ভারতের মুসলিম সমাজের শীর্ষ নেতারা তিন তালাক ব্যবস্থা পরিবর্তনের কথা ভাবছে

 

মাথাভাঙ্গা মনিটর: ভারতের মুসলিম সমাজের শীর্ষ নেতারা তিন তালাক ব্যবস্থা পরিবর্তনের চিন্তা-ভাবনা করছেন। এক সাথে নয়, তিন মাসের মধ্যে তিনবার তালাক বললে তবেই সেই বিবাহবিচ্ছেদ মান্যতা পাবে- এ ব্যবস্থার দিকে এগোচ্ছেন তারা। ভারতের মুসলিম পার্সোনাল ল বোর্ড বলছে, এক সাথে তিনবার তালাক উচ্চারণ করে বিবাহবিচ্ছেদ শরিয়া বিরোধী।

অন্যদিকে, মুসলমান নারীদের ওপর চালানো একটি সমীক্ষায় জানা গেছে, ৯২ ভাগই চান মৌখিক তালাকের ব্যবস্থাটাই উঠিয়ে দেয়া হোক। ভারতের মুসলমান সমাজের একটা বড় অংশ মনে করছে, প্রতিবার তালাক উচ্চারণ করার পরে বেশ কিছুদিনের ব্যবধান প্রয়োজন, যাতে স্বামী-স্ত্রী নিজেদের মধ্যে বা তাদের পরিবারগুলোও আলাপ-আলোচনা করে তালাকের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করার সুযোগ পান। কিন্তু দেখা যায়, অনেক সময়েই এক সাথে তিনবার তালাক উচ্চারণ করেই বিবাহবিচ্ছেদ করে দেন পুরুষেরা। যদিও ইসলামে তিন মাসের মধ্যে তিনবার তালাক বলে বিবাহবিচ্ছেদকে উত্তম বলে মনে করা হয়।

মুসলিম পার্সোনাল ল বোর্ডের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য জাফরিয়াব জিলানি বলেন, বোর্ড অনেকদিন ধরেই বলে আসছে- এক সাথে তিনবার তালাক উচ্চারণ করে বিবাহ বিচ্ছেদ অনুচিত, এটা ইসলামী অনুশাসনে একটা গুনাহ। কিন্তু তা সত্ত্বেও এই ব্যবস্থা চলছে। জিলানির কথায়, বোর্ড তাই এবার কড়া পদক্ষেপ নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ভাবা হচ্ছে- তিনমাস সময়ের মধ্যে তিনবার তালাক উচ্চারণ করার ব্যবস্থা করা উচিত যাতে স্বামী এবং স্ত্রী আর তাদের পরিবারেরা বিচ্ছেদের বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করতে পারেন। কিন্তু আগেও যখন মুসলিম পার্সোনাল ল বোর্ডের অনুশাসন না মেনেই এক সাথে তিনবার তালাক উচ্চারণ করেই বিবাহবিচ্ছেদ হয়ে চলেছে, এবারে যে সিদ্ধান্ত উলামাদের বৈঠকে নেয়া হবে, সেটা কি সবাই মানবেন? জিলানি বলেন, নিয়ম না মানলে জরিমানার ব্যবস্থা করা হবে এবার থেকে। আর জরিমানার টাকা তুলে দেয়া হবে তালাকপ্রাপ্ত নারীর হাতে, যাতে তিনি নিজের আর সন্তানদের দেখভাল করতে পারেন। এ ছাড়াও তিন তালাক ব্যবস্থা নিয়ে আরও অনেক পরামর্শ আসছে বোর্ডের কাছে। তিন তালাক ব্যবস্থা পরিবর্তনের জন্য উলামাদের কাছে একটা প্রশ্নপত্র পাঠানো হয়েছিল, তার উত্তরে উলামারাই এইসব পরামর্শ দিয়েছেন। এ মাসের শেষ দিকে আমরোহা শহরে উলামাদের এক বৈঠকে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।

একদিকে যখন তিন তালাক ব্যবস্থা পরিবর্তনের কথা বলছে মুসলিম পার্সোনাল ল বোর্ড, তখন এই মৌখিক তালাক প্রথাটাই তুলে দেয়ার দাবি উঠছে মুসলমান নারীদের মধ্যে থেকে। ভারতের দশটি রাজ্যে প্রায় ৫ হাজার মুসলমান নারীদের মধ্যে চালানো এক সমীক্ষায় জানা গেছে, ৯২ ভাগ নারী-ই চান মৌখিক তালাক ব্যবস্থা তুলে দেয়া হোক। ওই সমীক্ষা চালিয়েছিল যে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন, সেই ভারতীয় মুসলিম মহিলা আন্দোলনের প্রধান নূরজাহান সাফিয়া নিয়াজ বলেন, কেবল তিনবার তালাক উচ্চারণ করেই বিবাহবিচ্ছেদ হয়ে যাওয়ার ফলে মুসলমান নারীরা অত্যন্ত সমস্যায় পড়েন। একদিকে তো সংসার শেষ হয়ে গেল হঠাৎ করে, অন্যদিকে নিজের আর সন্তানদের ভবিষ্যত কী হবে আর কে বাচ্চাদের দায়িত্ব নেবে- এ নিয়ে কোনো আলাপ-আলোচনাই করার সুযোগ পেলেন না ওই নারী। নূরজাহান সাফিয়া বলেন, বিবাহের সময়ে যদি পুরুষ এবং নারী দুজনেরই সম্মতি নিতে হয় এবং কবুল বলে, তাহলে বিচ্ছেদের সময়ে কেন শুধু পুরুষের সিদ্ধান্তে সেই বিয়ে ভেঙে যাবে। ওই সমীক্ষায় আরো একটি তথ্য উঠে এসেছে- মুসলিম নারীদের ৮৮ ভাগই চান সেই সব কাজিদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হোক, যারা তালাকের লিখিত নোটিশ নিয়ে নারীদের কাছে হাজির হন। ওই নারীদের স্বামীরা নিজে স্ত্রীর সামনে হাজির না হয়েই তালাক দিয়ে দেন কাজিদের মাধ্যমে। আবার টেলিফোন কিংবা ফেসবুক, স্কাইপ বা ইমেইল করেও স্ত্রীকে তালাক দেন অনেক পুরুষ।