নতুন করে পরীক্ষা নেয়ার দাবিতে বিক্ষোভ ও আইনজীবীর রিটের মধ্যেই ফল প্রকাশ
আব্দুস সালাম: মেডিকেল কলেজে ভর্তি পরীক্ষা বাতিল করে নতুন করে পরীক্ষা নেয়ার দাবি ও আদালতে রিটের মধ্যেই প্রকাশ করা হয়েছে ফলাফল। এতে সর্বশেষ প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী চুয়াডাঙ্গা জেলার ১৩ জন কৃর্তীশিক্ষার্থী সরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তি হওয়ার যোগ্যতা অর্জন করেছে। এর মধ্যে ১ জন ডেন্টাল ইউনিটে বাকি ১২ জন দেশের বিভিন্ন সরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তি হতে পারবে।
এবারের মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় সারাদেশের মধ্যে নবম স্থান অধিকার করে চমকে দিয়েছে চুয়াডাঙ্গা কোর্টপাড়ার আব্দুল হান্নান ও লতিফা পারভিনের ছেলে নাবিদ শাহরিয়ার। তার রোল নং ছিলো ২১২৬২৭। স্কোর হয়েছে ১৯১ দশমিক ৫ শূন্য। সে ভিজে সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি ও চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় গোল্ডেন এ প্লাস পেয়ে কৃতিত্বের স্বাক্ষর রাখে। নাবিদ শাহরিয়ার মেডিকেল কলেজে ভর্তি পরীক্ষায় ৯ম স্থান অধিকার করে অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। এবার ২শ মার্কের পরীক্ষায় সর্বোচ্চ নম্বর পেয়েছে ১শ ৯৮ দশমিক ৫ ও সর্বনিন্ম স্কোর রয়েছে ১শ ৭৫। এরাই সরকারি মেডিকেলে ভর্তির সুযোগ পেয়েছে।
দেশে সরকারি মেডিকেল কলেজ ৩০টি ও ৯টি ডেন্টাল কলেজে মোট আসন সংখ্যা ৩ হাজার ৭শ ৪৪টি। এর বিপরীতে এবার ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেয় ৮৭ হাজার ৭শ ৮৪ জন। বাংলাদেশের মেডিকেল ও ডেন্টাল কলেজগুলোর সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হয়েছে, যাতে ভর্তির যোগ্য শিক্ষার্থী পাওয়া গেছে ৪৮ হাজার ৪৪৮ জন। পাশ নম্বর পেয়ে যোগ্য শিক্ষার্থীর এ সংখ্যা পরীক্ষার্থীদের মোট সংখ্যার ৫৮ দশমিক ৪ শতাংশ। আসন সংখ্যার হিসেবে শেষ পর্যন্ত তাদের মধ্যে সরকারি ও বেসরকারি মেডিকেল কলেজগুলোতে চিকিৎসাশাস্ত্রে লেখাপড়ার সুযোগ পাবে মোট ১১ হাজার ৪৯ জন।
চুয়াডাঙ্গা জেলায় লেখাপড়া করে ৯ম স্থান অধিকার করে নাবিদ শাহরিয়ার ঢাকা মেডিকেল কলেজে ভর্তির যোগ্যতা অর্জন করেছে। এছাড়া শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজে ভর্তির যোগ্যতা অর্জন করেছে দুজন। এরা হলো- দৌলাতদিয়াড় স্কুলপাড়ার আব্দুর রশিদ ও রেহানা পারভিনের মেয়ে জাফরিন পারভিন রিয়া ও চুয়াডাঙ্গা এতিমখানাপাড়ার এমএ মান্নান ও শাহানারা খাতুনের মেয়ে মমতাজ পারভীন সাথী। রিয়া চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজ ও সাথী জয়পুরহাট গালর্স ক্যাডেট কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে ভর্তির যোগ্যতা অর্জন করেছে চুয়াডাঙ্গা ঈদগা পাড়ার সালাউদ্দীন ও নাজমা খাতুনের মেয়ে উম্মে সালমা। বরিশাল শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজে ভর্তির যোগ্যতা অর্জন করেছে চুয়াডাঙ্গা ঈদগাপাড়ার মনোয়ার কবীর ও সেলিনা জোয়ার্দ্দারের ছেলে সামিউল সাদিক মুয়িদ। খুলনা