একাত্তরে যে বেয়নেটের আঘাতে মায়ের মৃত্যু হয়েছে, মায়ের গর্ভেই সেই বেয়নেটে আহত হওয়ার পরও বেঁচে যাওয়া যুদ্ধশিশু মনোয়ারা ক্লার্ক বাংলাদেশের নাগরিকত্ব চান। শনিবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির এক সংবাদ সম্মেলনে এই আগ্রহের কথা জানান বর্তমানে কানাডার নাগরিক মনোয়ারা।
একাত্তরে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য ক্ষতিপূরণেরও দাবি করেছেন তিনি।
যুদ্ধাপরাধের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি জানিয়ে মনোয়ারা ক্লার্ক বলেন, “আমি চাই- একাত্তরের ক্ষতিগ্রস্ত যারা এখানে আছে, যারা বিদেশে চলে গেছে, তাদেরকে যেন ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়। আমি এই দেশের নাগরিকত্ব চাই এবং এখানে ভোটের অধিকার চাই।”
গত বছরের ডিসেম্বরে জন্মসনদ নিতে বাংলাদেশে এসে আলোচনায় আসেন মনোয়ারা ক্লার্ক। শেষ পর্যন্ত ওই সনদ নিয়েই তিনি ফিরে যান।
১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধ চলার সময় পাকিস্তান সেনাবাহিনীর হাতে নির্যাতনে মৃত নারীর গর্ভ থেকে জন্ম মনোয়ারার। বেয়নেটের আঘাত নিয়েই পৃথিবীতে আসেন তিনি।
পাকিস্তানি সেনারা ধর্ষণের পর বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে হত্যা করে তার মাকে। মায়ের গর্ভের শিশুর দেহেও রয়েছে সেই খোঁচার ক্ষত। তার ঘাড়ে, পিঠে, বাহুতে বড় বড় ক্ষত এখনও রয়েছে।
জন্মের পর ওই শিশুর স্থান হয় পুরান ঢাকার মাদার তেরিজা হোমে। সেখান থেকে কানাডিয়ান এক দম্পতি ৬ মাস বয়সে তাকে দত্তক সন্তান হিসাবে নিয়ে যান। নাম হয় তার মনোয়ারা ক্লার্ক।
বিয়ের পর সন্তান অটিস্টিক হলে স্বামী এর জন্য তার জন্ম পরিচয়হীনতাকে দায়ী করেছিলেন বলে জানান মনোয়ারা। এরপর জন্ম সনদ নেওয়ার চিন্তা করেছিলেন তিনি।
এবার আবার বাংলাদেশে এসে শনিবার ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সংবাদ সম্মেলনে একাত্তরের ‘ভিকটিম’ হিসাবে বক্তব্য রাখেন এই যুদ্ধশিশু।