স্টাফ রিপোর্টার: সমুদ্রপথে পাচার ও চোরাচালানের জন্য ব্যবহৃত নৌযানে করে ২০১৪ সালে প্রায় ৫৩ হাজার মানুষ বাংলাদেশ ও মিয়ানমার থেকে থাইল্যান্ড এবং মালয়েশিয়ায় পাড়ি জমিয়েছেন। আর বঙ্গোপসাগর ও আন্দামান সমুদ্রপথে পাড়ি দিতে গিয়ে নির্যাতন ও অনাহারে প্রাণ হারিয়েছেন ৫৪০ জন। জাতিসংঘ শরণার্থী সংস্থার (ইউএনএইচসিআর) এক প্রতিবেদনে এ কথা বলা হয়েছে।
শুক্রবার প্রকাশিত প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, সমুদ্রপথে সহিংসতা সত্ত্বেও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অনেক মানুষ পাচারকারীদের নৌযানে করে পাড়ি দিতে জীবনের ঝুঁকি নিচ্ছেন। প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, রোহিঙ্গা মুসলমানরা মিয়ানমারের সাম্প্রদায়িক সহিংসতা এড়াতে ও বাংলাদেশে অনিশ্চিত ভবিষ্যতের কথা ভেবে থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়ায় পালাচ্ছেন। ২০১২ সালের জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত ১ লাখ ২০ হাজার মানুষ সমুদ্রপথে মালয়েশিয়া ও থাইল্যান্ডের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেছে বলে মনে করা হচ্ছে। যাদের বেশির ভাগই হলো মিয়ানমারের সংখ্যালঘু মুসলিম। শুধু গত ২ মাসেই ২১ হাজার মানুষ সমুদ্রপথে বাংলাদেশ ও মিয়ানমার ছেড়েছে। ২০১৩ সালের অক্টোবর ও নভেম্বর মাসের তুলনায় এ হার শতকরা ৩৭ শতাংশ বেশি। মানবাধিকার কর্মীরা বলছেন, মিয়ানমারে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার কারণে গত দু বছরে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়া মানুষের সংখ্যা বেড়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, সমুদ্রপথে যাওয়ার সময় কয়েকজন ধর্ষণের শিকার হয়েছেন আবার অনেকেই জানিয়েছেন তারা পাচার হয়েছেন। যে বোটগুলোতে তারা সমুদ্র পাড়ি দেন, সেগুলোর অবস্থাও জরাজীর্ণ। একই সাথে দীর্ঘ যাত্রাপথে প্রয়োজনীয় পানি ও খাবারের তীব্র সঙ্কটও রয়েছে। উপকূল থেকে অতিরিক্ত আরোহী নৌকায় ওঠানোর জন্য কোন কোন ক্ষেত্রে আদম পাচারকারীরা দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করে। তাতে কয়েক সপ্তাহও পার হয়ে যায়।
সমুদ্র পথে পাড়ি দিয়েছেন এমন মানুষের সাথে কথা বলে ইউএনএইচসিআর জানতে পেরেছে, বঙ্গোপসাগর ও আন্দামান সাগরের সমুদ্রপথে ৫৪০ জন আরোহী মারা গেছে। অনেকে ক্রুদের নিযাতনে অসুস্থ হয়ে, খাদ্য পানির অভাবে আবার অনেকে বেপরোয়া হয়ে সাগরে ঝাঁপ দিয়ে মারা গেছে। গন্তব্যে পৌঁছানোর পরও অনেক কিছু তাদের জন্য সুখকর হয় না। থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়ায় পৌঁছানোর পর শত শত মানুষকে গ্রেফতার করেছে দেশ দুইটির কর্তৃপক্ষ। গ্রেফতারকৃতদের কেউ কেউ শরণার্থীর মর্যাদা দাবি করছে এবং কাউকে নিজ দেশে ফেরত পাঠানো হচ্ছে। আবার অনেকে অস্ট্রেলিয়া কিংবা ইন্দোনেশিয়ার উদ্দেশে সমুদ্রপথে তাদের যাত্রা অব্যাহত রাখছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, যাত্রা করার আগে পাচারকারীরা সামান্য অর্থ দাবি করে থাকে। কিন্তু যাত্রীদের পরিবারগুলো যতক্ষণ পর্যন্ত বেশি অর্থ না দেয় ততক্ষণ তাদের মুক্তি দিতে অস্বীকৃতি জানানো হয়। অনেক সময় তাদেরকে নিষ্ঠুর বন্দি শিবিরে মাসের পর মাস আটকে রাখা হয়। আদম পাচারকারীরা প্রত্যেকের জন্য মাথাপিছু ১ হাজার ৬শ থেকে ২৪শ ডলার নেয়।