সীমান্তবাসীর মাঝে সচেতনতার আলো ছড়াচ্ছে বিজিবি : ঘনঘন বসছে বৈঠকে

?

স্টাফ রিপোর্টার: শুধু মাদক নয়, সব ধরনের দ্রব্যসামগ্রী চোরাচালানই দেশের জন্য ক্ষতিকর। গরু? ওটা আনতে ভারত অভ্যন্তরে যাওয়ার দরকার নেই, ওদের তাগিদেই ওরা করিডোরে দিয়ে যাবে। এ জন্য ধরতে হবে ধৈর্য।
প্রতি শুক্রবার চুয়াডাঙ্গাস্থ ৬ বিজিবির আওতাভুক্ত সীমান্তবর্তী এলাকার মসজিদে খুতবার আগে এভাবেই সীমান্তবাসীকে সচেতন করা হয়। নিকটস্থ বিওপির সুবেদার মেজর বা দায়িত্বপ্রাপ্তরাই মসজিদে জুম্মার নামাজের এক পর্যায়ে বয়ান করেন। বলেন, ভারত অভ্যন্তরে গেলে গুলিতে মরতে হবে। নিজের যাবে জান, দেশের যাবে মান। ফলে সাবধান। আর মাদকদ্রব্য চোরাচালানী? যে মাদক পাচার করে এনে দেশের অভ্যন্তরে ছড়িয়ে দেয়া হয়, তা আমার আপনার সন্তানেরাই খেয়ে গোল্লায় যায়, তথা ধ্বংসের দিকে ধাবিত হয়। পেশাজীবী হারায় পেশা। নেশার কবলে পড়ে বহু প্রতিভা ধূলণ্ঠিত হচ্ছে। বিশেষ করে ভারত থেকে যেসব ড্রাগজাতীয় নেশাদ্রব্য পাচার হয়ে আসে তা সেবনে বা পানে অনিবার্য হয়ে ওঠে মৃত্যু। আর নারী শিশু পাচার? আপনি কোনো পাচারকারীকে সহযোগিতা করলে আপনার সন্তানকে যখন কোনো পাচারকারী পাচার করবে, তখন তাকে অন্য কেউ সহযোগিতা করবে। বেসামাল হয়ে পড়বে নারী ও শিশু পাচার। মনে রাখতে হবে, নারী ও শিশু পাচারে সীমান্তের কেউ সহযোগিতা না করলে কোনো পাচারকারীর পক্ষে পাচার করা সম্ভব নয়। একটু সজাগ দৃষ্টি রাখতে পারলেই দেশের কল্যাণ হয়।
এভাবেই মসজিদে মসজিদে মুসল্লিদের বোঝানো হয়, মাসে দুদিন জনসমাবেশ স্থলে। স্কুল প্রাঙ্গণে বা খেলার মাঠে বিশেষভাবে আয়োজন করে বোঝানো হয় চোরাচালানে কতোটা দেশের ক্ষতি। দেশপ্রেম বোধ জাগিয়ে তোলাও হয় এ কর্মসূচির মাধ্যমে। তিন মাস অন্তর ৬ বিজিবির পরিচালক লে. কর্নেল মনিরুজ্জামান নিজেই কর্মসূচিতে অংশ নেন। তিনিই গত বছরের অক্টোবর থেকে সীমান্তবর্তী এলাকায় এ কর্মসূচি চালু করেন। যা অনুকরণীয় হয়ে অন্য সীমান্তেও সচেতনতামূলক কর্মসূচি পালন যেন বাধ্যবধকতা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
শুধু সীমান্তবাসীর মাঝেই সচেনতার আলো ছড়ানো হয় না, সীমান্তে বিজিবি-বিএসএফ’র পতাকা বৈঠকও বাড়ানো হয়েছে। সীমান্তে চোরাচালান রোধসহ সীমান্তকে শান্ত রাখতেই ঘন ঘন পতাকা বৈঠকের আয়োজন। এ তথ্য জানিয়ে লে. কর্নেল মনিরুজ্জামান বললেন, সীমান্তবাসীকে সচেতন করার পাশাপাশি দু দেশের সীমান্ত রক্ষীদের যৌথ টহলসহ মাঝে মাঝেই বিওপি পর্যায়ে পতাকা বৈঠক আমাদের অনেক কল্যাণ বয়ে এনেছে।
গতকাল এক প্রেসবিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, দামুড়হুদার বাড়াদী সীমান্তে বিজিবি-বিএসফের মধ্যে পতাকা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। বিওপির দায়িত্বপূর্ণ এলাকার মেন পিলারের (৮২/১৪) নিকট শূন্যরেখা বরাবর বাড়াদী মাঠে বিওপি কমান্ডার পর্যায়ে এ পতাকা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বিজিবির পক্ষে নেতৃত্ব দেন বাড়াদী বিওপির কমান্ডার নায়েব সুবেদার মোসলেম উদ্দিন ও বিএসএফের পক্ষে নেতৃত্ব দেন ১১৩ ব্যাটালিয়নের গোবিন্দপুর ক্যাম্প কমান্ডার এসআই পিটি লিপসা। পতাকা বৈঠকে উভয় দেশের সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর মধ্যে সুসম্পর্ক বজায় থাকা, তারকাঁটার বেড়া না কাটা, ভারত হতে কোনো মাদকদ্রব্য বাংলাদেশের অভ্যন্তরে না আসা, নারী ও শিশু পাচার না হওয়া এবং অবৈধভাবে কোনো বাংলাদেশি/ভারতীয় নাগরিক সীমান্ত পারাপার না হয় সে ব্যাপারে আলোচনা হয়। পরিশেষে শান্তিপূর্ণভাবে পতাকা বৈঠক সম্পন্ন হয়।
পৃথক প্রেসবিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ৬ বর্ডার গার্ড ব্যাটালিয়নের অধীনস্থ সকল কোম্পানি/বিওপির আয়োজনে নারী ও শিশু পাচার, মাদকপাচার, চোরাচালান এবং অবৈধভাবে সীমান্ত পারাপার প্রতিরোধে স্থানীয় জনসাধারণকে প্রেষণা প্রদানের জন্য স্থানীয় জনসাধারণ ও গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের উপস্থিতিতে বিওপি সংলগ্ন মসজিদসমূহে জুমার নামাজের পূর্বে আলোচনাসভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। আলোচনাসভায় সকল কোম্পানি/বিওপি কমান্ডার প্রেষণামূলক বক্তব্য প্রদান করেন।