স্টাফ রিপোর্টার: বাংলাদেশ বার কাউন্সিল নির্বাচনের ফল সরকারিভাবে ঘোষণা শুরু হয়েছে। এর আগে গতকাল বুধবার দুপুরে বার কাউন্সিলের চেয়ারম্যান অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম রোববার এ নির্বাচনের ভোট গণনার জন্য পরবর্তী তারিখ নির্ধারণ করেন। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন সরকার সমর্থক আইনজীবীরা। তারা বুধবারই ফল ঘোষণার দাবিতে অ্যাটর্নি জেনারেলকে অবরুদ্ধ করে রাখেন। একপর্যায়ে অ্যাটর্নি জেনারেল বৃহস্পতিবার ফল ঘোষণার কথা বলেন। তারপরও অনেক আইনজীবী অ্যাটর্নি জেনারেলের পদত্যাগ দাবিতে স্লোগান দিতে থাকেন। দীর্ঘ দু থেকে আড়াই ঘণ্টা অবরুদ্ধ থাকার পর বাধ্য হয়েই বুধবার সন্ধ্যা ৬টায় ভোট গণনার ঘোষণা দেন তিনি।
অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, এবার আপিল বিভাগের নির্দেশনায় ভোটার তালিকা সংশোধন করা হয়েছে। এবারের ভোট সুষ্ঠু হয়েছে। কোনো জায়গা থেকে অভিযোগ আসেনি। তিনি বলেন, আজকে এ ভোটের ফল ঘোষণার তারিখ ছিল। এটা সঠিক যে, আজ পর্যন্ত বার কাউন্সিলের কোনো চেয়ারম্যান পুনরায় ভোট গণনা করেননি। কিন্তু আমাকে যেটা দেখতে হচ্ছে বার কাউন্সিল রুলসের ১৫ ধারায় বলা রয়েছে, বিভিন্ন স্টেশন থেকে ফল গ্রহণ করার পর চেয়ারম্যানকে ব্যালট পেপার কাউন্ট করতে হবে। এটা আইনের বিধান। কাজেই আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি, আইনের বিধান প্রতিপালন করব। আজকেই ভোট গণনা শুরু করতাম, কিন্তু একনাগাড়ে গণনা করার জন্য বৃহস্পতিবার থেকে গণনা শুরু করব। কিন্তু নির্বাচনে সরকার সমর্থক প্রার্থী ব্যারিস্টার এম আমীর-উল ইসলাম, অ্যাডভোকেট আবদুল মতিন খসরু ও অ্যাডভোকেট আবদুল বাসেত মজুমদার, ব্যারিস্টার তানিয়া আমীর, অ্যাডভোকেট মমতাজ উদ্দিন আহমেদ মেহেদী ও সৈয়দ মামুন মাহবুবসহ বেশ কিছু আইনজীবী বুধবারই ফল ঘোষণার দাবিতে অনড় থাকেন। তাদের বক্তব্যের পর সরকার সমর্থক আইনজীবীরা বুধবারই ফল ঘোষণার দাবিতে বিক্ষোভ করতে থাকেন। পরে বাধ্য হয়েই সন্ধ্যা ৬টা থেকে ভোট গণনার ঘোষণা দেন অ্যাটর্নি জেনারেল।
কিন্তু সরকার সমর্থক আইনজীবীরা ভোট গণনার বিপক্ষে অবস্থান নেন। তারা বলেন, নতুন করে ভোট গণনা নয়, টেব্যুলেশন শিটে প্রিসাইডিং অফিসারের পাঠানো ফল দেখে তা ঘোষণা করতে হবে। একপর্যায়ে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম সন্ধ্যা ৬টা ৫০ মিনিটের দিকে প্রতিটি কেন্দ্র থেকে পাঠানো টেব্যুলেশন শিটের ফল দেখে বার কাউন্সিল নির্বাচনের ফল ঘোষণা শুরু করেন। ২৬ আগস্ট বার কাউন্সিলের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এ নির্বাচনের বেসরকারিভাবে প্রাপ্ত ফল অনুযায়ী বার কাউন্সিলের ১৪টি পদের মধ্যে ১০টিতে বিজয়ী হয়েছেন সরকার সমর্থকরা। এর মধ্যে সাধারণ আসনে ৭টির মধ্যে অ্যাডভোকেট আবদুল বাসেত মজুমদার, ব্যারিস্টার এম আমীর-উল ইসলাম, অ্যাডভোকেট আবদুল মতিন খসরু ও জেডআই খান পান্না বেশি ভোট পেয়ে এগিয়ে রয়েছেন।
আর বাকি তিনটিতে বিএনপি সমর্থক প্রার্থী অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসন, এজে মোহাম্মদ আলী ও ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন বেশি ভোট পেয়ে এগিয়ে রয়েছেন। এছাড়া গ্রুপ আসনে ৭টি পদের মধ্যে বিএনপি সমর্থক প্রার্থী কুমিল্লার কাইমুল হক রিংকু ছাড়া বাকি ৬টিতে এগিয়ে রয়েছেন সরকার সমর্থকরা। বার কাউন্সিলের চেয়ারম্যান অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম এ নির্বাচনের আনুষ্ঠানিক ফল ঘোষণা করবেন। সে অনুযায়ী বুধবার দুপুর ২টায় বার কাউন্সিল অডিটোরিয়ামে এ নির্বাচনের ফল ঘোষণার তারিখ নির্ধারিত ছিলো। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে বার কাউন্সিল নির্বাচনের ফল বিভিন্ন কেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসারের পাঠানো টেব্যুলেশন শিটের ফল দেখে অ্যাটর্নি জেনারেল ঘোষণা করে থাকেন। কিন্তু এবার বেঁকে বসেন বিএনপি সমর্থক প্রার্থীরা। গতকাল দুপুর ২টায় ফল ঘোষণার পূর্বে বার কাউন্সিল আইনের বিধান তুলে ধরে ভোট গণনার জন্য বার কাউন্সিলের চেয়ারম্যানের প্রতি আহ্বান জানান বিএনপি সমর্থক প্রার্থী ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকনসহ অন্যরা। আইনে বার কাউন্সিল চেয়ারম্যানকে এ ভোট গণনার কথা বলা হয়েছে। আইনের ১৫(২) ধারায় বলা আছে বার কাউন্সিলের চেয়ারম্যান এ ভোট গণনা করবেন। কিন্তু সরকার সমর্থক আইনজীবীরা বলতে থাকেন, আইন নয়, যে ট্র্যাডিশন (প্রচলিত রীতি) আছে, সে অনুযায়ী প্রিসাইডিং অফিসারের পাঠানো ফল দেখে অ্যাটর্নি জেনারেল এ নির্বাচনের ফল ঘোষণা করবেন। পরে চাপের মুখে অ্যাটর্নি জেনারেল বুধবার সন্ধ্যায় ফল ঘোষণা দেন।