তার পরও আইন নিজের হাতে তুলে নেয়ার সুযোগ নেই। উচিতও নয়। কেউ প্রলোভনে ফেলে অর্থলগ্নি করিয়ে অর্থ হাতিয়ে নিলে বা, প্রতারণা করলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে হবে। পুলিশ বা আইন প্রয়োগে সংশ্লিষ্ট অন্য কোনো সংস্থার ওপর আস্থা নেই বলে অভিযুক্তকে নিজের বাড়ি বন্দি করে অর্থ আদায়ের সুযোগ দেশের প্রচলিত আইনে রাখাই হয়নি, ওটাও আইনের দৃষ্টিতে অপরাধ।
বহুমুখি সম বাণিজ্যের নামে এক ধরনের অঙ্কের ধন্ধে ফেলে সরল সোজা মানুষ ঠকানোর ফাঁদ পাতা হয়। এটা নতুন নয়। সেই হায় হায় কোম্পানি থেকে শুরু করে ডেসটিনি, হাইওয়ে বা ইউনিপে টু’র মুখোশ উন্মোচনের পরও কেন মানুষ ওই ধরনের প্রতারণার ফাঁদে অর্থলগ্নি করে? যেহেতু প্রতারক চক্রের মূল অস্ত্র লোভের টোপ, সেহেতু সরল সোজা মানুষগুলো নিজেদের সামলাতে না পেরে চকচকে উচ্চমানের পোশাকে কাবু হয়ে পড়ে। অর্থলগ্নি করে হায় হায় করে। যখন বোঝে প্রতারিত হয়েছি, লগ্নিকরা অর্থ হাতছাড়া, তখন অনেকেই আছেন যারা হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে হাতের কাছে পাওয়া ওই অর্থগ্রহণকারীদের কাউকে পেলে আটকে রেখে অর্থ আদায়ের চেষ্টা করেন।
চুয়াডাঙ্গা আলমডাঙ্গার মুন্সিগঞ্জে পেতে বসা ওই ধরনের প্রতিষ্ঠান থেকে দুজনকে ধরে পার্শ্ববর্তী গ্রামের বাড়িতে আটকে রাখা হয়। এটা অন্যায়। আইনের পথে না হেঁটে পেশিশক্তি প্রয়োগ অবশ্যই দণ্ডনীয় অপরাধ। সঙ্গত কারণেই প্রশ্ন- এক বা একাধিক ব্যক্তি কেন এই অন্যায় করলেন? তবে কি পুলিশের ওপর বা আইন প্রয়োগকারী অন্য কোনো সংস্থার ওপর আস্থাহীনতা? সমাজের বাস্তবতা বিশ্লেষণ করতে বসলে বোদ্ধাদেরও বোধ হয়- জড়াতে হবে বির্তকে। কেননা, আস্থাহীনতা সর্বক্ষেত্রে নয়, পেশিশক্তি প্রয়োগে বাড়তি সুবিধা আদায় বা চরম সত্যকে মিথ্যার আবরণে আড়াল করাতে বাধ্য করার প্রবণতাও গ্রাস করছে সমাজকে। সর্বক্ষেত্রে কি অস্বীকার করা যায়?
‘সত্য প্রকাশে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ’ স্লোগান? পেশিশক্তির কাছে অসহায় আত্মসমর্পণ অনিবার্য হয়ে ওঠে মাঝে মাঝে। তারপরও দীর্ঘশ্বাসে হাল ছাড়া মানে প্রজন্মের কাছে বা ভবিষ্যতের কাঠগড়ায় কাপুরুষত্ব চেহারায় নিজেকে দাঁড় করানো। এদিকে তাকিয়ে হলেও বর্তমানকে যথাযথ মূল্যায়নই শ্রেয়। সে কারণেই অর্থ লগ্নিকারীর বিরুদ্ধে অর্থগ্রহণকারীকে আটকে রাখার অভিযোগ এবং অর্থলগ্নিকারীদের প্রতারিত হওয়ার নালিশ কোনোটাই অবজ্ঞার দৃষ্টিতে দেখা উচিৎ নয়। দরকার সুষ্ঠু নিরপেক্ষ তদন্ত। তদন্তকারীর অদক্ষতাই হোক আর বিশেষ সুবিধা নিয়ে পক্ষপাতিত্বই হোক, ন্যায় যদি অন্যায়ের কাছে পরাজিত হতে থাকে বার বার, তবে আস্থাহীনতায় সৃষ্ট অসহায়ত্বও এক সময় ভয়ঙ্কররূপে প্রতিঘাত হতে পারে।
প্রতারণা রুখতে? বেকারত্ব ঘোচানোর মতো বাস্তবমুখি পদক্ষেপ যেমন দরকার, তেমনই দরকার লোভ সংবরণের মতো মানসিকতা গড়ে তুলতে সচেতনতামূলক রকমারি আয়োজন। সচেনতনতার আলোয়-ই পারে সব ধরনের অন্ধকার তাড়িয়ে কাঙ্খিত স্বপ্নের সমাজ আনতে। যে সমাজে থাকবে না প্রতারণা, পেশীশক্তির রমরমা। আস্থার আকাশে বাতাসে ঘুরবে বিশ্বাসের ভালোবাসা।