ভূমিকম্পে আবারো কেঁপে উঠলো দেশ : নেপাল-ভারতে নিহত ৭৮

স্টাফ রিপোর্টার: নেপালে গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে দেড় ঘণ্টায় কয়েক দফা ভূমিকম্প আঘাত হেনেছে। এতে দেশটিতে ৪২ জন মারা গেছে। আহত হয়েছে ১ হাজার ১১৭ জন। বাংলাদেশ, ভারত ও চীনেও ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে। ভারতের বিহারে অন্তত ১২ জন, উত্তর প্রদেশে ৫ জন, পশ্চিমবঙ্গে ১ জন নিহত হয়েছে। দফায় দফায় ভূমিকম্পে পুরো অঞ্চলের অধিবাসীর মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।

যুক্তরাষ্ট্রের ভূতাত্তি্বক জরিপ সংস্থার তথ্যমতে, স্থানীয় সময় বেলা ১টা থেকে আড়াইটার মধ্যে নেপালে ছয় দফা এবং চীনে এক দফা ভূমিকম্প হয়। স্থানীয় সময় বেলা ১টা ৫ মিনিট ১৯ সেকেন্ডে নেপালে প্রথম ভূমিকম্পটি আঘাত হানে। সবচেয়ে শক্তিশালী এ ভূমকম্পটির উৎপত্তিস্থল দেশটির কোদারি থেকে ১৮ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে। উৎপত্তিস্থলে রিখটার স্কেলে ভূমিকম্পের তীব্রতা ছিলো ৭ দশমিক ৩। একই উৎপত্তিস্থলে একটা ১৭ মিনিট ২০ সেকেন্ডে ৫ দশমিক ৬ তীব্রতার দ্বিতীয় ভূমিকম্পটি হয়। একটা ৩৪ মিনিট ২২ সেকেন্ডে চীনে রিখটার স্কেলে ৫ দশমিক ৪ তীব্রতার ভূমিকম্প আঘাত হানে। একটা ৩৬ মিনিট ৫৩ সেকেন্ডে নেপালের রমেসহাপ থেকে ৩৩ কিলোমিটার উত্তর-উত্তর পূর্বে ৬ দশমিক ৩ তীব্রতার ভূমিকম্প হয়। দুইটা ৬ মিনিট ৭ সেকেন্ডে নেপালের কোদারি থেকে ৩৪ কিলোমিটার দক্ষিণে ৫ তীব্রতার ভূমিকম্প আঘাত হানে। দুইটা ১৩ মিনিট ৫৪ সেকেন্ডে কোদারি থেকে ১৯ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে ৫ দশমিক ১ তীব্রতার ভূমিকম্প হয়। ২টা ২১ মিনিট ১০ সেকেন্ডে কোদারি থেকে ২৮ কিলোমিটার দক্ষিণ দক্ষিণ-পূর্বে ৫ দশমিক ২ তীব্রতার শেষ ভূমিকম্পটি হয়। নেপালে আঘাত হানা ভূমিকম্প বাংলাদেশেও অনুভূত হয়। রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ভূমিকম্প অনুভূত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। তবে তাৎক্ষণিকভাবে ক্ষয়ক্ষতি বা প্রাণহানির কোনো খবর পাওয়া যায়নি। ভূমিকম্প শুরু হলে রাজধানীতে অনেক ভবন থেকে লোকজন রাস্তায় বেরিয়ে আসেন। তারা আতঙ্কিত হয়ে পড়েন।

বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে আবহাওয়াবিদ মোমিনুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক বার্তায় জানানো হয়, আগারগাঁও ভূমিকম্প পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র থেকে ৬১১ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে নেপালে ছিলো ভূমিকম্পটির কেন্দ্রস্থল। বেলা ১টা ৫ মিনিট ১৮ সেকেন্ডে শুরু হওয়া ওই ভূমিকম্পের তীব্রতা কেন্দ্রস্থলে ছিলো রিখটার স্কেলে ৭ দশমিক ১। ভূমিকম্পে ভারতের বিহারে অন্তত ১০ জন নিহত হয়েছে। বিভিন্ন স্থানে বেশকিছু লোক আহত হয়েছে। রাজধানী নয়াদিল্লিসহ দেশটির বিভিন্ন স্থানে ভূমিকম্প অনুভূত হয়। এতে লোকজনের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। তারা ঘরবাড়ি ছেড়ে বাইরে চলে আসে। চীনেও অনুভূত হওয়া ভূমিকম্পে তাৎক্ষণিকভাবে ক্ষয়ক্ষতি বা প্রাণহানির কোনো খবর পাওয়া যায়নি। গত ২৫ এপ্রিল নেপালে শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হানে। এর তীব্রতা ছিলো ৭ দশমিক ৯। ওই ভূমিকম্পে আট হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়। আহত হয় ১৭ হাজার মানুষ। ওই ভূমিকম্পে ভারতেও প্রাণহানি ঘটে। রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে ভূমিকম্প হয়েছে।

চুয়াডাঙ্গায় এ সময় আতঙ্কিত হয়ে এক নারী অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তাকে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এছাড়া ভূমিকম্পের সময় ঘরবাড়ি ও কর্মস্থল থেকে হুড়োহুড়ি করে নামতে গিয়ে অন্তত ৪ জন আহতের খবর পাওয়া গেছে। তবে কোনো ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি। গতকাল মঙ্গলবার দুপুর ১টা ৮ মিনিটে প্রথম কস্পন অনুভূত হয়। পরে থেমে থেমে আরও দু দফা ভূমিকম্পে কেঁপে ওঠে ঘরবাড়ি। স্থানীয়রা জানায়, দুপুরে হঠাৎ বাড়িঘর, দোকানপাট, বহুতল ভবনসহ সবকিছু কাঁপতে শুরু করে। এতে আতঙ্কিত মানুষ বাড়িঘর, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, অফিস-আদালত ছেড়ে রাস্তায় নেমে আসে। ভূমিকম্প চলাকালে সদর উপজেলার জাফরপুর গ্রামের খাদিজা খাতুন (২২) নামে এক নারী আতঙ্কে অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে তাকে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার কুকিয়াচাদপুর আদর্শ মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের নতুন ভবনের চারদিকে ফাটল দেখা দিয়েছে। গত ১০ ডিসেম্বর উদ্বোধন হওয়া এ ভবনের ওয়াল, পিলারে ব্যাপক ফাটল দেখা দিয়েছে। বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা আতঙ্কের মধ্যে রয়েছে। এছাড়া আলমডাঙ্গা উপজেলার মুন্সিগঞ্জের সৃজনী মডেল মাধ্যমিক বিদ্যাপীঠের আধাপাকা ভবনে ফাটল দেখা দিয়েছে বলে জানিয়েছেন বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক আতিকুল হক বুলবুল। চুয়াডাঙ্গা জেলায় প্রাথমিকভাবে ক্ষয়ক্ষতির কোনো খবর পাওয়া যায়নি।

মুন্সিগঞ্জ প্রতিনিধি জানিয়েছেন, মুন্সিগঞ্জে গতকাল বেলা ১টা ১০ মিনিটের সময় ভূমিকম্পন শুরু হলে এলাকাবাসী আতঙ্কিত হয়ে বাড়ির বাইরে ফাকা মাঠে অবস্থান নেই। চোখে মুখে আতঙ্কের ছাপ লক্ষ্য করা গেছে। ভূমিকম্পে মুন্সিগঞ্জ ও তার আশপাশে কোনো প্রকার ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি।

