স্টাফ রিপোর্টার: কমিশন সুপারিশের প্রায় ১০ শতাংশ কাটছাঁট করে চূড়ান্ত করা হয়েছে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অষ্টম বেতন কাঠামো। ফলে নতুন স্কেলে চাকরিজীবীদের বেতন সর্বোচ্চ ৯০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ছে। সর্বনিম্ন বেতন স্কেলে বেতন কমিশনের সুপারিশে কমানো হয়নি। ফলে নতুন বেতন স্কেলে কর্মচারীদের সর্বনিম্ন বেতন ৮ হাজার ২শ টাকা বহাল থাকছে। তবে বেতন কমিশনের সুপারিশে থাকা বেশ কিছু ভাতা বাদ দেয়া হয়েছে।
অষ্টম বেতন কমিশনের রিপোর্ট পর্যালোচনা কমিটি কয়েক দফা বৈঠকের পর এসব বিষয় চূড়ান্ত করেছে। আগামী এপ্রিলের প্রথম সপ্তায় ওই কমিটির পক্ষ থেকে চূড়ান্ত বেতন স্কেলের রিপোর্ট অর্থমন্ত্রীর কাছে দাখিল করা হবে। পর্যালোচনা কমিটির সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র থেকে পাওয়া গেছে এ তথ্য।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, নতুন বেতন কাঠামো আগামী পয়লা জুলাই থেকে কার্যকর করা হবে। এক্ষেত্রে একসাথে শতভাগ বেতন স্কেল বাস্তবায়ন করা হবে না। পর্যায়ক্রমে দু থেকে তিন ভাগে বাস্তবায়নের প্রস্তুতি নিচ্ছে মন্ত্রণালয়। এজন্য আগামী বাজেটেও বর্তমানের চেয়ে অতিরিক্ত ১৩ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ রাখার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। সূত্র আরও জানায়, নতুন বেতন স্কেল এপ্রিল থেকেই বাস্তবায়নের চিন্তা ছিলো সরকারের। কিন্তু চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে চলতি বাজেটে এক ধরনের চাপ তৈরি হয়েছে। যে কারণে বাস্তবায়ন পূর্বনির্ধারিত সময় অনুযায়ী পয়লা জুলাই থেকে কার্যকর করা হবে।
সরকারি চাকরিজীবীদের শতভাগ বেতন বাড়ানোর সুপারিশ করে ২১ ডিসেম্বর অষ্টম বেতন কমিশনের চেয়ারম্যান বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন অর্থমন্ত্রীর কাছে প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন। সেখানে সর্বোচ্চ ৮০ হাজার ও সর্বনিম্ন ৮ হাজার ২শ টাকা বেতন স্কেলের সুপারিশ করা হয়। ওই সুপারিশে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সচিব ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সচিবের বেতন এক লাখ টাকা এবং সিনিয়র সচিবদের বেতন ৮৮ হাজার টাকার প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। বেতন বৃদ্ধির হারের সাথে পেনশন বৃদ্ধির সুপারিশও করা হয়েছে।
কমিশনের রিপোর্ট পেয়ে সরকার একটি পর্যালোচনা কমিটি গঠন করে। পয়লা জানুয়ারি মন্ত্রিপরিষদ সচিবকে আহ্বায়ক করে পাঁচ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়। ওই সময় কমিটিকে ছয় সপ্তার মধ্যে বেতন কমিশনের প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে সুপারিশগুলো বাস্তবায়নের পদ্ধতি নিরূপণ করে সরকারের কাছে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছিলো। কমিটিতে সদস্য হিসেবে আছেন অর্থ বিভাগের সিনিয়র সচিব, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সিনিয়র সচিব, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব এবং গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব। নির্ধারিত সময়ে কমিটি বেতন কাঠামো চূড়ান্ত করতে পারেনি। ফলে পরবর্তী সময়ে আরও এক মাস কমিটির মেয়াদ বাড়ানো হয়।
ওই কমিটি সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বেতন কমিশনের রিপোর্ট পর্যালোচনা করে একটি চূড়ান্ত পর্যায়ে নেয়া হয়েছে। বেতন কমিশনের সুপারিশ থেকে গড়ে ১০ শতাংশ কাটছাঁট করা হয়েছে। তবে কমিশনের সুপারিশের কোনো ক্ষেত্রে ১০ শতাংশের বেশি কমানো হচ্ছে না। সূত্র আরও জানায়, বেতন কমিশনের সুপারিশে থাকা কয়েক ধরনের ভাতা বাদ দেয়া হয়েছে।
পে-কমিশন বেতন কাঠামোয় ২০টির পরিবর্তে ১৬টি গ্রেডের সুপারিশ করেছে। এতে বর্তমান ৮ম ও ৯ম গ্রেডকে একীভূত করে নতুন ৮ম গ্রেডের বেতন ধরা হয়েছে। একইভাবে বর্তমান ১২ ও ১৩ নম্বর গ্রেড এক করে নতুন ১১তম গ্রেড নির্ধারণ করা হয়। বর্তমান স্কেলের ১৭ ও ১৮ নম্বর গ্রেড একীভূত করে নতুন ১৫ নম্বর গ্রেড নির্ধারণ এবং বর্তমান ১৯ ও ২০ নং গ্রেড এক করে নতুন ১৬ নম্বর গ্রেড তৈরির সুপারিশ এসেছে। পর্যালোচনা কমিটি ১৬টি গ্রেড ঠিক রেখেছে।
জানা গেছে, চলমান বেতন স্কেল বাস্তবায়নের সময় কিছুটা কাটছাঁট করা হয়েছিলো। ২০০৯ সালে সর্বনিম্ন বেতন চার হাজার টাকা এবং সর্বোচ্চ বেতন ৪৫ হাজার টাকা নির্ধারণ করে বেতন কমিশন সুপারিশ করেছিলো। ওই কমিশনের চেয়ারম্যান ছিলেন সাবেক সচিব এম মুস্তাফিজুর রহমান। শেষ পর্যন্ত কমিশনের ওই সুপারিশ থেকে সর্বোচ্চ বেতন ৪০ হাজার টাকা এবং সর্বনিম্ন বেতন চার হাজার একশ টাকা নির্ধারণ করে তৎকালীন পর্যালোচনা কমিটি। ৬ষ্ঠ বেতন কাঠামোতে বেতন কমিশন সুপারিশ করে সর্বনিম্ন বেতন দু হাজার ৮০০ টাকা এবং সর্বোচ্চ বেতন ২৭ হাজার ৫০০ টাকার সুপারিশ করে। কিন্তু পর্যালোচনা কমিটি সর্বনিম্ন বেতন ২৪শ টাকা এবং সর্বোচ্চ বেতন ২৩ হাজার টাকা নির্ধারণ করে চূড়ান্ত করেছে। একইভাবে পঞ্চম জাতীয় বেতন কমিশনে সর্বনিম্ন বেতন ১৮শ টাকা এবং সর্বোচ্চ বেতন ১৮ হাজার টাকা নির্ধারণের সুপারিশ করে। কিন্তু পর্যালোচনা কমিটি সে সুপারিশ কাটছাঁট করে সর্বনিম্ন বেতন ১৫শ টাকা এবং সর্বোচ্চ বেতন ১৫ হাজার টাকা নির্ধারণ করেছে।