মরুভূমির ফসল গাংনীর মাটিতে আবাদে সফলতা
মাজেদুল হক মানিক: সৌদি আরবের মরু ভূমির স্কোয়াস জাতীয় ফসল বাংলাদেশের মাটিতে চাষ করে ব্যাপক সফলতা পেয়েছেন মেহেরপুর গাংনী উপজেলার কাজিপুর গ্রামের আব্দুর রাজ্জাক নামের এক কৃষক। দেশের উচ্চ ফলনশীল ফসলের চেয়েও কয়েক গুণ বেশি উৎপাদন করে রীতিমতো হৈ-চৈ ফেলে দিয়েছেন তিনি। মাত্র তিন মাসে কোচা আবাদে তিনি হয়েছেন লাখপতি। রাজ্জাকের সফলতায় এ ফসল চাষের আগ্রহ প্রকাশ করেছেন অসংখ্য কৃষক। ভালো বীজের নিশ্চিয়তা ও চাষের প্রয়োজনী পরামর্শ মিললে এটি এ অঞ্চলের প্রধান অর্থকরী ফসল হতে পারে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
চলতি বছরের শুরুর দিকে সৌদি আরব থেকে কোচা সবজির বীজ সংগ্রহ করে ১৫ কাঠা জমিতে রোপণ করেন কৃষক আব্দুর রাজ্জাক। সফলতার গল্প বলতে গিয়ে আব্দুর রাজ্জাক জানান, মাত্র ১২ হাজার টাকা খরচে তিন মাসে প্রায় দেড় লাখ টাকার বিক্রি করেন। বীজ রোপণের দেড় মাস পর থেকেই ক্ষেত থেকে কোচা তোলা শুরু হয়। স্থানীয় বাজারে প্রতিকেজি কোচা বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকা। কোচা দেখতে অনেকটাই শসার মতো। এটি কাঁচা ও রান্না উভয় ভাবেই খাওয়ার উপযোগী এবং সুস্বাদু। অল্প সময়ের ফসল প্রাপ্তি এবং সাশ্রয়ী উৎপাদন খরচ। তাছাড়া এক বিঘা জমিতে যে পরিমাণ কুমড়ো গাছ লাগানো যায় তার চেয়ে দ্বিগুণ কোচা লাগানো সম্ভব। পূর্ণবয়স্ক একটি কোচা গাছ অল্প জায়গা দখল করে। কোচার ফুল থেকে শুরু করে কয়েকদিনের মধ্যেই খাওয়ার উপযোগী হয়। ডগার প্রতিটি পাতার গোড়া দিয়ে কোচা বের হয়।
কৃষি অফিস জানিয়েছে, এ কোচা স্কোয়াস জাতীয় ফসল। যা কুমড়া ও ধুন্দল জাতীয় ফসলের ক্রস। দেশের প্রচলিত কোনো সবজির এমন উৎপাদন ক্ষমতা নেই। তাই এই কোচা চাষ সম্প্রসারণ করা গেলে কৃষি অর্থণীতিতে এক বিরাট পরিবর্তন আসবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
লাভজনক ফসল ও ভোক্তাদের ব্যাপক চাহিদা থাকায় কোচা আবাদে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন এলাকার চাষীরা। তাই সরকারিভাবে বীজ সরবরাহের দাবি জানান তারা। কেননা কোচার বীজ এখনো সরকার কিংবা দেশের কোন কোম্পানি আমদানি কিংবা তৈরি করছে না। সৌদি আরব থেকে আমদানি কিংবা দেশের মাটিতে যদি এর বীজ তৈরি করা যায় তাহলে চাষিরা কাঙ্ক্ষিত সফলতার মুখ দেখতে পারবেন।
আব্দুর রাজ্জাক আরো জানান, দেশের প্রচলিত সবজিতে অতি মাত্রায় কীটনাশক ছাড়া উৎপাদন সম্ভব নয়। সেখানে নামমাত্র রাসায়নিক সার প্রয়োগ করে বিষমুক্ত উপায়ে কোচা আবাদ করা সম্ভব হয়েছে। বিষমুক্ত সবজি হিসেবে দেশের মানুষের পুষ্টি চাহিদা মেটাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারবে এ সৌদি আরবের ফসল।
আব্দুর রাজ্জাকের ক্ষেতের উৎপাদন হিসেবে প্রতি হেক্টরে ৬০ মেট্রিক টন কোচা পাওয়া সম্ভব জানিয়ে গাংনী উপজেলা কৃষি অফিসার মাজেদুল ইসলাম জানান, এই বিপুল পরিমাণ উৎপাদন অন্য কোনো কুমড়ো জাতীয় ফসলে সম্ভব নয় এবং যে সময়ে তিনি আবাদ করেছেন ওই সময়ে অন্য কোনো কুমড়ো আবাদও করা যায় না। এটি দেশের ক্রমবর্ধনা জনসংখ্যার সবজির চাহিদা মেটাতে বিরাট ভূমিকা রাখবে। তবে এর ফাইটোস্যানেটারি পরীক্ষা এবং রোগ জীবাণু আছে কি-না যা আমাদের অন্য ফসলের ক্ষতি করতে পারে সে বিষয়টি মাথায় রেখে কোচা চাষ সম্প্রসারণ করা গেলে কৃষি অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে আশা প্রকাশ করেন এই কৃষি কর্মকর্তা।