স্টাফ রিপোর্টার: জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি মুনের চিঠির জবাব দিয়েছে বিএনপি। দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া চিঠির জবাবে লিখেছেন, ২০ দলীয় জোট মনে করে, সংলাপের মাধ্যমে নতুন নির্বাচনই সংকটের সমাধান করতে পারে। চিঠিতে সংকট নিরসনে সংলাপে বসার ইচ্ছা ব্যক্ত করে বিএনপি চেয়ারপারসন এ ব্যাপারে সরকারি দলের নেতিবাচক মন্তব্যের কথাও তুলে ধরেছেন বলে সূত্র জানিয়েছে।
গতকাল শুক্রবার রাতে এ তথ্য জানিয়েছেন বিএনপির সিনিয়র এক নেতা। ওই নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, বিএনপির কূটনৈতিক বিষয় দেখভাল করেন দলের জাতীয় স্থায়ী কমিটির এমন এক নেতা খালেদা জিয়ার ওই চিঠি গেল সপ্তাহে পৌঁছে দিয়েছেন। চিঠিটি বাংলাদেশে জাতিসংঘের আবাসিক প্রতিনিধির কার্যালয়ে পৌঁছে দেয়ার পর তা নিউইয়র্কে জাতিসংঘের মহাসচিবের কার্যালয়ে পাঠানো হবে বলে তিনি জানিয়েছেন। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, খালেদা জিয়ার কাছে যে চিঠি এসেছিলো তা বাংলাদেশে নিযুক্ত জাতিসংঘের আবাসিক প্রতিনিধির কার্যালয় থেকেই এসেছিলো। তাই চিঠিটি সেখানেই পৌঁছে দেয়া হয়েছে।
চিঠির বিষয়বস্তু বিস্তারিত জানতে চাইলে তিনি অপারগতা প্রকাশ করেন। তবে তিনি জানান, খালেদা জিয়া চিঠির জবাবে স্পষ্ট করে জানিয়ে দিয়েছেন, ২০ দলীয় জোট মনে করে, সংলাপের মাধ্যমে নতুন নির্বাচনই চলমান সংকট সমাধান করতে পারে। এ ছাড়া বান কি মুন চিঠি দেওয়ার পর সরকারের তরফ থেকে যে ধরনের বক্তব্য প্রকাশ করা হয়েছে তাও বিএনপির চিঠিতে তুলে ধরা হয়েছে।
এদিকে বিএনপির নীতিনির্ধারণী সূত্রে জানা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানরত বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ড. ওসমান ফারুকের সঙ্গে জাতিসংঘের এক কর্মকর্তার বৈঠক হয়েছে। সেখানে বাংলাদেশে বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের অবস্থান, বিএনপির চিঠির জবাব এবং যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো এবং ইউরোপীয় পার্লামেন্টের শুনানির বিষয়ে আলোচনা হয়। ওই সময় বিএনপি নেতা তাঁর দলের সংলাপে বসার বিষয়টি পুনর্ব্যক্ত করে বলেন, সংলাপে বসতে তাদের আপত্তি নেই।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ড. ওসমান ফারুকের মোবাইলফোন বন্ধ পাওয়া গেছে। আর বিএনপি চেয়ারপারসনের প্রেসসচিব মারুফ কামাল খান সোহেল কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জে. (অব.) মাহবুবুর রহমান কালের কণ্ঠকে বলেন, চিঠি পৌঁছে দেয়া হয়েছে কি না তা খোঁজ নিয়ে বলতে হবে। প্রায় এক মাস যেহেতু হয়ে গেছে, সেহেতু চিঠির জবাব তো দিয়ে দেওয়া উচিত। বান কি মুন একজন অভিভাবকের মতো। তাঁকে সম্মান দেখিয়ে চিঠির জবাব প্রধানমন্ত্রী ও আমাদের নেত্রীর অবশ্যই দেয়া উচিত।
প্রসঙ্গত, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে চিঠি দেওয়ার বিষয়টি প্রকাশ হয় গত ১৭ ফেব্রুয়ারি, যদিও চিঠিটি জাতিসংঘ থেকে এর প্রায় দুই সপ্তাহ আগে পাঠানো হয়। ওই চিঠিতে চলমান সহিংস রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন সংলাপে বসার আহ্বান জানান বান কি মুন।
যুক্তরাষ্ট্র থেকে যুক্ত বিবৃতি : এদিকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে গণমাধ্যমে পাঠানো এক যুক্ত বিবৃতিতে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সাদেক হোসেন খোকা ও চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ড. এম ওসমান ফারুক বলেছেন, জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত আন্দোলনের মুখে সরকারকে ক্ষমতা ছেড়ে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন দিতে হবে। তা না করে কোনো ছলচাতুরি কিংবা কূটকৌশলের আশ্রয় নিলে শেষ পর্যন্ত তাদের করুণ পরিণতি ডেকে আনবে; গণবিচ্ছিন্ন এই সরকারকে এক ভয়াবহ বিদায়ী দৃশ্যপটের মুখোমুখি করবে। বিবৃতিতে বলা হয়, দেশজুড়ে চলমান গণআন্দোলনের মুখে পতনোন্মুখ অবৈধ সরকার বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে আন্দোলন থেকে নিষ্ক্রিয় করার অপকৌশল হিসেবে সাজানো মামলায় গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছে; আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে নগ্নভাবে ব্যবহারের মাধ্যমে বর্বরোচিত কায়দায় বিরোধী নেতা-কর্মীদের হত্যা, গ্রেফতার ও নির্যাতনের পথ বেছে নিয়েছে। কিন্তু এভাবে সরকার বেশি দিন ক্ষমতায় টিকে থাকতে পারবে না।