাস করে না তাদেরে এদেশে কোনো স্থান নেই। এটি মেনে নিয়েই পরবর্তী মুক্তিযুদ্ধ শুরু করা উচিত। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কালরাতে নিরস্ত্র বাঙালির ওপর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বর্বরোচিত হামলার পর শুরু হয় বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ। এরপর ১০ এপ্রিল আনুষ্ঠানিকভাবে সার্বভৌম গণপ্রজাতন্ত্র রূপে বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠা ঘোষণা করা হয়। ২৬ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বাধীনতা ঘোষণাকে দৃঢ়ভাবে সমর্থন ও অনুমোদন করা হয় সেই ঘোষণাপত্রে। ঘোষণাপত্রে দেশের সংবিধান প্রণীত না হওয়া পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রপতি এবং সৈয়দ নজরুল ইসলামকে প্রজাতন্ত্রের উপরাষ্ট্রপতি ঘোষণা করা হয়। এছাড়া তাজউদ্দিন আহমেদ ওই সরকারের প্রধানমন্ত্রী, খন্দকার মোশতাক আহমেদ পররাষ্ট্রমন্ত্রী, ক্যাপ্টেন মুহাম্মদ মনসুর আলী অর্থমন্ত্রী এবং এ এইচ এম কামারুজ্জামান স্বরাষ্ট্র, ত্রাণ ও পুনর্বাসন মন্ত্রীর দায়িত্ব পান। ১৭ এপ্রিল সকালে মুজিবনগরে শপথগ্রহণের মাধ্যমে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার প্রতিষ্ঠা লাভ করে।
এসব ঘটনার প্রসঙ্গ টেনে এইচটি ইমাম বলেন, আগে রাষ্ট্রের অভ্যুদয় হলো। এর পরে পরেই রাষ্ট্রের প্রধান সরকার গঠন করলেন। রাষ্ট্রের যেদিন যাত্রা সেদিনের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই সরকারেরও যাত্রা শুরু। ব্যারিস্টার আমীর-উল ইসলামের সভাপতিত্বে আলোচনাসভায় প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানি বিষয়ক উপদেষ্টা তৌফিক-ই এলাহী চৌধুরী, মাহবুব উদ্দিন আহমেদ বীর বিক্রম ও তাউদ্দিন আহমেদের মেয়ে মাহাজাবিন আহমেদ মিমি বক্তব্য দেন। অনির্বাণ ৭১ নামে একটি সংগঠন আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে দর্শক সারিতে অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিককেও দেখা গেছে।