ভূমিহীন বনাব জমিমালিক যুদ্ধ : গঙ্গাদাসপুরে রক্তের বন্যা

বিরোধের সূত্রপাত অনেক আগে। লড়াই শুরু কয়েক বছর ধরে। এক পক্ষ জমি উদ্ধারে তথা জমি বেদখল মুক্ত করার লড়াইয়ে নেমেছে, অপর পক্ষ আশ্রয়স্থল ভিটেমাটি রক্ষার প্রশ্নে ঐক্যবদ্ধ। দু পক্ষের বিপরীতমুখী অবস্থানে রাজনৈতিক ক্ষমতার প্রভাব যে বিদ্যমান তা নতুন করে বলাই বাহুল্য। চলমান রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ থামবে কবে, কে জানে!
কয়েক বছর ধরেই রক্ত ঝরছে। সর্বশেষ গত পরশু সোমবার সন্ধ্যার পর বোমা ভোজালি নিয়ে একপক্ষের হামলায় ভুমিহীনদের দুজন নিহত হয়েছে। নারীসহ আহত হয়েছে কয়েকজন। পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদনে হামলার যে বর্ণনা উঠে এসেছে তা শুনে এলাকায় আইনশৃঙ্খলা আছে কি-না ভাববার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। পুনঃ হামলা বা পাল্টা হামলার শঙ্কা তো রয়েছেই। শান্তিকামীরা দ্রুত প্রতিকার প্রত্যাশা করলেও স্বার্থের মোহে লড়াইয়ে মত্তদের মর্জি বোঝা ভার।
স্থানীয়দের বরাত দিয়ে পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত তথ্যে জানা গেছে, জীবননগর উপজেলার গঙ্গাদাসপুর গ্রামের বিস্তীর্ণ বহু জমি এক সময় খাসকবলাভুক্ত হয়। সেই জমি ভুমিহীনদের মাঝে লিজও দেয়া হয়। অপরদিকে জমির মালিকানা দাবি করে শরিকেরা শুরু করে আইনি লড়াইসহ জমি দখল নেয়ার প্রক্রিয়া। এরই মধ্যদিয়ে ফুটে ওঠে রক্তক্ষরণের আশঙ্কা। দৈনিক মাথাভাঙ্গায় এ বিষয়ে একাধিক প্রতিবেদনও প্রকাশিত হয়। না, রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ এড়ানো যায়নি। যাবে কিভাবে? যেখানে ভূমিহীন আর জমির মালিক দাবিদারদের লড়াইয়ের মাঝে রাজনৈতিক ক্ষমতার উষ্ণতা, সেখানে সমাজের বাস্তবতায় প্রশাসনের পারদর্শিতা কতটুকু সেটাও বিবেচ্য বিষয় বটে। তাছাড়া জমি রেকর্ডকারকদের দুর্নীতি অদূরদর্শিতা তো রয়েছেই। সে কারণে জমি নিয়ে বিরোধের মূল উৎপাটনে প্রয়োজনে পদ্ধতিরও পরিবর্তন করা দরকার। আর খুন? একটি খুনের দ্রুত দৃষ্টান্তমূলক বিচার হলে আরেকটি খুনের পথ রুদ্ধ হয়। অন্যথায় বাড়ে রক্তের হোলি। পুলিশের পক্ষপাত পেশিশক্তিকেই উস্কে দেয়।
একটু-আধটু নয়, প্রায় দেড়শ বিঘা জমি। দীর্ঘদিন ধরে বসবাস ও চাষাবাদের মধ্যদিয়ে ভূমিহীনরা তা নিজেদেরই ভেবে নিয়েছে। দীর্ঘদিনের বসবাসসূত্রে সেটা অমূলকও নয় নিশ্চয়। সেই জমির মালিকপক্ষের শরিক সেজে দখলমুক্ত করতে গেলে দলিলের সত্যতা নিয়ে যেমন বিশ্বাস-অবিশ্বাসের দোলাচালের সৃষ্টি হয়, তেমনই আইনগত সমাধানের বদলে পেশিশক্তি প্রয়োগকে আগ্রাসীদের উল্লাসই বলতে হয়। গঙ্গাদাসপুরে হচ্ছেও তাই। যেন অচেনা অন্য এক উপত্যকা।
অবশ্যই পক্ষপাত প্রভাবমুক্ত প্রশাসনিক হস্তাক্ষেপ কাম্য। ন্যায় প্রতিষ্ঠায় প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তা সমাজে বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি করে। বান ডাকে রক্তের। চুয়াডাঙ্গার জীবননগর উপজেলার গঙ্গাদাসপুর গ্রামের জমি নিয়ে বিরোধের আইনগত নিষ্পত্তি কাম্য। ভূমিহীনদের ওপর বর্বরোচিত হামলা চালিয়ে জোড়া খুনের দ্রুত দৃষ্টান্তমূলক বিচার দরকার। দরকার মদদদাতারও মুখোশ উন্মোচনের।