দামুড়হুদা প্রতিনিধি জানিয়েছেন, দামুড়হুদায় ভূমিকম্পে উপজেলা যুবউন্নয়ন অফিসের সবকটি দেয়ালে ফাটল লক্ষ্য করা গেছে। গতকাল মঙ্গলবার স্থানীয় সময় দুপুর ১টা ৫ মিনিটের দিকে বড় ধরনের ভূকম্পন অনুভূত হয় এবং থেমে থেমে প্রায় দু মিনিট পর্যন্ত তা স্থায়ী হয়। ওই সময় দামুড়হুদায় বর্তমান সরকারের সাফল্য, অর্জন ও উন্নয়ন ভাবনা সম্পর্কে জনগণকে অবহিতকরণ বিষয়ক আলোচনাসভায় দামুড়হুদা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. ফরিদুর রহমান বক্তব্য রাখছিলেন। হঠাৎ চেয়ার নড়েচড়ে ওঠার পরপরই উপস্থিত সকলেই বুঝতে সক্ষম হন যে ভূমিকম্প হচ্ছে। তিনি ভূমিকম্পের বিষয়টি সকলকে অবগত করিয়ে বলেন, আপনারা যারা ভবনের মধ্যে আছেন তারা সকলেই বাইরে বেরিয়ে আসেন। ভূমিকম্প শেষ হওয়ার পর উপজেলা পরিষদ চত্বরে অবস্থিত যুব উন্নয়ন অফিসের বিভিন্ন স্থানে ফাটল লক্ষ্য করা যায়। এছাড়া দেউলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবনে ফাটল দেখা গেছে বলে স্থানীয়রা মোবাইলফোনে জানান।

জীবননগর ব্যুরো জানিয়েছেন, আবারো ভূমিকম্পে কাঁপলো জীবননগর। দুপুর ১টা ৭ মিনিটের দিকে ভূমিকম্প অনুভূত হলে মানুষজন বাড়ি-ঘর, আফিস-আদালত, স্কুল-কলেজ ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ছেড়ে বাইরে বেরিয়ে আসে। এসময় তাদেরকে উদ্বিগ্ন হয়ে মোবাইলফোনে দেশের বিভিন্ন স্থানে অবস্থানরত আত্মীয়স্বজনদের খবর নিতে দেখা যায়। দফায়-দফায় ভূমিকম্প হতে থাকায় মানুষের মধ্যে চরমভাবে ভূমিকম্প আতঙ্ক চেপে বসেছে। গতকালের ভূমিকম্পে আলীপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয় ভবনে বড় ধরনের ফাটল দেখা দিয়েছে। এছাড়াও আর কোনো ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি।

আন্দুলবাড়িয়া প্রতিনিধি জানিয়েছেন, সারাদেশের ন্যায় জীবননগরের আন্দুলবাড়িয়া এলাকায় ফের দু দফা ভুমিকম্প অনুভূত হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার বেলা ১টা ১০ মিনিটে প্রথম ও এর ৩১ মিনিট পর ২য় বার কম্পন শুরু হলে লোকজন নিজ নিজ অবস্থান ছেড়ে নিরাপদ স্থানে ছুটাছুটি শুরু করে। এ মাসেই পরপর ৪ বার ভুমিকম্পন অনুভুত হওয়ায় জনমনে ভয়ভীতি ও আতঙ্ক বিরাজ করছে।

কালীগঞ্জ প্রতিনিধি জানিয়েছেন, সারাদেশের ন্যায় ভুকম্পন আতঙ্কে পড়ে ঝিনাইদহবাসী। গতকাল মঙ্গলবার দুপুর ১টা ৩০ মিনিটে জেলা শহরের পায়রা চত্বর, কালীগঞ্জ, কোটচাঁদপুর, মহেশপুর, হরিণাকুণ্ডু, শৈলকুপায় উপজেলার জনসাধারণ আতঙ্কিত হয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে নিরাপদে যাওয়ার জন্য ছোটাছুটি করেন। জেলা প্রশাসক শফিকুল ইসলাম জানান, জেলার কোনো স্থানে ক্ষতি ও হতাহতের সংবাদ পাওয়া যায়নি।