বন্ধের ক্যাম্পাস ইবি : ৬ মাসে ৪০ ক্লাস : পরীক্ষা স্থগিত দেড় শতাধিক

ইবি প্রতিনিধি: কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) বন্ধ অবস্থা যেন থামছে না। যেকোনো ঠুনকো অজুহাতে ঘনঘন ক্যাম্পাস বন্ধ করে দিচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এক বন্ধ শেষে কিছুদিন ক্লাস পরীক্ষা চলেই আবার বন্ধ হয়ে যাচ্ছে ক্যাম্পাস। এভাবে রোববার ক্যাম্পাস বন্ধ হওয়ায় শিক্ষার্থীদের একাডেমিক কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। বাড়ছে সেশনজট। যথাসময়ে অনার্স-মাস্টার্স শেষ করতে না পেরে শিক্ষার্থীদের মধ্যে হতাশা বাড়ছে। হিসেব করে দেখা গেছে, গত ৬ মাসে ক্লাস হয়েছে মাত্র ৪০ দিন। পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে প্রায় দেড় শতাধিক।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, চলতি বছরের জুলাই মাস থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ছয় মাসে মাত্র ৪০ দিন ক্লাস-পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে। জুলাই মাস পুরোটা ও আগস্ট মাসের পয়লা সপ্তা কেটেছে রমজান এবং ঈদুল ফিতরের ছুটিতে। ঈদের পর ৭ আগস্ট বিশ্ববিদ্যালয় খুললেও ২৪ আগস্ট পুলিশ-ছাত্রলীগের সংঘর্ষকে কেন্দ্র করে আবার ১৫ দিনের জন্য ক্যাম্পাস বন্ধ ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ। বন্ধ শেষে ৯ আগস্ট ক্যাম্পাস খুলে দেয়া হয়; কিন্তু টানা ৫ দিন কোনো ক্লাস-পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়নি। ২৮ সেপ্টেম্বর থেকে ১৫ অক্টোবর পর্যন্ত ছিলো ঈদুল আযহা ও দুর্গাপূজার ছুটি। আবার ৩০ অক্টোবর থেকে ৬ নভেম্বর পর্যন্ত টানা ৬ দিন বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস পরীক্ষা বন্ধ ছিলো জামায়াতের হরতালের কারণে। এছাড়া চাকরি প্রত্যাশী ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা পরিবহন চলাচলে বাধা দেয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস পরীক্ষা কিছু দিন বন্ধ ছিলো। সম্প্রতি গত ৩০ নভেম্বর বাস চাপায় বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্র নিহতের ঘটনায় ক্যাম্পাস অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ রয়েছে। ঘটনার ১৭ দিন পেরিয়ে গেলেও ক্যাম্পাস খোলার কোনো উদ্যোগ নেই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের। জানা গেছে, ৩০ নভেম্বর ছাত্র নিহতের জের ধরে বাসে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় ক্ষতিপূরণের বিষয়ে বাস মালিকদের সাথে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের এখনও পর্যন্ত কোনো সমঝোতা না হওয়ায় ক্যাম্পাস বন্ধ রয়েছে। ক্ষতিপূরণের বিষয়ে সমঝোতা হলেই ক্যাম্পাস খুলে দেয়া হবে। হিসেব করে দেখা গেছে, গত ৬ মাসে আবাসিক হল বন্ধ ছিলো ৯৬ দিন। ক্লাস পরীক্ষা বন্ধ ছিলো ১২৭ দিন। ক্লাস পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে মাত্র ৪২ দিন। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যালেন্ডার অনুযায়ী, চলতি বছরের জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত নির্ধারিত ছুটি ছিলো ৮৮ দিন। নির্ধারিত ছুটি ছাড়াও আন্দোলন, হরতাল, ধর্মঘট ও সংঘর্ষের কারণে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ছিলো ৩৯ দিন (চলতি মাসের ২৪ তারিখ পর্যন্ত অনির্ধারিত বন্ধ ধরে)।

পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অফিস সূত্র মতে, বিশ্ববিদ্যালয় অনাকাঙ্ক্ষিত বন্ধের কারণে গত ৬ মাসে প্রায় দেড় শতাধিক চূড়ান্ত পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে। শুধু চলতি মাসেই স্থগিত করা হয়েছে ৮২টি পরীক্ষা। সামনের জানুয়ারিতে ক্যাম্পাস না খুললে আরও অর্ধশত পরীক্ষা স্থগিত হবে বলে অফিস জানিয়েছে। অন্যদিকে ঘনঘন ক্যাম্পাস বন্ধ হওয়ায় ক্লাস পরীক্ষাসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। সেশনজট বেড়েই চলেছে। বিভাগ ভেদে দু থেকে তিন বছরের সেশনজট বিরাজ করছে। যথাসময়ে অনার্স-মাস্টার্স সম্পন্ন করতে না পারায় শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এসব কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৪ হাজার শিক্ষার্থীরা চরম হতাশায় ভুগছেন। আইন বিভাগের শেষ বর্ষের ছাত্রী আনিকা তাবাসসুম শাম্মী বলেন, ঘনঘন বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ হওয়ায় একদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি যেমন চরমভাবে ক্ষুণ্ণ হচ্ছে তেমনি সাধারণ শিক্ষার্থীদেরকেও বিভিন্ন প্রশ্নবানে জর্জরিত হতে হচ্ছে। এছাড়া সেশনজট সমস্যাতো রয়েছেই। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের উচিত দ্রুত ক্যাম্পাস খুলে দিয়ে শিক্ষার স্বাভাবিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনা।

বাংলা বিভাগের ছাত্র সাজ্জাদ হোসেন বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের অচলাবস্থার জন্য যতোটা না পলিটিক্স দায়ী তারচেয়ে বেশি দায়ী বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের ব্যর্থতা। যেকোনো ঠুনকো অজুহাতে ক্যাম্পাস বন্ধ করে দিয়ে উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা প্রবণতা প্রশাসনের মধ্যে বরাবরই কাজ করে। ক্যাম্পাস খোলা রেখে পরিস্থিতি মোকাবেলা করার চেষ্টা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কখনই করে না। বিশ্ববিদ্যালয়ের অচলাবস্থার জন্য প্রশাসনই দায়ী।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আবদুল হাকিম সরকার বলেন, আমাদের দুর্ভাগ্য যে, একের পর এক নতুন নতুন উদ্ভূত পরিস্থিতির সম্মুখিন হতে হচ্ছে। অনেক সময় সামান্য বিষয়েও তুলকালাম শুরু হয়। এসব পরিস্থিতির কারণে শিক্ষার্থীদের ক্ষতি হবে ভেবেও বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ না করে দিয়ে উপায় থাকে না। তবে সত্য যে শিক্ষার জন্য যে অনুকূল পরিবেশ দরকার তা আমরা ঠিকমতো পাচ্ছি না। আমি মনে করি, বিশ্ববিদ্যালয়ের এ অবস্থার জন্য যতোটুকু দায়ী শিক্ষার্থীরা তারচেয়ে বেশি দায়ী কিছু দুষ্কৃতীকারী ও এখানকার পরিবেশ।

Leave a comment