সর্বনিম্ন ৮২০০ সর্বোচ্চ ৮০ হাজার টাকা বেতনের সুপারিশ : অর্থমন্ত্রী বললেন- জুলাই থেকে কার্যকর
স্টাফ রিপোর্টার: সর্বনিম্ন ধাপের মূল বেতন ৮ হাজার ২০০ টাকা আর সর্বোচ্চ ধাপে ৮০ হাজার টাকা সুপারিশ করে পে-কমিশনের প্রতিবেদন গতকাল রোববার অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিতের কাছে তুলে দেন জাতীয় বেতন ও চাকরি কমিশনের চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন। অর্থ মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন পেশ করার আগে তিনি সাংবাদিকদের জানান, প্রস্তাবিত অষ্টম বেতন কাঠামোতে বর্তমানের ২০টির জায়গায় ১৬টি গ্রেড রাখা হয়েছে। বেতন বৃদ্ধির সুপারিশকালে পরিবারের সংজ্ঞা, বিগত ৬ বছরের পুঞ্জীভূত মূল্যস্ফীতি, চার সদস্যের পরিবর্তে ৬ সদস্যের পরিবারের ভিত্তি, অন্যান্য প্রতিবেশী দেশের বেতনাদির অবস্থা বিবেচনায় নেয়া হয়েছে।
সর্বনিম্ন মূল বেতন সুপারিশ করা হয়েছে মাসে ৮ হাজার ২০০ টাকা, যা সপ্তম বেতন কাঠামোর ৪ হাজার ১০০ টাকা বা শতভাগ বেশি। সর্বোচ্চ ধাপে বিশেষ বেতনক্রম নির্ধারণ করা হয়েছে। বেতনক্রম গ্রেড-১ এর কর্মকর্তাদের জন্য মূল বেতন সুপারিশ করা হয়েছে ৮০ হাজার টাকা, যা বর্তমানের ৪০ হাজার টাকার তুলনায় শতভাগ বেশি।
পে-কমিশনের সুপারিশের বিষয়ে জানা যায়, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সচিব ও মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিবের মূল বেতন ৪৫ হাজারের পরিবর্তে সুপারিশ করা হচ্ছে নির্ধারিত এক লাখ টাকা। সিনিয়র সচিবের জন্য মূল বেতন ধরা হয়েছে ৮৮ হাজার টাকা। আর সচিবের মূল বেতন ধরা হয়েছে ৮৪ হাজার টাকা। ক্যাডার সার্ভিসের কর্মকর্তাদের চাকরিতে প্রবেশের সময় মূল বেতন ১১ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ২৫ হাজার টাকা করার সুপারিশ করা হয়েছে। এছাড়া আগের ২০টি ধাপের মূল বেতনক্রম কমিয়ে এখন যে ১৬টি ক্রম নির্ধারণ করা হয়েছে তা হলো- ২নং গ্রেড ৭০ হাজার টাকা, ৩নং গ্রেড ৬০ হাজার টাকা, ৪নং গ্রেড ৫২ হাজার টাকা, ৫নং গ্রেড ৪৫ হাজার টাকা, ৬নং গ্রেড ৩৭ হাজার টাকা, ৭নং গ্রেড ৩২ হাজার টাকা।
যে তারিখেই চাকরিতে যোগদান করুন না কেন, সব সরকারি চাকরিজীবীকে প্রতি বছরের ১ জুলাই মূল বেতনের ৫ শতাংশ হারে বার্ষিক ইনক্রিমেন্ট দেয়ার সুপারিশ রয়েছে। সুপারিশে সরকারি চাকরিতে যোগদানের শুরুতেই চাকরিজীবীদের একটি স্থিতি ভাতা দেয়ার সুপারিশ রয়েছে। পাশাপাশি লোকসানি প্রতিষ্ঠানগুলোকে বিরাষ্ট্রীয়করণ এবং যেসব প্রতিষ্ঠান লাভজনক ও নিজেদের আয়-ব্যয় নির্বাহের পাশাপাশি জনবলের বেতন-ভাতা দিতে সক্ষম তাদের জন্য আলাদা বেতন কাঠামোর সুপারিশও রয়েছে প্রতিবেদনে। নতুন বেতন স্কেল কার্যকর হওয়ার তারিখে যারা উচ্চতর বেতন স্কেলের পদে পদোন্নতি পাবেন তাদের বেতন প্রথমে নিম্নপদে নির্ধারণের পর পদোন্নতিপ্রাপ্ত পদে প্রচলিত নিয়মানুযায়ী নির্ধারণ করা হবে।
