মাথাভাঙ্গা ডেস্ক: মধ্যযুগকেও হার মানিয়েছে এ বর্বরতা। লোহার রড দিয়ে পেটানো, এরপর খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে মারার দৃশ্য ভিডিও ফুটেজে দেখে গা শিহরে ওঠে। শিশুটিকে বেঁধে নির্যাতনের এ দৃশ্য দেখে কেঁপে ওঠে মানবিক হৃদয়। কিন্তু পাষাণ সেই নির্যাতনকারীদের মন গলেনি। চোর অপবাদে নির্যাতনের একপর্যায়ে জীবন প্রদীপ নিভে যায় ১৩ বছরের শিশু রাজনের। এর আগে শত আকুতিও মন গলাতে পারেনি পাষণ্ডদের। আমাকে আর মারবেন না, মরে যাবো। হাড়-গুড় ভেঙে গেছে। পুলিশের কাছে দিয়ে দেন। রাজনের এমন আকুতিও তাদের দমাতে পারেনি। মৃত্যুর আগে পানি খেতে চেয়েছিলো রাজন। তাও দেয়া হয়নি। ২৮ মিনিটের ভিডিওচিত্র যারাই দেখেছেন কেউ চোখের পানি ধরে রাখতে পারেননি। রাজনের শরীরের এমন কোনো জায়গা নেই যেখানে নির্যাতন করা হয়নি।
ভিডিওচিত্রে দেখা যায়, নির্যাতন সইতে না পেরে রাজন মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। একপর্যায়ে স্তব্ধ হয়ে যায় তার শরীর। শ্বাস-প্রশ্বাস বন্ধ হয়ে যায়। তখনই নির্যাতনকারীরা মাইক্রোবাসে তুলে লাশ গুম করার চেষ্টা চালায়। কিন্তু স্থানীয় লোকজন ঘেরাও করে মাইক্রোবাসসহ লাশ আটক করেন। ঘটনার ৫ দিনের মাথায় গতকাল রাজনকে নির্যাতনের ভিডিও ফুটেজ প্রকাশ পায়। রাজনের পুরো নাম সামিউল ইসলাম রাজন। বয়স ১৩। বাড়ি সিলেট শহরতলির কান্দিগাঁও ইউনিয়নের বাদেআলী গ্রামে। পিতার নাম আজিজুর রহমান। তিনি পেশায় মাইক্রোচালক। আর মা লুবনা বেগম গৃহিণী। ঘাতকদের ধারণ করা ভিডিও ফুটেজে রাজন জানিয়েছে, তারা দু ভাই। সে বড়। তার ছোট আরও এক ভাই রয়েছে। সিলেট শহরতলির অনন্তপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত পড়ালেখা করেছে সে। অভাব-অনটনের সংসারে আর পড়ালেখা করতে পারেনি। পিতাকে সাহায্য করতে সবজি ব্যবসায় নামে। এ কারণে রাজনকে রমজানে খুব ভোরে বাড়ি থেকে বের হতে হতো। ফিরতো বিকেলে। রাজনের পারিবারিক সূত্র জানায়, গত বুধবার খুব ভোরে রাজন বাড়ি থেকে বের হয়। এরপর সারাদিন সে বাড়ি ফেরেনি। কোনো খবরও মেলেনি। রাতে থানায় গিয়ে তার লাশ পাওয়া যায়। দুপুরের দিকে জালালাবাদ থানা পুলিশ রাজনের লাশ উদ্ধার করে। রাত পর্যন্ত লাশটি অজ্ঞাত হিসেবেই ছিলো।