মুজিবনগর দিবসের আলোচনা সভায় আ.লীগের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ

২০১৯ সালের আগে নির্বাচন নয় : রাজাকারদের পাকিস্তানে পাঠানোর শপথ হোক মুজিবনগর দিবসের শপথ

 

শেখ শফি: ২০১৯ সালের আগে কোনো জাতীয় নির্বাচন নয়। আওয়ামী লীগ মানুষকে ভালোবেসে ওই নির্বাচনে আবারো ক্ষমতায় যেতে চায়। তবে এর জন্য ভাঙতে হবে ষড়যন্ত্রের বেড়াজাল। কেননা যারা দেশের স্বাধীনতাকে অস্বীকার করেছিলো তাদের ষড়যন্ত্র এখনো অব্যাহত রয়েছে। তাই মুজিবনগর দিবসের শপথ হোক দেশবিরোধী, রাজাকার-আলবদরদের পাকিস্তানে ফিরিয়ে দেয়ার শপথ। গতকাল শুক্রবার দুপুরে মেহেরপুরের মুজিবনগর আম্রকাননে মুজিবনগর দিবসের আলোচনাসভায় বক্তব্যে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ এসব কথা বলেন।

Mujiabngaor day pic_17.04.15_ (5)

মুজিবনগর দিবস পালন কমিটির সভাপতি স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিমের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তৃতা করেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা মণ্ডলীর সভাপতি শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু এমপি। বিএনপি-জামায়াতের তীব্র সমালোচনা করে প্রধান অতিথি বলেন, তারা ইসলামের দাবিদার, মুসলমান দাবিদার অথচ তারা পেট্রোলবোমা মেরে নারী-শিশুসহ অসংখ্যা মুসলমানকে হত্যা করেছে। বিশ্ব এজতেমাসহ ধর্মীয় অনুষ্ঠানের দিনেও তারা হরতাল-অবরোধ কর্মসূচি প্রত্যাহার করেনি। তারাই ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা ও ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের ভেতরে জাতীয় চার নেতাকে হত্যার মধ্যদিয়ে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও মূল্যবোধকে গলাটিপে হত্যা করতে চেয়েছিলো। তারাই আজ দেশটাকে নব্য পাকিস্তানে রূপান্তর করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। সেই অপশক্তি এখনো তৎপর। এদেশের স্বাধীনতা তারা মেনে নিতে পারেনি। তাই তারা বারবার আঘাত হানে।

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার জাতীয় নির্বাচনের দাবির সমালোচনা করে স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহা. নাসিম তার বক্তব্যে বলেন, তিনি রাজাকারদের বাঁচানোর জন্য লড়াই করে যাচ্ছেন। তিনি আন্দোলনের নামে মানুষকে পুড়িয়ে মেরেছেন। আর আমরা মানুষকে ভালোবেসে পুনরায় ক্ষমতায় যেতে চাই। নির্বাচন হবে, তবে ২০১৯ সালের আগে না। ওই নির্বাচনেও জয়লাভ করবে আওয়ামী লীগ।

একই মঞ্চে প্রধান বক্তার বক্তব্যে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এলজিআরডি মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম বলেন, মুজিবনগর সরকারই হলো বাংলাদেশের প্রথম সরকার। এ সরকারের নেতৃত্বে স্বাধীনতা যুদ্ধ পরিচালিত হয়। দেশ স্বাধীনের পর বঙ্গবন্ধু দেশে ফিরে মুজিবনগর সরকারের দায়িত্ব নিয়েছিলেন। এর কয়েক দিন পরে তিনি অধ্যাদেশ জারি করে সংসদীয় গণতন্ত্র ব্যবস্থা উপস্থাপন করেছিলেন। এরপরে যা হয়েছে তা এ সরকারের ধারাবাহিকতায়। মুজিবনগর সরকারকে নানাভাবে উপস্থাপন করা হয় উল্লেখ করে তিনি আরো বলেন, এটি অস্থায়ী সরকার ছিলো না, এটি প্রথম সরকার। বিকৃত ইতিহাস নয়, শুদ্ধ ইতিহাস জানার আহ্বান জানান তিনি।

বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানকে খুনি আখ্যায়িত করে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ বক্তৃতায় বলেন, উনি ক্ষমতায় এসে স্বাধীনতাবিরোধী সারেদুর রহমানকে প্রধানমন্ত্রী বানিয়েছিলেন। রাজাকার আব্দুল আলিমকে রেলমন্ত্রী বানিয়েছিলেন। কারাগারে আটক ১১ হাজার যুদ্ধাপরাধী রাজাকারকে তিনি মুক্ত করে দিয়েছিলেন। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া পাকিস্তানের এজেন্ট অভিযোগ করে তিনি আরো বলেন, স্বাধীনতাবিরোধী অশুভ শক্তিকে তিনি বাংলার মাটিতে প্রতিষ্ঠিত করার অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। এখনো তারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় তারা অবস্থান নিয়েছেন। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সকল অপশক্তি উৎখাত করে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার আহ্বান জানান তিনি।

একই মঞ্চে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রী আ.ক.ম মোজাম্মেল হক দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, গত বছরের মধ্যে মুজিবনগর মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতিকেন্দ্রের নির্মাণ কাজ সম্পন্নের প্রতিশ্রুতি থাকলেও তা সম্ভব হয়নি। তবে আশার কথা হলো বাকি নির্মাণ কাজ করার জন্য ছয় কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। আগামী জুনের মধ্যেই নির্মাণ কাজ শেষ করার প্রতিশ্রুতি দেন তিনি। সারাদেশে রাজাকারের তালিকা তৈরি করা হবে বলেও উল্লেখ করেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী।

আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বিএম মোজাম্মেল হকের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন- জাতীয় সংসদের হুইপ চুয়াডাঙ্গা-১ আসনের সংসদ সদস্য সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার ছেলুন, মেহেরপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মেহেরপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য অধ্যাপক ফরহাদ হোসেন দোদুল, মেহেরপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য মকবুল হোসেন, জেলা পরিষদ প্রশাসক অ্যাড. মিয়াজান আলী, মহিলা এমপি সেলিনা আখতার বানু, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এমএ খালেক ও মুজিবনগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জিয়া উদ্দীন বিশ্বাস। উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতৃবৃন্দ।

এর আগে সকাল পৌনে দশটায় দিকে অনুষ্ঠানস্থলে পৌঁছান নেতৃবৃন্দ। এ সময় মুজিবনগর আম্রকানন স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অপর্ণ করেন তারা। জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলনের আনুষ্ঠানিকতা শেষে মঞ্চে আসন গ্রহণ করেন। দশটার দিকে একই স্থানে নেতৃবৃন্দকে গার্ড অব অনার প্রদান করেন পুলিশ, আনসার ও মুক্তিযোদ্ধারা। এ সময় বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্রছাত্রীরা কুচকাওয়াজ প্রদর্শন করে। আলোচনাসভার প্রাক্কালে আনসার-ভিডিপি দলের সদস্যরা মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা ও বঙ্গবন্ধুর ভূমিকা বিষয়ক গীতিনাট্য উপস্থাপন করেন। আলোচনাসভার শুরুতে গার্ড অব অনার প্রদানকারী চার আনসার সদস্যসহ এলাকার কয়েকজন বিশিষ্ট ব্যক্তিকে মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে সম্মাননা প্রদান করা হয়। এর আগে সূর্যোদয়ের সাথে সাথে স্মৃতিসৌধে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন জেলা প্রশাসক মাহমুদ হোসেন। উপস্থিত ছিলেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার অরুন কুমার মণ্ডল। আলোচনাসভার শুরুতেই জেলা ছাড়াও পার্শ্ববর্তী জেলাগুলো থেকে মিছিল সহকারে অনুষ্ঠানস্থলে প্রবেশ করেন আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ।