স্টাফ রিপোর্টার: কাল এসএসসি পরীক্ষা শুরু। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সব প্রস্তুতি শেষ। পর্যাপ্ত নিরাপত্তা দেবে এমন ঘোষণা পুলিশ-ৱ্যাব ও বিজিবি প্রধানদের। শিক্ষামন্ত্রীও বলছেন, আমরা কেন পরীক্ষা পেছাবো। বিএনপি হরতাল প্রত্যাহার করছে না কেন। অন্যদিকে হরতাল অবরোধ প্রত্যাহারের কোন সম্ভাবনাও দেখছেন না অভিভাবকরা।
হরতাল ও অবরোধ প্রত্যাহার না হওয়া এবং সরকারিভাবে পরীক্ষা পেছানোর সিদ্ধান্ত না আসায় এখনও অভিভাবক-শিক্ষার্থীরা উদ্বিগ্ন। মন্ত্রণালয়ের সচিব নজরুল ইসলাম খান এর আগে গণমাধ্যমকে বলেছেন, পরীক্ষার বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানানো হবে ১ ফেব্রুয়ারি।
মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র বলছে, যতো প্রস্তুতিই থাকুক, হরতাল থাকলে পরীক্ষা হবে না। হরতালের দিনগুলোর পরীক্ষা পেছিয়ে দেয়া হবে। তবে অবরোধের দিনগুলোতে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। কৌশলগত কারণে আগেভাগেই এ সিদ্ধান্ত জানানো হচ্ছে না। হরতাল অবরোধ প্রত্যাহারে জনসমর্থন তৈরির জন্যই এমনটি করছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। গতকাল রাতে শিক্ষামন্ত্রী নূরুল ইসলাম নাহিদ জানান, আমরা চাইছি, অন্তত পরীক্ষার দিনগুলোতে হরতাল অবরোধ প্রত্যাহার করুন।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, আমরা কেন পরীক্ষা পিছাবো। তারা (বিএনপি ও শরিক দল) হরতাল অবরোধ প্রত্যাহার করুক। তিনি আরো বলেন, আমরা কেন এত আগে বলব। সারাদেশে হরতাল প্রত্যাহারের দাবিতে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন হচ্ছে। সব মিডিয়ায় এমন খবর প্রচার হচ্ছে। এগুলো আমাদের পক্ষে যাচ্ছে। রোববার সময় তো আছে। এই সময়ের মধ্যেই তো হরতাল অবরোধ প্রত্যাহার হতে পারে। আশা করছি, তারা তা করবেন।
অভিভাবকদের বক্তব্য, পরীক্ষার সময় হরতাল চাই না, হরতালে পরীক্ষা চাই না। গতকাল দিনভরই আলোচনা ছিল পরীক্ষা নিয়ে। হরতাল প্রত্যাহারের দাবিতে বিভিন্ন সংগঠন মানববন্ধন কর্মসূচি, স্মারকলিপি প্রদানসহ নানা কর্মসূচি পালন করেছে। শিক্ষার্থীদের নিয়ে গুলশানের বিএনপি কার্যালয়ের সামনে মানববন্ধন করেছেন রাজধানীর একটি স্কুলের প্রধান শিক্ষক ও গভর্নিং বডি। অভিভাবকরা মিলে একটি স্মারকলিপিও বিএনপি চেয়ারপারসনের কাছে পাঠিয়েছেন। এছাড়া দেশের বিভিন্ন স্থানে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছে শিক্ষার্থীরা। ভীতি মুক্ত পরীক্ষার দাবিতে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন করেছে সরকারি মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতি।
অভিভাবক ঐক্য ফোরামের সভাপতি জিয়াউল কবির দুলু বলেন, চলমান পরিস্থিতি রাজনৈতিক সংকট। ক্ষমতায় থাকা ও যাওয়ার লড়াইয়ের বলি আমরা হব কেন ? গণতন্ত্রের কেন্দ্রে রয়েছে মানুষ। গণতন্ত্রের জয় পরাজয় নেই। আছে জনগণের স্বার্থে সমঝোতার বিষয়। সন্তানদের ভবিষ্যত্ নষ্ট করবেন না। পরীক্ষা দেয়ার পরিবেশ সৃষ্টি করুন।
কাল অনুষ্ঠিতব্য মাধ্যমিক (এসএসসি) ও সমমানের পরীক্ষায় এবার মোট ১৪ লাখ ৭৯ হাজার ২৬৬ জন শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করবে। বিদেশের ৮টি কেন্দ্রসহ ২৭ হাজার ৮০৮টি প্রতিষ্ঠানের ৩ হাজার ১১৬টি কেন্দ্রে এ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রস্তুতি: এসএসসি পরীক্ষার্থীদের যৌথ নিরাপত্তা প্রদানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে পুলিশ। বিজিবি, ৱ্যাব, পুলিশ ও আনসারবাহিনীর সমন্বয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী শিক্ষার্থীদের এসকর্ট করে পরীক্ষার হলে আনা-নেয়া করবে এবং পরীক্ষার হলে সার্বিক নিরাপত্তা দেবে বলে জানিয়েছেন পুলিশের আইজি একেএম শহীদুল হক। পুলিশ সদর দফতরে গতকাল শনিবার এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ সব কথা বলেন।
আইজিপি বলেন, এসএসসি পরীক্ষায় সার্বিক নিরাপত্তা দেবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। বিজিবি, ৱ্যাব, পুলিশ ও আনসার বাহিনী এসকর্ট করে শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার হলে আনা নেয়া করবে। তবে এক্ষেত্রে জনে জনে আনা নেয়া করা সম্ভব হবে না। দলবদ্ধভাবে পরীক্ষার্থীদের আনা-নেয়া করা হবে। বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট আহূত হরতাল ও অবরোধে ২ ফ্রেরুয়ারি থেকে শুরু হওয়া এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে গতকাল সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভা শেষে সাংবাদিকদের সাথে কথা বলেন আইজিপি। সভায় বিজিবির মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আজিজ আহমেদ, আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা দলের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোঃ নাজিমুদ্দীন ও উপ-মহাপরিচালক মো. মিজানুর রহমান, এসবির অতিরিক্ত আইজিপি ড. মো. জাবেদ পাটোয়ারী, ৱ্যাবের মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
কারিগরি বোর্ডের পরীক্ষা স্থগিত: বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষাবোর্ডের ৪ বছর মেয়াদি ডিপ্লোমা ইন ইঞ্জিনিয়ারিং ও ২ বছর মেয়াদি সার্টিফিকেট ইন মেরিন ট্রেড শিক্ষাক্রমের ১ ও ৩ ফেব্রুয়ারি এবং ডিপ্লোমা ইন টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিঙের ১, ২ ও ৩ ফেব্রুয়ারির পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে। বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক ড. মো. রফিকুল ইসলাম মীরের সই করা অফিস আদেশে এসব পরীক্ষা স্থগিতের কথা জানানো হয়।