গমের বীজে বিষ : মারা গেছে কয়েক হাজার পাখ পাখালি

খাইরুজ্জামান সেতু/জহির রায়হান সোহাগ: চুয়াডাঙ্গা বিএডিসি খামার ও খামার এলাকায় কয়েক হাজার পাখি মারা গেছে। মরা পাখি খেয়ে মারা গেছে একটি কুকুরও। যেখানে সেখানে ঘুঘু, চড়ুই, কবুতর, শালিক মুরগি মরে পড়ে থাকতে দেখে স্থানীয়রা অনুসন্ধান চালিয়ে জেনেছে, খামারের জমিতে বপনকৃত গমের বীজে এতোটাই তীব্র বিষ মাখানো হয়েছে, যা মুখে নিতেই মরে যাচ্ছে পাখপাখালি। বলা হয়েছে, বহিরাগত কিছু ছেলে পাখি শিকার করার জন্য ওই ধরনের তীব্র বিষ ছিটিয়েছে বলেই হয়তো অতো পাখি মারা গেছে।
চুয়াডাঙ্গা রেলওয়ে স্টেশন আর বাস টার্মিনালের মাঝে বিশাল এলাকাজুড়ে রয়েছে বাংলাদেশ কৃষি করপোরেশনের খামার। অধিকাংশ জমিতেই প্রদর্শনী আবাদ করা হয়। খামারের মাঝে রাস্তাগুলোতে রয়েছে বহু নারকেল গাছ। শোভাবর্ধনে যেমন নারকেল গাছ, তেমনই আশপাশে রয়েছে বহু বৃক্ষ। অসংখ্য পাখপাখালির করলব তো লেগেই থাকে। খামারের পাশেই গড়ে ওঠা মহল্লাটারও নামকরণ হয়েছে খামারের ইংরেজি নাম ফার্ম-এর নামকরণে। ফার্মপাড়া। এই ফার্মপাড়া ও কলোনীর বহু পরিবারের অভিযোগ, গত পরশু রোববার অসংখ্য মুরগি মারা গেছে। মারা গেছে কয়েক হাজার কবুতর। আর বন্য পাখি? ওর তো হিসেবই নেই। খামার জুড়েই মরে পড়ে থাকা পাখপাখালির পঁচা দেহ গন্ধ ছড়াচ্ছে। ওই পাখি খেয়ে কুকুর শেয়ালও মারা যাচ্ছে। ফলে রোগ ছড়ানোর শঙ্কা স্থানীয় সচেতনদের মধ্যে।
স্থানীয় বেশ কয়েকজন বলেছেন, পরশু রোববার যখন যেখানে সেখানে পাখপাখালি মরে পড়ে থাকতে দেখা যায়, তখনই এর কারণ জানার চেষ্টা করা হয়। কারণ জানতে গিয়ে পাওয়া গেছে চমকে ওঠার মতো তথ্য। প্রতিবছরই খামারের জমিতে গমের আবাদ করা হয়। অন্যবারও পাখপাখালি মরতে দেখা যায়। তবে এবারের মতো অতোটা ভয়াবহভাবে মরে পড়ে থাকতে দেখা যায়নি। গমের বীজে ভয়ঙ্কর বিষ মাখিয়ে বপন করার কারণে পাখি মুখে নিতেই মারা গেছে। ওই বিষের তীব্রতা কতোটা ভয়ঙ্কর হলে মরা মুরগি খেয়ে কুকুর পর্যন্ত মারা গেলো? তদন্ত হওয়া দরকার। অবশ্যই তীব্র বিষ কীটনাশক প্রয়োগে অতো পাখপাখালি হত্যার সাথে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া দরকার। এ দাবিতে ফার্মপাড়ার সচেতন যুবসমাজও সোচ্চার হয়ে উঠেছে।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশনের সিনিয়র সহকারী পরিচালক (খামার) কৃষিবিদ আমিন উল্যা জানান, বিষয়টি আমাকে প্রতিষ্ঠানে কর্মরত শ্রমিকেরা জানিয়েছে। তবে আমরা ফসলের জমিতে যে কীটনাশক ব্যবহার করে থাকি তা মানুষ ও পশুপাখির জন্য নিরাপদ। বহিরাগত কিছু ছেলে ফার্মে বেড়াতে এসে পাখি ধরার জন্য বিষ ব্যবহার করছে। এ কারণেই পশুপাখি মারা গেছে। অসংখ্য পাখি ও পশুটির মৃত্যু অত্যন্ত দুঃখজনক ঘটনা। বিষয়টি খতিয়ে দেখে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
সিনিয়র সহকারী পরিচালকের এসব উক্তিকে নিজেদের দোষ ঢাকার অপচেষ্টা বলে মন্তব্য করেছেন স্থানীয়দের কয়েকজন। তাদের জোর দাবি, নিরপেক্ষ সুষ্ঠু তদন্ত দরকার। তদন্ত করলেই বোঝা যাবে ভয়ঙ্কর বিষ কোথা থেকে কীভাবে কিসের সাথে মাখিয়ে কোথায় তা বপন করা হয়েছে। যে জমিতে বপন করা গমের বীজ খেয়ে কয়েক হাজার পাখপাখালি মারা গেছে, সেই জমির গমের বীজ ওই কর্তার সামনে কোনো পাখিকে খাওয়ালেই হাতেনাতে প্রমাণ মিলবে বলেও দাবি নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বেশ কয়েকজন শ্রমিকের।

Leave a comment