স্টাফ রিপোর্টার: প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া চরম ব্যর্থ হয়ে ঘরে ফিরেছেন। তবে নাশকতা নির্মূল না হওয়া পর্যন্ত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযান অব্যাহত থাকবে। তিনি বলেন, যারা মানুষ পুড়িয়ে হত্যা করেছে, তাদের যখন যেখানে পাওয়া যাবে ব্যবস্থা নেয়া হবে। সহিংসতার হুকুমদাতা, অর্থ ও অস্ত্রের যোগানদাতা ও সরাসরি জড়িত সবার বিরুদ্ধে আইনানুগ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে।
গতকাল শুক্রবার গণভবনে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের এক সভায় সূচনা বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। তিনি আরো বলেন, যারা বিবেকবান, শিক্ষিত, সচেতন, তারা কীভাবে বিএনপি-জামায়াতকে সমর্থন দেবেন, ভোট দেবেন? শিক্ষিত-সচেতন মানুষ কখনোই যারা মানুষ পুড়িয়ে মারে তাদের সমর্থন দিতে পারেন না, ভোট দিতে পারেন না। সন্ত্রাসী ও জঙ্গিবাদী কর্মকাণ্ডে লিপ্ত বিএনপি-জামায়াতের পাশে কেউ থাকতে পারেন না।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচকে চরম সুবিধাভোগী প্রতিষ্ঠান হিসেবে আখ্যায়িত করে এবং দেশীয় ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলোর প্রশ্নবিদ্ধ কর্মকাণ্ডের সমালোচনা করে শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপি-জামায়াত আন্দোলনের নামে এতো মানুষকে পুড়িয়ে মারলো! কিন্তু মানবাধিকার সংগঠনগুলোকে কোনো কথা বলতে শুনিনি। এ সংগঠনগুলো এ ব্যাপারে নিশ্চুপ কেন? আবার ২০১৩ সালের ৫ মে হেফাজতের তাণ্ডবের সময় এসব মানবাধিকার সংগঠন দু হাজার লোক মারা গেছে বলে মিথ্যা তথ্য দিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করেছিলো। তালিকা চাইলে তারা দেড়শ জনের তালিকা দিয়েছিলো। তবে এদের অনেকেই পরে বলেছেন, তারা মারা যাননি। এসব কর্মকাণ্ডের পেছনে মানবাধিকার সংগঠনগুলোর অসৎ উদ্দেশ্য রয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, ভবিষ্যতে কেউ যাতে নাশকতা-সহিংস ঘটনা ঘটাতে না পারে সেজন্য কাউকে ছাড় দেয়া হবে না। যখন যাকে পাওয়া যাবে তখনই তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। কেননা মানুষের জানমাল রক্ষা সরকারের দায়িত্ব। এ দায়িত্ব পালনে যা যা করার তাই করা হয়েছে এবং ভবিষ্যতেও করা হবে। তিনি বলেন, সরকার উত্খাতের আন্দোলনের নামে বিএনপি-জামায়াত গত তিন মাস ধরে অমানবিক কর্মকাণ্ড চালিয়েছে। তারা মানুষ পুড়িয়ে হত্যা করেছে, দেশের সম্পদ ধ্বংস করেছে। আমরা রাজনীতি করি মানুষের কল্যাণের জন্য। সেই মানুষকে হত্যা করে এভাবে হত্যা ও মানুষের ক্ষতি করে তারা কী অর্জন করলো? তাদের আন্দোলনে কোনো জনসম্পৃক্ততাও ছিলো না।
আন্দোলনের নামে আগুনে দগ্ধ মানুষের যন্ত্রণা উপলব্ধি করতে বিএনপি-জামায়াতের প্রতি আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, একটি জ্বলন্ত মোমবাতির ওপর এক মিনিট হাত রেখে পরীক্ষা করলেই বোঝা যাবে পোড়া মানুষের যন্ত্রণা কী? যারা আগুনে পুড়ে অর্ধমৃত অবস্থায় বেঁচে আছে, তাদের সারাজীবন এ অমানুষিক যন্ত্রণা ভোগ করতে হবে। তিনি বলেন, বিএনপি-জামায়াত যেসব ঘৃণ্য কাজ করেছে, ন্যূনতম মনুষত্ব ও বিবেক থাকলে কেউই তাদের সমর্থন করতে পারে না।
খালেদা জিয়ার উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি নেত্রী তার ঘর ছেড়ে অফিসে ৬৫ জনকে নিয়ে দীর্ঘ ৯২ দিন কাটালেন। এ নোংরামির মানে কী? আর যারা সেখানে ছিলেন, তাদেরও কী ঘর-বাড়ি নেই। তারা বের হলেন না কেন? মানুষের ক্ষতি করে তারা কী অর্জনই বা করলেন? অফিসে বসে থেকে হুকুম দিয়ে তিনি নির্বিচারে মানুষ হত্যা করালেন! এতো মানুষ হত্যার দায় কে নেবে? এর জবাব একদিন তাকে দিতে হবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি-জামায়াত আপাতত ধ্বংসাত্মক ও জঙ্গিবাদী কর্মকাণ্ড থেকে বিরত থাকলেও ভবিষ্যতে আবারও এগুলো ঘটাতে পারে। এ জন্য সবাইকে সজাগ ও সতর্ক থাকতে হবে।
তৃণমূল পর্যন্ত দলকে শক্তিশালী করে গড়ে তোলার জন্য নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, দলকে তৃণমূল পর্যন্ত সুসংগঠিত করার পদক্ষেপও আমরা নিয়েছি। ইতিমধ্যে দলের অধিকাংশ তৃণমূল সম্মেলন শেষ হয়েছে। কিছু বাকি আছে। সেগুলোও দ্রুতগতিতে শেষ করা হচ্ছে। মানুষের কল্যাণে ত্যাগের মানসিকতা নিয়ে তাদের পাশে থাকার জন্যও নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রীর সূচনা বক্তব্যের পর তার সভাপতিত্বে নেতৃবৃন্দের মধ্যে রুদ্ধদ্বার বৈঠক হয়। বৈঠকে দেশের সর্বশেষ রাজনৈতিক পরিস্থিতি, তিন সিটি করপোরেশন নির্বাচন, যুদ্ধাপরাধী কামারুজ্জামানের ফাঁসির রায় কার্যকর ছাড়াও সাংগঠনিক বিষয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। বৈঠকে তিন সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দল সমর্থিত প্রার্থীর বিজয়ে বেশকিছু সুপারিশ সভানেত্রীর কাছে পেশ করেন দলটির উপদেষ্টারা। বৈঠকে অন্যান্যের মধ্যে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামসহ দলের উপদেষ্টা পরিষদের প্রায় সব সদস্য উপস্থিত ছিলেন।