এখন আর একান্নবর্তী পরিবার খুঁজে পাওয়া যায় না। ছেলেরা বড় হতে না হতেই পিতা-মাতার সামনেই পৈত্রিক সম্পদ সম্পত্তি নিয়ে বিরোধে জড়িয়ে পড়েন। সামান্য এক হাত জমি নিয়েও খুনখারাবি হচ্ছে হরহামেশা। সঙ্গত কারণেই প্রশ্ন, এসবও কি বিবর্তনেরই ধারা? নাকি অজান্তেই বড়দের বপন করা বিরোধ বীজের বিষবাষ্প?
চুয়াডাঙ্গা জেলা সদরের হরিশপুরে জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে সংঘর্ষে একজন নিহত হয়েছেন। এ সংক্রান্ত প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ১০ কাঠা জমির মধ্যে তিন কাঠা জমিতে বেড়া দেয়ায় বিরোধ তুঙ্গে ওঠে। অথচ আদালত উভয়পক্ষকে স্ব স্ব অবস্থানে থাকার আদেশ দেন। স্থানীয়দের অনেকেরই অভিমত, আদালতের আদেশ মানলে সংঘর্ষ হতো না, ঝরতো না প্রাণ। মামলায় জড়িয়ে বিপন্ন হতো না সংসার। উবে যেতো না শান্তি।
সমাজে জমি নিয়ে বিরোধ নতুন নয়। কিছু মানুষ আছে যারা পেশিশক্তি প্রয়োগ করে অন্যের জমি জবরদখল করে। কিছু মানুষ আছে যারা বিরোধ এড়াতে ছাড় দেয়ার মানসিকতাও লালন করে। যখন জবরদখল বা অন্যায়ের মাত্রা বেড়ে যায় তখন? আইনের আশ্রয় নেয়া শ্রেয়। অবশ্য কোথাও কোথাও কেউ কেউ পেশিশক্তি প্রয়োগে এতোটাই হিংস্র হয়ে ওঠে যে প্রতিরোধ অনিবার্য হয়ে ওঠে।
পেশিশক্তি প্রয়োগকারীদের বিরুদ্ধে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাসমূহের শক্ত ব্যবস্থাগ্রহণ এ ধরনের প্রবণতারোধে সহায়ক। একই সাথে বিরোধপূর্ণ জমি নিয়ে আদালতে দায়েরকৃত মামলারও দ্রুত নিষ্পত্তিও প্রয়োজন। অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায়, ভূমিদস্যুরাও আইনি প্যাচে ফেলে জমির প্রকৃত মালিককে হয়রানি করে। সুবিধা আদায়েও ভূমিদস্যুরা সিদ্ধহস্ত। এরকম উদাহরণও রয়েছে চুয়াডাঙ্গাসহ পার্শ্ববর্তী এলাকায়।
বিরোধ স্বার্থান্ধের সুবিধা দিলেও শান্তিকামীর জন্য গলার কাঁটা বটে। একই পরিবারে বেড়ে ওঠা দুভাইয়ের মধ্যেও যখন বিরোধের বহির্প্রকাশ ঘটে তখন পারিবারিক শিক্ষার বিষয়টিই শুধু সামনে উঠে আসে না, প্রতিবেশীদের পারিবারিক সম্প্রীতির বিষয়ও প্রাসঙ্গিক হয়ে ওঠে। যদিও আমাদের সমাজে এ নিয়ে তেমন গবেষণা নেই, নেই বিরোধ বীজের বিষবাষ্প দূর করার সামাজিক উদ্যোগ। অথচ দরকার।
অবশ্যই প্রজন্মের জন্য পরিবারই শ্রেষ্ঠ ও সর্বোচ্চ শিক্ষালয়। শিশুকালে দুভাইয়ের হাতে খেলনা তুলে দিয়ে এটা তোমার, ওটা ওর বলে যে দূরত্ব গড়ে তোলা হয়, তার বদলে দুটো খেলনার দুটোই দুভাইয়ের। দুজনই সম্মিলিতভাবে খেলো। এরকম নিদের্শনার বদলে অজান্তেই পৃথকের যে বীজ বপন করা হয়- বড় হলে জমিজমা নিয়ে বিরোধে জড়ানোর মানসিকতা কি তারই কুফল নয়? খতিয়ে দেখা দরকার।
জোর করে অন্যের জমি নেয়া বা ছাড় দেয়া তথা পেশিশক্তির কাছে নতিশিকার স্থায়ী সমাধান নয়। কারণ, কেউ অন্যায় করে পার পেলে শুধু অন্যায়কারীর মধ্যেই প্রবণতা পেয়ে বসে না, অভিন্ন প্রবণতা সমাজে সংক্রমিত হয়। এ কারণেই দরকার পরিবারসহ সর্বস্তরে বড়দের দায়িত্বশীলতা। আইনের যথাযথ প্রয়োগ।