খাইরুজ্জামান সেতু: চুয়াডাঙ্গা পৌর নির্বাচনকে ঘিরে সাধারণ মানুষের মধ্যে আগ্রহের কমতি নেই। সম্ভাব্য কাউন্সিলর প্রার্থীদের কেউ কেউ ইতোমধ্যে পোস্টার ছাপিয়ে বিভিন্ন স্থানে সেঁটে দিয়েছেন। চেয়ে বেড়াচ্ছেন দোয়া। কেউ কেউ ডিজিটাল ফেস্টুন, ব্যানার টাঙিয়েছেন পৌর শহরের মোড়ে মোড়ে। অবশ্য দু দিনের মধ্যে এসব পোস্টার ফেস্টুন অপসারণের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। মেয়র পদে সম্ভাব্য প্রার্থীদের অধিকাংশই দলীয় প্রতীক পাওয়ার লক্ষ্য নিয়ে লবিঙে ব্যস্ত। কেউ কেউ অবশ্য মাঠ গোছাতে নেমেছেন অনেক আগেভাগেই। কৌশলে।
আগামী ৩০ ডিসেম্বর একই দিনে চুয়াডাঙ্গা, দর্শনা, আলমডাঙ্গা ও জীবননগরসহ দেশের ২৩৪ পৌরসভায় ভোটগ্রহণ। নির্বাচন কমিশন এ তফসিল ঘোষণার পূর্ব থেকেই চুয়াডাঙ্গা পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র পদে সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে যাদের নাম আলোচনায় তাদের দলীয় মনোনয়ন পাওয়া নিয়ে এবং প্রার্থিতা নিয়ে কী ভাবছেন? তা জানতেই গতকাল চুয়াডাঙ্গা আওয়ামী লীগ বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের বেশ কয়েকজনের সাথে কথা বলা হয়। অধিকাংশই বলেছেন, দলীয় মনোয়নয়ন তথা দলীয় প্রতীক নিয়ে লড়তে চাই। যদি দলীয় মনোনয়ন তথা প্রতীক না পান? কেউ কেউ দলীয় সিদ্ধান্তের ওপরই প্রার্থী হওয়া না হওয়ার কথা জানিয়েছেন, কয়েকজন কৌশলে বলেছেন, পৌরবাসীর ইচ্ছের ওপর নির্ভর করবে প্রার্থী হওয়া না হওয়া।
চুয়াডাঙ্গা পৌরসভার বর্তমান মেয়র রিয়াজুল ইসলাম জোয়ার্দ্দার টোটন সম্ভাব্য প্রার্থীদের তালিকার শীর্ষে। আসন্ন নির্বাচনে প্রার্থী হচ্ছেন? হাসতে হাসতে বললেন, যেহেতু এবার নির্বাচন হচ্ছে দলীয় মনোনয়ন নিয়ে, দলীয় প্রতীকে। সেহেতু বিষয়টি আমার দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ওপরই নির্ভর করছে। দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে আমি নই। তিনি বলেন, দল যে সিদ্ধান্ত নেবে তাই মাথা পেতে নেবো। দল আমাকে যোগ্য মনে করলে আমি প্রার্থী হবো। জেলা যুবলীগের সদ্য বিলুপ্ত কমিটির আহ্বায়ক ওবাইদুর রহমান চৌধুরী জিপুও সম্ভাব্য প্রার্থীদের একজন। তিনি বলেছেন, দল করি যেহেতু, সেহেতু দলীয়ভাবে মনোয়ন প্রত্যাশী। কেন্দ্রীয়ভাবে মনোনয়ন দিলে আমিই মনোনীত হবো বলে আশা করি। তবে স্থানীয়ভাবে সব সিদ্ধান্ত যদি পারিবারিকীকরণ হয় তাহলে তার বিরুদ্ধে চুয়াডাঙ্গার যে আওয়ামী লীগ সেই আওয়ামী লীগের সমর্থন নিয়েই প্রাথী হবো বলে আশা করছি। ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলনের প্রার্থী হচ্ছেন মুহাম্মদ তুষার ইমরান সরকার। তিনি ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলনের সাংগঠনিক সম্পাদক। বিকল্প ধারা প্রতিটি পৌরসভায় প্রার্থী দেবে বলে ঘোষণা দিলেও চুয়াডাঙ্গা পৌরসভায় তেমন কারো নাম পাওয়া যায়নি। চুয়াডাঙ্গা জেলা বিএনপির দুই যুগ্মআহ্বায়ক খন্দকার আবদুল জব্বার সোনা ও মজিবুল হক মালিক মজু দুজনই সম্ভাব্য প্রার্থী। স্থানীয়দের অনেকেই এ মন্তব্য করে বলেছেন, দুজনই দলীয় মনোনয়ন নিয়ে দলীয় প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে