জীবননগরে অধিকাংশ ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোতে নিয়মনীতির তোয়াক্কা নেই :চিকিৎসার নামে চলছে প্রতারণা

সালাউদ্দীন কাজল: জীবননগর উপজেলায় এক শ্রেণির অসাধু ব্যক্তি সেবার নামে ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার খুলে চিকিৎসার নামে রোগীদের সাথে প্রতারণা করে চলেছে। রেজিস্ট্রেশন প্রাপ্তির ক্ষেত্রে যে সকল শর্ত মানার কথা তার কিছুই মানা হচ্ছে না এসব ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোতে। অভিযোগ রয়েছে, সিভিল সার্জন অফিসের সবুজ সঙ্কেতে এ সকল ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোর মালিকরা অবাধে তাদের অবৈধ ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চলতি বছরে জীবননগর উপজেলার অধিকাংশ ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের রেজিস্ট্রেশন নবায়ন করা নেই। তারপরও অদৃশ্যশক্তির বলে ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার মালিকরা অবাধে তাদের ক্লিনিক চালিয়ে যাচ্ছেন।

মেডিকেল প্র্যাকটিস অ্যান্ড প্রাইভেট ক্লিনিক অ্যান্ড ল্যাবরেটরিজ রেগুলেশন অর্ডিনেন্স ১৯৮২-তে বলা হয়েছে ১০ শয্যা বিশিষ্ট ক্লিনিক প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় ও নির্ধারিত স্থান সংবলিত নির্দিষ্ট কক্ষ, অত্যাধুনিক অপারেশন থিয়েটার, ৩ জন বিশেষজ্ঞ ও আবাসিক চিকিৎসক, ১ জন সার্জন ও ৩ জন স্টাফ নার্স থাকতে হবে। এসব শর্তপূরণ সাপেক্ষে বেসরকারি পর্যায়ে ক্লিনিক অ্যান্ড নার্সিং হোম ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোকে রেজিস্ট্রেশন দেয়ার কথা। কিন্তু জীবননগরে এসবের কোনো কিছুই মানা হচ্ছে না। এসব বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কোনো নজরদারিও নেই।

জীবননগর উপজেলা শহরে প্রায় ডডনখানেক ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার রয়েছে। সাইনবোর্ড সর্বস্ব ক্লিনিক অ্যান্ড নার্সিং হোমগুলোতে প্রয়োজনীয় সংখ্যক চিকিৎসক ও নার্স নেই। এছাড়া যথোপযুক্ত অপারেশন থিয়েটার ও নিজস্ব বিদ্যুত ব্যবস্থা নেই। ফলে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীরা প্রতিনিয়ত নানাভাবে প্রতারিত হচ্ছেন এবং আনাড়ি চিকিৎসকের মাধ্যমে চিকিৎসা নেয়া রোগীরা ভুল চিকিৎসার শিকার হয়ে অনেকে মৃত্যুর সাথে লড়ছেন। এছাড়া আরো জনশ্রুতি রয়েছে, এসব ক্লিনিকে নার্স ও আয়া নামধারী কিছু যুবতীদের দিয়ে গভীর রাতে অসামাজিক কার্যকলাপও চালানো হয়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক চিকিৎসক জানান, ক্লিনিকগুলোতে নিজস্ব কোনো সার্জন বা চিকিৎসক নেই। প্রাতিষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃত কোনো নার্স না থাকায় ভাড়াটিয়া চিকিৎসক ও নার্সদের দিয়েই এসব ক্লিনিক-ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলো চালানো হচ্ছে। বিশেষ করে জীবননগর স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সের চিকিৎসকসহ পার্শ্ববর্তী উপজেলার সরকারি স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সের চিকিৎসকরা চাকরির পাশাপাশি এসব ক্লিনিকে অস্ত্রোপচার করে থাকেন। ক্লিনিক মালিকরা রোগী পেলে এসব চিকিৎসকদের সাথে দর কষাকষির একপর্যায়ে উভয়পক্ষের সমঝোতায় এ অস্ত্রোপচার করা হয়। কথিত আছে, ক্লিনিক মালিক ও আনাড়ি নার্সদের মধ্যে কেউ কেউ অপারেশন থিয়েটারে নিজেরাই চিকিৎসক সেজে অপারেশন করে থাকেন।

এক প্রকার বাধ্য হয়েই রোগীরা এসব ক্লিনিকে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চিকিৎসা সেবা নিচ্ছেন। উপজেলার ক্লিনিক মালিকরা সিন্ডিকেট গড়ে তুলে মানুষের অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়ে রোগীদের সাথে নিয়মিত প্রতারণা করে চলেছেন। এসব অবৈধ ক্লিনিকের কিছু দালাল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের প্রধান ফটকের মুখে দাঁড়িয়ে থাকেন। এসব দালাল রোগীদের নানা প্রলোভন দেখিয়ে ক্লিনিকে ভর্তি করেন।

এদিকে বর্তমান চিকিৎসা ব্যবস্থায় চিকিৎসকের কাছে রোগী গেলেই প্রয়োজনে-অপ্রয়োজনে নানাবিধ পরীক্ষা করার জন্য তাদেরকে ডায়াগনস্টিক সেন্টারে পাঠিয়ে দেয়া হয়। অথচ এসব ডায়াগনস্টিক সেন্টারে কোনো প্যাথলজিস্ট বা আল্ট্রাসনোলজিস্ট নেই। টেকনিশিয়ানরাই এসব পরীক্ষা করে রোগীর হাতে রিপোর্ট ধরিয়ে দেন। একজন রোগীকে একই সময়ে পৃথক দুটি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে পরীক্ষা করালে দু রকম রিপোর্ট পাওয়া যায় বলেও জনশ্রুতি রয়েছে। জীবননগর উপজেলায় ক্লিনিক এবং ডায়াগনস্টিক সেন্টারে অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনা প্রতিনিয়ত চললেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ নীরব ভূমিকা পালন করে চলেছে।

Leave a comment