সীমান্ত প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের দৃশ্যপট পাল্টানোর পর স্থাপন হচ্ছে সীমান্ত কলেজ

বিজিবি-৬’র অধিনায়ক লে. কর্নেল মনিরুজ্জামানের দরদি নজরদারি আর শিক্ষকতাকে পেশা হিসেবে নেয়ার আহ্বানে সাড়া

 

কামরুজ্জামান বেল্টু: বদলে গেছে চুয়াডাঙ্গার সীমান্ত প্রাথমিক ও সীমান্ত মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে পঠন-পাঠনের ধরন। বেড়েছে শিক্ষার মান বৃদ্ধিতে শিক্ষকমণ্ডলীর আন্তরিকতা। কেন? বিদ্যালয় দুটির ব্যবস্থাপনা কমিটির কর্তার দরদি নজরদারি আর শিক্ষকতাকে চাকরি হিসেবে নয়, শিক্ষকতাকে পেশা হিসেবে নেয়ার আহ্বান। এতেই বিদ্যালয় দুটি ফিরে পেয়েছে যেন শিক্ষার পরিবেশ। এর পাশাপাশি সীমান্ত কলেজ স্থাপনের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এবারই সীমান্ত কলেজে ছাত্রছাত্রী ভর্তির লক্ষ্যে অনুমোদনের ফাইল ছুটছে এ দফতর থেকে ও দফতরে।

চুয়াডাঙ্গার জাফরপুর আর হায়দারপুরের মধ্যবর্তী স্থানে ৬ বিজিবির ব্যাটালিয়ন সদর দফতর। ১৯৯৫ সালে তৎকালীন ১৩ ব্যাটালিয়ানের অধিনায়ক লে. কর্নেল মো. ওয়াহিদুর রহমান ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় ব্যাটালিয়ন দফতরের এক প্রান্তে প্রতিষ্ঠা করেন সীমান্ত প্রাথমিক বিদ্যালয়। একই বছরে তিনিই সীমান্ত মাধ্যমিক বিদ্যালয় স্থাপন করে শিক্ষা সম্প্রসারণে অবদান রাখেন। এরপর কেটেছে ২০ বছর। অনেকগুলো ব্যাটালিয়ন বদলেছে। ১৯ জন অধিনায়ক দায়িত্বও পালন করেছেন। বর্তমানে বিজিবি-৬ দায়িত্ব পালন করছে। এ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল এসএম মনিরুজ্জামান বিজিবিএম দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি চুয়াডাঙ্গায় যোগদানের পর থেকে শুধু সীমান্তের চিত্রই বদলাননি। সীমান্ত হাট স্থাপন করে কৃষকদের উৎপাদন সবজি বিক্রির সুযোগ সৃষ্টির লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছেন। আর ব্যাটালিয়নের সদর দফতরের চেহারা? সেটাও বদলে গেছে বিজলি বাতির বদৌলতে। অথচ বিগত দিনের তুলনায় এখন বিদ্যুত খরচাও কমেছে। বাতির সংখ্যা বেড়েছে অথচ বিল কমেছে কেন? অ্যানার্জি সেভিং বাল্বই শুধু নয়, পিকআওয়ারে নিজের দফতরের শীতাতপ নিয়ন্ত্রণের যন্ত্রটাও বন্ধ রাখা হয়। আর যেসব কারণে আগে বিদ্যুতের অপচয় হিসেবে তিনি শনাক্ত করেছেন, তাও বন্ধ করতে সক্ষম হয়েছেন তিনি। এবার হাত দিয়েছেন সীমান্ত কলেজ স্থাপনে। যে কলেজ ক্যাম্পাসে রাজনীতির বিষবাষ্প থাকবে না, থাকবে লেখাপড়ার মুক্ত পরিবেশ। এরকমই স্বপ্ন নিয়ে সীমান্ত কলেজ স্থাপনের প্রাথমিক কাজ ইতোমধ্যেই সম্পন্ন করা হয়েছে। অবকাঠামো? সেটাও প্রস্তুত। শুরুতেই অট্টালিকা নয়, প্রয়োজনে টিনশেডেই কলেজের কার্যক্রম শুরু হবে। তিনি এ তথ্য দিয়ে বলেছেন, প্রত্যাশা মতো প্রভাষক অধ্যক্ষ পেলে যেমনটি ভাবছি তেমন কলেজ করে তুলতে বেগ পেতে হবে না।

