স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গা ঝিনাইদহসহ দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে পানিপথে মালয়েশিয়ায় নেয়ার স্বপ্ন দেখিয়ে অসংখ্য যুবককে নিয়ে তাদেরকে ঠেলে দেয়া হচ্ছে ভয়াবহ অনিশ্চয়তার মধ্যে। অনেকের হদিসই মিলছে না। সাগরে ফেলে হত্যারও অভিযোগ উত্থাপন হচ্ছে। চুয়াডাঙ্গার বেশ কয়েকজনের খোঁজ মিলছে না। সাগরে ফেলে চুয়াডাঙ্গা খাড়াগোদা এলাকার একজনকে হত্যা করা হয়েছে বলেও অভিযোগ তুলে মামলা করা হয়েছে।
এরই মাঝে গতকাল শনিবার রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখতে গিয়ে সিরাজগঞ্জের কামারখন্দ থেকে আসা মোসাম্মৎ রহিমা বলেছেন, আমার স্বামী শফিকুর ট্রলারে করে মালয়েশিয়া গেছে। কীভাবে গেলো, কার মাধ্যমে গেলো, আমরা কিছুই জানি না। হঠাৎ করে একদিন ফোন করে কান্নাকাটি করলো। বললো, তার ওপর ভয়াবহ অত্যাচার হচ্ছে। দু লাখ ২০ হাজার টাকা দিতে হবে। দালালরা একটা বিকাশ নম্বর পাঠালো। সেখানে টাকা দিলাম। কিন্তু তিন মাস ধরে স্বামীর খোঁজ নেই। বেঁচে আছে কি মরে গেছে, তা-ও জানি না।
সমুদ্রপথে মালয়েশিয়া যাওয়ার উদ্দেশে হারিয়ে যাওয়া ব্যক্তিদের নিয়ে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে অভিবাসন- বিষয়ক গবেষণা প্রতিষ্ঠান রামরুর (রিফিউজি অ্যান্ড মাইগ্রেটরি মুভমেন্টস রিসার্চ ইউনিট)। সিরাজগঞ্জ থেকে সংবাদ সম্মেলনে এসে অঝোরে কাঁদছিলেন হারিয়ে যাওয়া ব্যক্তিদের স্বজনেরা। তাদের কারও সন্তান, কারও বাবা আবার কারও বা স্বামী নিখোঁজ। হারিয়ে যাওয়া ব্যক্তিদের স্বজনদের বেশির ভাগেরই গল্প রহিমার স্বামীর মতোই। এসব মানুষ জানেন না, তাদের স্বজন আদৌ বেঁচে আছেন কি নেই। কথা বলতে গিয়ে তাই তারা বারবার কাঁদছিলেন। তাদের সেই কান্না ছুঁয়ে যাচ্ছিলো উপস্থিত সবাইকে।
সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা বলেন, সমুদ্রপথে মালয়েশিয়ায় অভিবাসন করতে গিয়ে বাংলাদেশের বহু যুবক সাগরে কিংবা থাইল্যান্ডে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। অনেকে সমুদ্রেই মারা যাচ্ছেন। নিখোঁজ হচ্ছেন শ শ। কেবল বাংলাদেশের দালালরাই নয়, আন্তর্জাতিক পাচারকারী চক্রও এর সাথে জড়িত। কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে একটি মামলাও করা হয়নি। সরকারকে দ্রুত এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে পরামর্শ দেন তারা।
রামরুর চেয়ারম্যান তাসনিম সিদ্দিকী সংবাদ সম্মেলনে বলেন, আমরা সিরাজগঞ্জে প্রাথমিক অনুসন্ধান চালিয়েছি। আজকে আপনাদের সামনে সেখানকার ভুক্তভোগী কিছু মানুষকে উপস্থাপন করলাম। তাদের বক্তব্য অনুযায়ী সিরাজগঞ্জের সাতটি উপজেলা থেকে চার হাজারের অধিক তরুণ অবৈধভাবে মালয়েশিয়া গেছে। এর মধ্যে চার শতাধিক নিখোঁজ। এই যদি হয় একটি জেলার চিত্র, তবে পুরো দেশের চিত্র কতোটা ভয়াবহ, আমরা সহজেই অনুমান করতে পারি।