মেডিকেল কলেজে ভর্তির যোগ্যতা অর্জন করেছে চুয়াডাঙ্গা মোমিনপুরের শহিদুল ইসলাম ও রওশন আরার ছেলে ইব্রাহিম খলিল সাগর। সালমা, মুয়িদ ও সাগর চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেছে। ফরিদপুর মেডিকেল কলেজে ভর্তির যোগ্যতা অর্জন করেছে জীবননগর পৌরসভা সংলগ্ন কোর্টপাড়ার রমেন বিশ্বাসের মেয়ে মিতালী বিশ্বাস। এছাড়াও জীবননগর শ্যামকুড়ের মেয়ে জীবননগর ডিগ্রি কলেজের শিক্ষার্থী শারমীন আক্তার রিমা মেডিকেল কলেজে ভর্তি হওয়ার যোগ্যতা অর্জন করেছে। তবে সে কোন মেডিকেল কলেজে ভর্তি হতে পারবে তা গতকাল পর্যন্ত নিশ্চিত করে তথ্য পাওয়া যায়নি। পাবনা মেডিকেল কলেজে ভর্তির যোগ্যতা অর্জন করেছে চুয়াডাঙ্গা জেলা সদরের মোমিনপুর ইউনিয়নের আমিরপুর গ্রামের আশাবুল হক মিণ্টু ও শামীমা ইয়াসমিন শিল্পীর ছেলে গোলাম মোর্শেদ শিশির। সে ঢাকা আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেছে। কক্সবাজার মেডিকেল কলেজে ভর্তির যোগ্যতা অর্জন করেছে চুয়াডাঙ্গা শেখপাড়ার আব্দুস শুকুর ও সুফিয়া খাতুনের মেয়ে তাহরিমা নাজনীন মিতু। সে চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করে। গোপালগঞ্জ মেডিকেল কলেজে ভর্তির যোগ্যতা অর্জন করেছে দামুড়হুদা দর্শনার বড় দুধপাতিলার আবু বক্কর সিদ্দিক ও হাসেন আরা খাতুনের ছেলে হাসিবুর রহমান। সে যশোর ক্যান্টনমেন্ট কলেজের শিক্ষার্থী ছিলো। পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজে ভর্তির যোগ্যতা অর্জন করেছে দর্শনা আজিমপুরের শহিদুল আলম শিশির ও সকিনা খাতুনের ছেলে সাইফুল আলম সেতু। সে দর্শনা সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী। বরিশাল শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজের ডেন্টাল ইউনিটে ভর্তির যোগ্যতা অর্জন করেছে দামুড়হুদার পীরপুরকুল্লার ঠাকুরপুরের আব্দুর রহমান ও রাফিজা খাতুনের ছেলে রফিকুল ইসলাম। সে চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেছে। রিয়া, সালমা, শিশির ও রফিকুল এবার দ্বিতীয় বারের মতো মেডিকেল কলেজে ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেয়। বাকিরা প্রথমবার অংশ নিয়েই ভর্তির যোগ্যতা অর্জন করেছে।
এদিকে মেডিকেলে ভর্তি পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁস হওয়ার অভিযোগ তুলে তা বাতিল করে নতুন পরীক্ষা নেয়ার দাবিতে দেশজুড়ে চলছে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের আন্দোলন ও প্রতিবাদ কর্মসূচি। সিলেটে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা গতকাল রোববার দুপুরে ২০১৪-১৫ বর্ষের মেডিকেল পরীক্ষার্থী’র ব্যানারে নগরীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে। এ সময় তারা অভিযোগ করে, প্রশ্নপত্র ফাঁসের ফলে দেশের হাজার হাজার মেধাবী শিক্ষার্থী তাদের প্রাপ্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হবে। টাকা দিয়ে প্রশ্নপত্র কিনে মেধাহীন শিক্ষার্থীরা সহজেই ডাক্তারি পড়ার সুযোগ পেয়ে যাবে। এর ফলে মেধাহীন ডাক্তার তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা রয়ে যাবে। তাই প্রশ্নপত্র ফাঁসের সাথে জড়িতদের দ্রুত গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানায় আন্দোলনকারীরা।
মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষা বাতিল করে আবার পরীক্ষা নেয়ার দাবিতে বরিশালেও মানববন্ধন করেছে মেডিকেল ভর্তিচ্ছু পরীক্ষার্থীরা। রোববার বেলা ১১টায় বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সড়কে মানববন্ধন শেষে তারা বিক্ষোভ মিছিল করে। চট্টগ্রামেও একই দাবিতে সমাবেশ ও বিক্ষোভ করেছে শিক্ষার্থী এবং অভিভাবক। চট্টগ্রাম প্রেসক্লাব চত্বরে দফায় দফায় তারা বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ সমাবেশ করে। এতে তারা অবিলম্বে পরীক্ষা বাতিল করে পুনরায় পরীক্ষা নেয়ার দাবি জানা। মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার ফলাফল বাতিল করে আবার পরীক্ষা গ্রহণ এবং স্থায়ীভাবে পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস বন্ধের দাবিতে রংপুরেও বিক্ষোভ মিছিল, মানববন্ধন সমাবেশ ও সংবাদ সম্মেলন করেছে শিক্ষার্থী-অভিভাবকরা। প্রেসক্লাব চত্বরে ঘণ্টাব্যাপি মানববন্ধনের পর সমাবেশে শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করে, প্রশ্ন ফাঁসের কারণে দেশে মেধাবী-যোগ্য শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন হচ্ছে না। তাদের দাবি, একটি কুচক্রী মহল পরীক্ষার আগের রাতে সারাদেশে মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র বিক্রি করে সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করেছে। অবিলম্বে ফলাফল বাতিল করে নতুনভাবে ভর্তি পরীক্ষা না নেয়া হলে রংপুর থেকে বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তোলার হুমকিও দেয় শিক্ষার্থীরা। পরে প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে বিক্ষোভ মিছিল করে শিক্ষার্থী-অভিভাবকরা।
এদিকে ফাঁস হওয়া প্রশ্নপত্রে মেডিকেল ও ডেন্টাল কলেজের ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে বলে অভিযোগ এনে এ পরীক্ষা বাতিল চেয়ে হাইকোর্টে রিট করেছেন সুপ্রীম কোর্টের এক আইনজীবী। হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় গতকাল রোববার সকালে রিট আবেদনটি করেন অ্যাডভোকেট ইউনুছ আলী আকন্দ। এর আগে গত শনিবার দুপুরে কুরিয়ার সার্ভিসে মন্ত্রিপরিষদ সচিব, আইন সচিব ও স্বাস্থ্য সচিব বরাবরে ওই নোটিস পাঠান বলে জানান আইনজীবী ইউনুছ আলী আকন্দ। তিনি দাবি করেন, যে প্রশ্নে মেডিকেল ও ডেন্টাল কলেজের ভর্তি পরীক্ষা হয়েছে, তার সাথে ফাঁস হওয়া প্রশ্নের মিল পাওয়া গেছে। গত ১৮ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত ওই পরীক্ষা ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বাতিলের জন্য লিগ্যাল নোটিস পাঠানো হয়েছে। আইনি নোটিসে প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগ তদন্তে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়ে পরবর্তীতে নতুন করে ভর্তি পরীক্ষা নিতে বলা হয়েছে। নোটিস অনুযায়ী ব্যবস্থা না নিলে হাইকোর্টে রিট আবেদন করা হবে বলে ওই দিনই জানান এ আইনজীবী।