সীমান্ত মাধ্যমিক আর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার মান সম্পর্কে তিনি মন্তব্য করতে গিয়ে বলেছেন, প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা যদি শিক্ষকতাকে চাকরি হিসেবে না নিয়ে শিক্ষকতাকে মহান পেশা হিসেবে নেন তাহলে শিক্ষার মান বৃদ্ধি হতে বাধ্য। অবশ্য শিক্ষকদের তেমন পরিবেশও দেয়া দরকার। শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা নিয়ে যেমন মূল্যায়ন তেমনই ভালো শিক্ষকের শিক্ষকতায় আন্তরিকতা দেখে তাকেও মূল্যায়ন করতে পারলে অন্যরাও তাতে আন্তরিক হন। সীমান্ত প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে সঠিক সময়ে যেমন শিক্ষার্থীদের প্রবেশ করতে হয়, তেমনই শিক্ষকদেরও। উত্ত্যক্ত? সুন্দর পরিবেশ গড়তে সকলের জন্য সমান নিয়ম থাকলে কোনো ছাত্রই বখাটে হওয়ার সুযোগ পায় না। আর যদি কেউ বখে যায় তাহলে তার অভিভাবককেও কৈফিয়ত দিতে হয়।

সীমান্ত প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বর্তমানে ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা ২৪৫। শিক্ষক ৮ জন। এর মধ্যে একজন অস্থায়ী। তাকে বিজিবির তহবিল থেকে সম্মানী দেয়া হয়। প্রধান শিক্ষক পদটি দীর্ঘদিন ধরে শূন্য থাকলেও ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন খুরশিদা বেগম জোয়ার্দ্দার। তিনি বললেন, বর্তমান সিও’র মতো আন্তরিক হলে যেকোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানই সুন্দর হতে বাধ্য। সীমান্ত মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা ৩৯৬। শিক্ষক রয়েছেন ১৮ জন। এর মধ্যে ৫ জন অস্থায়ী। যাদের সম্মানি গুনতে হয় বিজিবির তহবিল থেকে। আর বার্ষিক ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের ব্যয়? সেটাও বিজিবির ওপরই বর্তায়। আর মেধাবী দরিদ্র শিক্ষার্থীদের বেতন? বিজিবির তরফে দেয়া হয়। এতোকিছু যখন বিজিবি করে তখন বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের শিক্ষার মান বাড়বে না কেন? যুক্তির প্রশ্ন তুলেই মূলত বিদ্যালয় দুটির শিক্ষার পরিবেশ, পাঠদান ও পাঠ গ্রহণের চিত্রটাই বদলে দিয়েছেন ৬ বিজিবির অধিনায়ক। মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মাহজেবীন এ মন্তব্য করে বললেন, বিদ্যালয়ের যেকোনো সমস্যা সমাধানে আমাদের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি তথা ৬ বিজিবির অধিনায়ক তড়িত পদক্ষেপ নেন। তিনিই বিশেষ উদ্যোগ নিয়ে পাঠাগার গড়ে তুলেছেন। সব বই বিজিবির তহবিল থেকেই শুধু কেনা নয়, তিনি নিজ হাতে তালিকা প্রস্তুত করে শিক্ষার্থীদের পাঠ উপযোগী বই কিনতে উৎসাহ জুগিয়েছেন। তিনি আগলে রাখেন শিক্ষক-শিক্ষার্থী সকলকে। বিদ্যালয়ে শিক্ষার মান যে বেড়েছে তার সুফল আমরা আগামীবার এসএসসির মাধ্যমে জানান দিতে পারবো। এই ব্যাচটিই ২০১৩ সালে জেএসসিতে উপজেলার শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করে।