প্রায় ৩০০ পৃষ্ঠার প্রতিবেদনে সিভিল সার্ভিস-বিসিএস পরীক্ষার মাধ্যমে নিয়োগপ্রাপ্ত সরকারি প্রথম শ্রেণির গেজেটেড কর্মকর্তাদের বিদ্যমান কাঠামোর ৯ নম্বর গ্রেড থেকে প্রস্তাবিত কাঠামোতে ৮ নম্বর গ্রেডে নিয়ে আসার প্রস্তাব করা হয়েছে। এছাড়া কমিশন কর্মকর্তাদের জন্য বাড়ি ভাড়ার হার ৪টি ধাপে পুনর্নির্ধারণের সুপারিশ করেছে। এখন তিনটি ধাপে বাড়ি ভাড়ার প্রচলন রয়েছে। সুপারিশ অনুযায়ী রাজধানী, বিভাগীয় শহর, জেলা শহর ও উপজেলা শহরের জন্য ভিন্ন ভিন্ন বাড়ি ভাড়া প্রদানের কথা বলা হয়েছে। সকল সরকারি কর্মচারীর জন্য স্বাস্থ্য বীমা চালুর সুপারিশ করা হয়েছে কমিশনের প্রতিবেদনে। এই স্বাস্থ্য বীমার জন্য বীমার প্রিমিয়াম সরকারি তহবিল থেকে দেয়ারও সুপারিশ রয়েছে।
মূল্যস্ফীতি বাড়বে না: প্রস্তাবিত অষ্টম বেতন কাঠামো আগামী ১ জুলাই থেকে কার্যকর হবে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত। একই সাথে নতুন বেতন কাঠামো কার্যকর হলে মূল্যস্ফীতির সম্ভাবনা নাকচ করে দিয়ে অর্থমন্ত্রী বলেছেন, আমাদের অর্থের কোনো সঙ্কট নেই। নতুন বেতন কাঠামো বাস্তবায়নের জন্য মন্ত্রিসভার অনুমোদন নিয়ে একটি কমিটি গঠন করা হবে। আগামীদিনের অর্থনীতি হবে আলাদা ধরনের অর্থনীতি। অর্থমন্ত্রী জানান, কমিশন নতুন বেতন কাঠামোর পাশাপাশি প্রশাসনিক কিছু সংস্কারের প্রস্তাব দিয়েছে। এসব সুপারিশ পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়ন করতে বলা হয়েছে। তিনি বলেন, ২০০৯ সালের অর্থনীতির সাথে বর্তমান অর্থনীতির কোনো রকম মিল নেই। অর্থনীতি অনেক এগিয়েছে। এজন্য প্রশাসনকে দক্ষ ও গতিশীল করা দরকার। আবার প্রশাসনের সন্তুষ্টিও দরকার। আগামী (২০১৫-১৬) অর্থবছর (১ জুলাই) থেকে অষ্টম বেতন কাঠামো বাস্তবায়ন শুরু হবে। এজন্য সরকারের খরচ বাড়বে ৬৩ দশমিক ৭ শতাংশ। এ জন্য সরকারের কাছে প্রয়োজনীয় অর্থ আছে।
প্রতিবেদনের বিষয়ে ড. ফরাসউদ্দিন গতকাল সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, বর্তমানের অষ্টম ও নবম গ্রেড একীভূত করে অষ্টম গ্রেড করা হয়েছে। এই গ্রেডের বেতন ২৫ হাজার টাকা। এটি করা হয়েছে কারণ যে, মেধারীরা যাতে আকৃষ্ট হয়, তারা যেন চাকরিতে থাকার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে। তিনি বলেন, সর্বোচ্চ স্কেলে যারা সচিব হিসেবে দায়িত্বপ্রাপ্ত, তাদের নীতি-নির্ধারণী ও সমন্বয়ের কাজে অতিরিক্ত দায়িত্ব পালনের স্বীকৃতিস্বরূপ ৫ ভাগ হারে অর্থাত চার হাজার টাকা অতিরিক্ত বেতন দেয়ার প্রস্তাব রাখা হয়েছে। কমিশনের চেয়ারম্যান বলেন, সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন বেতনের অনুপাত রাখা হয়েছে ১ দশমিক ৯০৭৬ শতাংশ, যা গত কয়েকটি কমিশন একইভাবে রেখেছে। ২০০৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত পুঞ্জীভূত মূল্যস্ফীতির পরিমাণ ৬৩ শতাংশ। তিনি বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের জন্য আলাদা বেতন কাঠামো করা যেতে পারে। তবে সেক্ষেত্রে জাতীয় বেতন কাঠামোর ধাপগুলো যেন বজায় রাখা হয় সেটি সরকার বিবেচনা করবে।