স্টাফ রিপোর্টার: গত মরসুমে বোরো চাল উৎপাদনে রেকর্ড সৃষ্টি করেছেন দেশের কৃষক। কয়েক বছর চালের উৎপাদন ১ কোটি ৮৬ থেকে ১ কোটি ৯০ লাখ টনে ওঠানামা করলেও এবার তা ১ কোটি ৯২ লাখ টন ছাড়িয়েছে, যা এ-যাবতকালের সর্বোচ্চ। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর সর্বশেষ হিসাবে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
সূত্র জানায়, ২০১১-১২ অর্থবছরে বোরো চালের উৎপাদন ছিলো ১ কোটি ৮৭ লাখ ১০ হাজার টন। ২০১২-১৩ অর্থবছরে তা বেড়ে দাঁড়ায় ১ কোটি ৮৭ লাখ ৮০ হাজার টন এবং ২০১৩-১৪ অর্থবছরে তা আরো বেড়ে হয় ১ কোটি ৯০ লাখ টন। এর আগে বর্তমান সরকারের আগের মেয়াদের প্রথম অর্থবছরে (২০০৯-১০) চালের উৎপাদন ছিলো ১ কোটি ৮০ লাখ ৬০ হাজার টন, যা পরের অর্থবছরে বেড়ে দাঁড়ায় ১ কোটি ৮৬ লাখ ১০ হাজার টনে। ওই অর্থবছরে ছয় লাখ টন চালের উৎপাদন বাড়লেও পরের অর্থবছরগুলোয় বৃদ্ধির হার ছিলো কিছুটা ধীরগতি। তবে সদ্যসমাপ্ত অর্থবছরে প্রায় দুই লাখ টন বেশি চাল উৎপাদন হয়েছে, যা ল্যমাত্রার চেয়ে বেশি।
এ বিষয়ে কৃষি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব আনোয়ার ফারুক বলেন, এবারের বোরো মরসুমে রাজনৈতিক অস্থিরতা ছাড়াও প্রাকৃতিক নানা প্রতিকূলতা ছিলো। তবে সেসব প্রতিকূলতাকে হার মানাতে কৃষকের পাশে সবসময়ই সম্প্রসারণকর্মীদের পাশে থাকার নির্দেশ দেয়া হয়। তেমনি তদারকও করা হয়। এছাড়া সম্ভাব্য তি কাটিয়ে ওঠার জন্য কৃষককে বিভিন্ন সময়ে প্রণোদনা দেয়া হয়। সব মিলিয়ে কৃষকের একান্ত প্রচেষ্টা ও সরকারের দায়িত্ব এবং সহযোগিতার কারণেই বোরো উৎপাদনে এ অর্জন সম্ভব হয়েছে। সামনের বছরে উৎপাদন আরো বাড়ানোর পরিকল্পনা রয়েছে বলেও জানান তিনি।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের (ডিএই) তথ্যমতে, চলতি বোরো মরসুমে ৪৭ লাখ ৮০ হাজার হেক্টর জমিতে চাল উৎপাদন ল্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ১ কোটি ৮৯ লাখ টন। চলতি মরসুমে প্রতি কেজি বোরো ধান উৎপাদনে ব্যয় হয়েছে ২০ টাকা, আর প্রতি কেজি চাল উৎপাদনে খরচ ২৭ টাকা। তবে উৎপাদন খরচ বাড়লেও সরকারের সংগ্রহ অভিযানে কৃষকের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে সংগ্রহ অভিযানের গুরুত্ব আরো বাড়ানোর সুপারিশ করেছেন সংশ্লিষ্টরা। এখনো উৎপাদনের তুলনায় অনেক কম পরিমাণে চাল সংগ্রহ করা হয়। কৃষকের কাছ থেকে সরাসরি ধান কিনতে পারলে তাদের ন্যায্যমূল্য প্রাপ্তি নিশ্চিত করা সম্ভব হতো বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা, যদিও এবার বোরো চাল উৎপাদনের পাশাপাশি সরকারের সংগ্রহ ভালো অবস্থায় রয়েছে। চলতি মরসুমে ১০ লাখ টন চাল সংগ্রহের বিপরীতে গত বৃহস্পতিবার শেষ দিন পর্যন্ত প্রায় ১০ লাখ ৫০ হাজার টন চাল সংগ্রহ করেছে খাদ্য অধিদফতর। কৃষকের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে ভবিষ্যতে তা আরো বাড়ানো হবে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।
এ বিষয়ে খাদ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক মো. বদরুল হাসান বলেন, প্রতিকূল পরিস্থিতির কারণে ধান-চাল সংগ্রহের ল্য অর্জনে দেশের সব জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে কর্মকর্তাদের নির্দেশনা ও তদারকির দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। বাজার পরিস্থিতি ভালো থাকার কারণে এক মাস সময় বাড়ানো হয়। বর্ধিত সময়ের মধ্যে মাঠ পর্যায়ের কর্মীদের নিরলস প্রচেষ্টার কারণে ল্যমাত্রার চেয়ে বেশি সংগ্রহ করা সম্ভব হয়েছে।
জানা গেছে, ১ মে শুরু হয় চলতি রবি মরসুমে সরকারের ধান, চাল ও গম সংগ্রহ অভিযান। এবার ৩২ টাকা দরে ১০ লাখ টন চাল, ২২ টাকা দরে ১ লাখ টন ধান এবং ২৮ টাকা দরে ১ লাখ টন গম সংগ্রহের ল্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। ৩১ আগস্ট পর্যন্ত ধান-চাল এবং ৩০ জুন পর্যন্ত গম সংগ্রহের সময় বেঁধে দেয়া হয়। কৃষককে ভালো দাম দিতে এবার সংগ্রহ মরসুমে ক্রয়মূল্যও বাড়ানো হয়। গত মরসুমে প্রতি কেজি চাল ৩১ টাকা, ধান ২০ এবং গম ২৭ টাকা দরে কেনার ল্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিলো। সে হিসাবে এবারের মরসুমে চাল ও গমের দাম প্রতি কেজিতে ১ টাকা এবং ধানের দাম কেজিতে ২ টাকা বাড়ানো হয়েছে।