শুল্ক নির্ধারণের সাথে সাথে কৃষকের স্বার্থ রক্ষা হোক

এটা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, বাংলাদেশে পর্যাপ্ত ধান, চাল উৎপন্ন হয়। ফলে এক অর্থে এখন চালে দেশ স্বয়ংসম্পূর্ণ। এছাড়া কিছু পরিমাণ চাল এখন রপ্তানিও হয়। কিছুদিন আগে বাংলাদেশ শ্রীলঙ্কায় চাল রপ্তানিও করেছে। অথচ এমন ঘটছে যে, বেসরকারি খাতে কিছু ব্যবসায়ী ভারত থেকে চাল আমদানি করছে। স্বাভাবিকভাবেই এতে দেশীয় চাল উৎপাদক কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। সঙ্গত কারণেই যখন কৃষকদের উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্য দাম পাওয়া নিশ্চিত করার লক্ষ্যে চাল আমদানির ওপর ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে সরকার; আর তা গত রোববার থেকেই কার্যকর করা হয়েছে- তখন বিষয়টিকে আমরা অত্যন্ত ইতিবাচক হিসেবে বিবেচনা করতে চাই। একই সাথে এ উদ্যোগের মাধ্যমে কৃষকের স্বার্থ রক্ষায় সরকার সার্বিক উদ্যোগ জারি রাখবে এমনটিও প্রত্যাশিত।

তথ্য মতে, সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতিদের সাথে প্রাক-বাজেট আলোচনাতেই চলতি বোরো মরসুমে আমাদের কৃষকরা যাতে তাদের উৎপাদিত ধানের ন্যায্য দাম পায়, সে জন্য চাল আমদানির ওপর ১০ শতাংশ ডিউটি ইমপোজ করা হয়েছে। আমরা মনে করি, এ ইতিবাচক সিদ্ধান্তের সুষ্ঠু বাস্তবায়নের মাধ্যমে সরকার কৃষকের স্বার্থ বজায় রাখতে পারলে তা সাবির্কভাবেই সুফল বয়ে আনবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের আমদানি সংক্রান্ত তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে যে, চলতি ২০১৪-১৫ অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে (জুলাই-মার্চ) চাল আমদানির জন্য ৪৭ কোটি ৬৪ লাখ ডলারের এলসি (ঋণপত্র) খোলা হয়েছে। এ অঙ্ক গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ৬৬ শতাংশ বেশি। এ সময় ৪৩ কোটি ডলারের এলসি নিষ্পত্তি হয়েছে। অর্থাৎ এটা স্পষ্ট যে, ব্যবসায়ীদের মধ্যে আমদানি প্রবণতা বাড়ছিলো। ফলে এ শুল্ক আরোপের সাথে সাথে ব্যবসায়ীরা চাল আমদানিতে নিরুৎসাহিত হবে এবং তাতে কৃষকের নায্য পাওনা পাওয়ার সম্ভাবনাও বাড়বে বলেই প্রতীয়মান হয়।

উল্লেখ্য, গত ৩ বছর সরকারিভাবে কোনো চাল আমদানি না হলেও খাদ্যদ্রব্য আমদানির ক্ষেত্রে শুল্ক ছিলো না। ফলে দেখা যায়, বেসরকারি পর্যায়ে অনেকে সেই সুযোগ নিয়েই মূলত চাল আমদানি করেছেন। আর তার ফলে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে কৃষকের ওপর। এছাড়া আগেও আমদানির বিরোধিতা করে কৃষকরা বলে আসছিলেন, ভারত থেকে কম দামে চাল আমদানি করায় তাদের ফসলের উৎপাদন ব্যয় উঠে আসা কঠিন হয়ে পড়েছে। এ পরিস্থিতিতে আমরা বলতে চাই, কৃষক প্রতিকূল পরিস্থিতি মোকাবেলা করে কখনো কখনো ঋণ করে ধান উৎপাদন করার পর যদি তাদের খরচই না ওঠে, তবে সেই চিত্র অত্যন্ত দুঃখজনক এবং একই সাথে আশঙ্কার। একদিকে বাংলাদেশে ধানের ভালো ফলন হচ্ছে, অন্যদিকে বেসরকারি পর্যায়ে ভারত থেকে চাল আমদানি করা হবে এই দুই মিলিয়ে কৃষকরা ন্যায্য দাম থেকে বঞ্চিত হবে এটি গ্রহণযোগ্য নয়। আমরা চাই, সরকার কৃষকের উৎপাদন সক্ষমতা আরো বাড়ানোর লক্ষ্যে সহজশর্তে ঋণসহ বিভিন্ন বিষয়ে উদ্যোগী হয়ে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করুক। তাতে দেশের সমৃদ্ধি অর্জন ও সক্ষমতার দিক থেকে অগ্রগতি হবে বলেই আমাদের বিশ্বাস।

সর্বোপরি আমরা সরকারকে বলতে চাই, আমদানির ওপর শুল্ক বসানোর বিষয়টা যেমন ইতিবাচক, সাথে সাথে স্পর্শকাতরও। আমরা চাই শুল্ক নির্ধারণের সাথে সাথে কৃষকের স্বার্থ রক্ষা হোক। কিন্তু কৃষকের স্বার্থ রক্ষার নামে যদি আবার বাজারে চালের দাম বৃদ্ধি পায়, তবে এটি সার্বিক অর্থে সুখকর হবে না। এ ক্ষেত্রে কৃষকের স্বার্থ রক্ষায় যেমন সরকারকে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে, তেমনিভাবে চালের দামও ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখতে হবে।