মালয়েশিয়ায় ভালো চাকরির প্রলোভনে প্রতারণার ফাঁদ!
মেহেরপুর অফিস: মেহেরপুর সদর উপজেলার আমঝুপি গ্রামের রেজাউল হক নামের এক ব্যক্তিকে অজ্ঞান করে জমি বিক্রির চুক্তি করে নিয়েছেন একই গ্রামের মালয়েশিয়া প্রবাসী হাসানুজ্জামান। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, মালয়েশিয়ায় ভালো চাকরির ফাঁদে পড়ে রেজাউলের ভাগ্যে জুটেছে অমানুষিক নির্যাতন ও অপচিকিৎসা। এতে সে এখন পঙ্গু ও মানসিক ভারসাম্যহীন। অপরদিকে অপকৌশলে চুক্তি করা জমি জবর দখল নিতে মরিয়া অর্থলোভী হাসানুজ্জামান।
অভিযোগে জানা গেছে, আমঝুপি গ্রামের রেজাউল হক ৬ বছর আগে মালয়েশিয়া পাড়ি জমায়। কয়েক বছর চাকরি করার পর প্রতিবেশী মালয়েশিয়া প্রবাসী হাসানুজ্জামান তাকে ভালো চাকরির প্রস্তাব দেয়। বাড়ি এসে গত বছরের ২৩ ডিসেম্বর রেজাউল আবারো মালয়েশিয়া যায় হাসানুজ্জামানের প্রলোভনের ভালো চাকরির আশায়। কিন্তু বিমানবন্দরে পৌঁছুলে রেজাউলের পাসপোর্ট ভিসা কেড়ে নিয়ে তাকে জিম্মি করে হাসানুজ্জামান। তাকে একটি কক্ষে বেশ কিছু দিন আটকে রেখে পরিবারের কাছে ১০ লাখ টাকা দাবি করে। টাকা দিতে দেরি হলে রেজাউলের ওপর অমানুষিক নির্যাতন শুরু হয়। চিকিৎসকের কাছে না নিয়ে হাসানুজ্জামান নিজেই বিভিন্ন ওষুধ দিয়ে চিকিৎসা শুরু করে। এতে রেজাউল মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন। তাকে বাঁচাতে স্ত্রী বিলকিস আরা নগদ ৫ লাখ টাকা দেন হাসানুজ্জামানের ভাই তারিকের হাতে। এর মধ্যে রেজাউল আরো অসুস্থ হয়ে পড়েন। অপচিকিৎসায় রেজাউল পঙ্গুত্ব বরণ করে। পরিবারের পক্ষ থেকে তাকে দেশে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়। দেশে ফেরাতে হলে তার নামে জমি রেজিস্ট্রি করে দেয়ার প্রস্তাব দেয় হাসানুজ্জামান।
এদিকে রেজাউলকে জিম্মি করে তার পরিবারের কাছ থেকে আরো টাকা আদায়ের পাঁয়তারা শুরু করে হাসানুজ্জামান। অজ্ঞান অবস্থায় রেজাউলকে দিয়ে শাদা স্ট্যাম্পে সই করিয়ে নেয়। পরবর্তীতে রেজাউলে কাছ থেকে ২ দশমিক ২০ একর জমি কেনা হয়েছে বলে ওই শাদা স্ট্যাম্পে চুক্তি সম্পন্ন করে।
অসহায় রেজাউলকে দেশে ফিরিয়ে আনতে ব্যাকুল হয়ে ওঠে তার পরিবারের লোকজন। কিন্তু হাসানুজ্জামানের বিভিন্ন ফন্দিতে তা ব্যর্থ হয়। একপর্যায়ে পরিবারের অনুরোধে গত ৩১ আগস্ট আমঝুপি ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান বোরহান উদ্দীন চুন্নু মালয়েশিয়া গিয়ে রেজাউলকে দেখে ফিরিয়ে আনেন। পরিবারের পক্ষ থেকে তার চিকিৎসা দিয়ে সুস্থ করার চেষ্টা চলছে। কিন্তু নির্যাতন ও অপচিকিৎসায় রেজাউল এখনো পঙ্গুত্ব নিয়ে হুইল চেয়ারে বসে শুধুই চোখের পানি ফেলছেন। কথা বলতে পারেন না। দরিদ্র পরিবারের সব কিছু কেড়ে নিয়েও ক্ষান্ত হয়নি হাসানুজ্জামান। এখন সেই স্ট্যাম্পের সূত্র ধরে রেজাউলের জমি দবরদখলের অপচেষ্টায় লিপ্ত হয়েছেন বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীদের। বিষয়টি জানতে চেয়ে হাসানুজ্জামানের মোবাইলে যোগাযোগ করা হয়। তবে সাংবাদিক পরিচয় দিলে তিনি কোনো কথা বলতে রাজি হননি।
প্রতিকার ও সুবিচার চেয়ে রেজাউলের স্ত্রী বিলকিস আরা গত ১৪ অক্টোবর মেহেরপুর সদর থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন। কিন্তু আজো কোনো সুরাহা হয়নি। উপরন্ত হাসানুজ্জামান ও তার ভাই তারিকের অব্যাহত হুমকির মুখে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন রেজাউল ও তার পরিবারের অসহায় সদস্যরা। এমনই অভিযোগ রেজাউলের পরিবারের সদস্যদের। তবে অভিযোগের বিষয়টি খতিয়ে দেখে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানালেন সদর থানার ওসি শেখ আতিয়ার রহমান।