নামার কথা ভাবছেন। তবে খন্দকার আব্দুল জব্বার সোনা ও মজিবুল হক মালিক মজু দুজনই দলীয় সিদ্ধান্তের ওপরই নিজেদের প্রার্থী হওয়া না হওয়ার বিষয়টি অনেকটাই ছেড়ে দিয়েছেন। এছাড়া কোর্টমোড়ের হার্ডওয়ার ব্যবসায়ী রবিউল ইসলাম প্রার্থী হবেন বলে জোর প্রচারণা শুরু করলেও তিনি অবশ্য গতকাল বলেছেন, এবার বোধ হয় প্রার্থী হওয়া হবে না। আর একটু গুছিয়ে নিয়ে পরের বার যদি বেঁচে থাকি প্রার্থী হবো। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল চুয়াডাঙ্গা জেলা শাখার যুগ্মআহ্বায়ক মাহমুদুল হাসান খান বাবু জানান, হাইকমান্ডের নির্দেশনা মোতাবেক সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। কে প্রার্থী হবেন তা দলীয় নেতাকর্মীদের মতামতের ভিত্তিতেই করা হবে বলে বিশ্বাস করি। এদিকে প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টি চুয়াডাঙ্গা জেলা শাখার সম্ভাব্য মেয়র প্রার্থী হিসেবে বেশ কয়েক বছর ধরেই প্রচারণা চালিয়ে আসছিলেন জেলা জাতীয় পার্টির সংগঠনিক সম্পাদক দেলোয়ার উদ্দিন দুলু। চুয়াডাঙ্গায় পৌর নির্বাচনের হাওয়া উঠলেও তিনি এখন নিশ্চুপ রয়েছেন। জেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি অ্যাডভোকেট সোহরাব হোসেন জানান, দুলু এবার পৌর নির্বাচনে অংশ নেবেন না। তবে জেলা জাতীয় যুব সংহতির সাধারণ সম্পাদক ও কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সরকার হাসিবুল ইসলাম মাসুদ পৌর নির্বাচনে মেয়র প্রার্থী হবেন। সরকার হাসিবুল ইসলাম মাসুদও এর সত্যতা স্বীকার করে বলেছেন, দলীয় মনোনয়ন পেলে অবশ্যই প্রার্থী হবো। বিগত নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে চুয়াডাঙ্গা পৌর নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলেন ফারুক উদ্দিন আহমেদ। এবারও তিনি প্রার্থী হতে পারেন বলে বিভিন্ন মহল থেকে শোনা যাচ্ছে। কিন্তু, জামায়াতে ইসলামীর কোনো প্রার্থীর নামধাম গতকাল পর্যন্ত তেমন কেউ বলেননি। চুয়াডাঙ্গায় তারা নির্বাচন নিয়ে আপাতত ভাবছেন না বলে মনে করছেন দলের নেতাকর্মীরা। এছাড়াও বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির প্রার্থিতার বিষয়টি এখনও সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে তাদের প্রার্থী দেয়ার ইচ্ছা আছে বলে জানালেন দলেন সভাপতি অ্যাড. শহিদুল ইসলাম। জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জাসদ (ইনু) চুয়াডাঙ্গা জেলা শাখার ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি অ্যাড.আকসিজুল ইসলাম রতন জানান, আমরা সিদ্ধান্ত নিইনি। সাইফুল ইসলাম পিনু বেঁচে থাকলে তিনি প্রার্থী হতেন। তিনি মারা গেছেন। আমরা ভাবছি কাকে চুয়াডাঙ্গা পৌর নির্বাচনে প্রার্থী করা যায়। ডিসেম্বরের প্রথম দিকে সিদ্ধান্ত নেবো আমরা। অভিন্ন কথা জানালেন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (রব) চুয়াডাঙ্গা জেলা শাখার সভাপতি অ্যাড. সেলিম উদ্দিন খান। তিনি বলেছেন, দলীয় প্রার্থী দেয়ার বিষয়টি অবশ্যই দলীয়ভাবে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। সবে তফসিল ঘোষণা হলো। আমরা বৈঠক করে দেখি কী করা যায়।