নির্বাচন বর্জনেও বিএনপি দেখছে লাভ

স্টাফ রিপোর্টার: নিতান্ত বাধ্য হয়েই ভোট চলাকালে তিন সিটি নির্বাচন বর্জন করলেও এর মধ্যে অনেক অর্জন দেখছে বিএনপি। প্রথমত, নির্দলীয় সরকারের অধীনে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য বিএনপি জোট এতোদিন ধরে যে আন্দোলন করে আসছিলো তার যৌক্তিকতা জনগণের কাছে প্রমাণিত হয়ে গেছে। দ্বিতীয়ত, আওয়ামী লীগ সরকার ও বর্তমান নির্বাচন কমিশনের অধীনে যে আদৌ নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব নয়, তা মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত সিটি নির্বাচনে প্রমাণিত হয়েছে। ভোট কেন্দ্র দখলসহ ব্যাপক কারচুপির ভয়াবহ চিত্র গণমাধ্যমে দেখাসহ সরাসরি প্রত্যক্ষ করেই সাধারণ জনগণের অনেকের কাছে পুরো বিষয়টি এখন স্পষ্ট হয়ে গেছে- এমনটি মনে করছেন বিএনপির নীতিনির্ধারক মহল। তিন সিটি নির্বাচন বর্জন করে বিএনপিসহ ২০ দলীয় জোটের কী অর্জন হয়েছে- এমন প্রশ্নের জবাবে তারা এ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন।

অপরদিকে বিএনপির কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতা জানিয়েছেন, তিন সিটি নির্বাচনে অংশ নেয়ার মধ্যদিয়ে দলের সাংগঠনিক কার্যক্রমে গতি যেমন সঞ্চারিত হয়েছে, তেমনি নেতৃত্বের ধাপে ধাপে কিছু দুর্বল দিকও বেরিয়ে এসেছে। এ বিষয়গুলো পর্যালোচনা করে তারা এখন দলের সাংগঠনিক শক্তিকে সত্যিকারার্থে আরও শক্তিশালী করার সুযোগ পাবেন।

এদিকে দলীয় সূত্র জানায়, নির্বাচন বর্জন নিয়ে দলের মধ্যে কিছু মিশ্র প্রতিক্রিয়াও সৃষ্টি হয়েছে। বর্জনের পরও তিন সিটিতে বিএনপি সমর্থিত মেয়র প্রার্থীদের প্রাপ্ত ভোট দেখে অনেকেই মনে করছেন, বর্জনের সিদ্ধান্তটি সঠিক হয়নি। বর্জনের পেছনে সরকারের সাথে আঁতাতের গন্ধও খুঁজছেন কেউ কেউ। তবে দলটির নীতিনির্ধারক ও চেয়ারপারসনের ঘনিষ্ঠজনদের সাথে আলাপ করে জানা যায়, দল সমর্থিত মেয়র প্রার্থীদের মতামত নিয়ে খালেদা জিয়া নিজেই ভোট বর্জনের সিদ্ধান্ত নেন। খালেদা জিয়ার নির্দেশেই ঢাকা ও চট্টগ্রামের তিন মেয়র প্রার্থী ভোট বর্জনের ঘোষণা দেন।

ভোট বর্জন প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে সমন্বয়ের দায়িত্বে থাকা দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, দল সমর্থিত দু মেয়র প্রার্থীর মতামতের ওপর ভিত্তি করে দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার পরামর্শেই ভোট বর্জনের ঘোষণা দেয়া হয়। কারও ব্যক্তিগত ইচ্ছা বা অনিচ্ছায় এ সিদ্ধান্ত হয়নি। তিনি বলেন, কারচুপির যেসব অভিযোগে তারা ভোট বর্জন করেছেন তা যে সঠিক ছিলো তা আজ (বুধবার) প্রত্যেকটি গণমাধ্যম বিশেষ করে জাতীয় পত্রিকায় খবর দেখলেই তো স্পষ্টভাবে বুঝা যায়।

বর্জনের মধ্যদিয়ে কি অর্জন হলো- জানতে চাইলে মওদুদ বলেন, আমরা ভোটাধিকার রক্ষার জন্য আন্দোলন করছি। আওয়ামী লীগ ও নির্বাচন কমিশনের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয় এটা বারবার বলে আসছি। মঙ্গলবারের সিটি নির্বাচনে সেটাই প্রমাণিত হয়েছে। সিটি নির্বাচনে ব্যাপক কারচুপির ফলে সরকারই এখন প্রশ্নের মুখে পড়েছে। বর্জনের পরও তিন সিটিতে বিএনপি সমর্থিত মেয়র প্রার্থীদের এত ভোট পাওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এটাও সরকারের নীলনকশার অংশ। তারা যে ভোট ডাকাতি করেনি বা বিএনপির ভোট বর্জনের সিদ্ধান্ত পূর্বপরিকল্পিত তা প্রমাণ করার জন্যই সরকার পরিকল্পিতভাবে এই কাজ করেছে।

তিন সিটিতে ভোট বর্জন প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের সমন্বয়ক ও দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আসম হান্নান শাহ বলেন, নির্বাচন বর্জনের মধ্য দিয়ে প্রমাণ করতে পেরেছি আওয়ামী লীগ সরকার এবং এই নির্বাচন কমিশনের অধীনে কোনো সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। আমরা আরও প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছি, বর্তমান প্রশাসন সরকারের আজ্ঞাবহ। এই নির্বাচনের মধ্য দিয়ে প্রমাণিত হয়েছে দীর্ঘদিন যে দাবিতে আমরা আন্দোলন করছি তাও সঠিক।

নির্বাচন বর্জন প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, সকাল নয়টার মধ্যেই তার কাছে বিভিন্ন মাধ্যমে খবর আসে দক্ষিণের প্রায় সব কেন্দ্র থেকে তাদের পোলিং এজেন্টদের বের করে দিয়েছে। ক্ষমতাসীনরা ইচ্ছামতো ব্যালটে সিল মারছে। সাড়ে নয়টার দিকে দক্ষিণের মেয়র প্রার্থী মির্জা আব্বাস আমাকে ফোন করে জানান, হান্নান ভাই দয়া করে নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেন। এই নির্বাচনে থেকে কোনো লাভ হবে না। পরে বিষয়টি দলের চেয়ারপারসনকে অবহিত করি। চেয়ারপারসনের পরামর্শেই আমরা আনুষ্ঠানিকভাবে ভোট বর্জনের ঘোষণা দিই।

হান্নান শাহ বলেন, এই নির্বাচনে থেকে আমরা সরকারের ভোট ডাকাতির বৈধতা দিতে চাইনি। তাই সরে আসার সিদ্ধান্ত নিই। তিনি বলেন, ভোটে কারচুপি করে সরকারের আসল চেহারা প্রকাশ পেয়েছে। এই কারণে তারা বিএনপির ওপর দায় চাপাতে নানা বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে। উত্তরের বিএনপি সমর্থিত মেয়র প্রার্থী তাবিথ আউয়াল যুগান্তরকে বলেন, ভোট গ্রহণের কিছু সময় পরেই স্পষ্ট হয়ে যায়, সরকার নীলনকশার নির্বাচন করছে। বিভিন্ন কেন্দ্র থেকে তার কাছে অসংখ্য অভিযোগ আসতে থাকে। তিনি নিজেও অনেক কেন্দ্রে গিয়ে প্রকাশ্যে সিল মারতে দেখেন। প্রার্থী হওয়ার পরও তাকে কোনো কোনো কেন্দ্রে প্রবেশ করতে বাধা দেয়া হয়। ভোট কেন্দ্রের এমন অবস্থা বিএনপির হাইকমান্ডকে অবহিত করি। এই পরিস্থিতিতে নির্বাচনে থাকা ঠিক হবে কিনা সে ব্যাপারে দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে অনুরোধও জানাই। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এগারটার পরই আনুষ্ঠানিকভাবে ভোট বর্জনের সিদ্ধান্ত হয়। কারও ব্যক্তিগত ইচ্ছা বা প্রভাবে নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্ত