বর্তমান পৃথিবীতে আতঙ্কের নাম ইবোলা

 

সারা পৃথিবীতে এখন সবচেয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে যে রোগটি, তার নাম ইবোলা। আগে একে রক্তক্ষরণকারী জ্বরও বলা হতো। এজন্য দায়ী ইবোলা ভাইরাস। আফ্রিকার কয়েকটি দেশে, বিশেষ করে নাইজেরিয়া, লাইবেরিয়া, সিয়েরা লিওন ও গিনিতে বর্তমানে এর ব্যাপক প্রকোপ রয়েছে। এ পর্যন্ত সাড়ে চার হাজারের বেশি মানুষ এ রোগে মারা গেছে। আফ্রিকার সীমানা ছাড়িয়ে এখন রোগটি ইউরোপ, আমেরিকায়ও ছড়িয়ে পড়ছে। সেসব দেশ থেকে জীবাণু বহন করে আসা রোগীদের সেবা দিতে গিয়ে চিকিৎসক-নার্সরাও আক্রান্ত হয়ে পড়ছেন। যুক্তরাষ্ট্রে ইতোমধ্যে তিনজনের এ রোগে মৃত্যু হয়েছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ইবোলা ভাইরাস মোকাবেলায় সমন্বিত কার্যক্রম গ্রহণের প্রয়োজনে আপাতত তার সব রাজনৈতিক সফর বাতিল করেছেন। বিমানবন্দরগুলোতে কড়া নজরদারি ও স্বাস্থ্য পরীক্ষার ব্যবস্থা করা হয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে অতি দ্রুত এর বিস্তার ঘটতে থাকবে এবং অচিরেই সপ্তায় দশ হাজার মানুষ এ রোগে আক্রান্ত হতে পারে। বাংলাদেশে যে এ রোগের বিস্তার ঘটবে না, এর কোনো নিশ্চয়তা নেই। প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা প্রায় নেই বললেই চলে। ইতোমধ্যে লাইবেরিয়া থেকে আসা ছয় ব্যক্তি কোনো পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়াই বিমানবন্দর দিয়ে বেরিয়ে যায় বলে জানা গেছে। যদিও গত বৃহস্পতিবার সিদ্ধান্ত হয়েছে, দ্রুততম সময়ে ইবোলা শনাক্ত করার জন্য ছয়টি স্ক্যানার কেনা হবে। এর তিনটি ঢাকায়, একটি সিলেটে, একটি চট্টগ্রাম বিমানবন্দরে এবং আরেকটি বেনাপোল স্থলবন্দরে স্থাপন করা হবে। আফ্রিকার এ দেশগুলোতে অনেক বাংলাদেশি রয়েছে। আবার আফ্রিকার এ দেশগুলোর অনেক অধিবাসীর বাংলাদেশে নিয়মিত যাতায়াত রয়েছে। কাজেই আমাদের যথেষ্ট সাবধানতা অবলম্বনের কোনো বিকল্প নেই। রোগের লক্ষণ, রোগী ব্যবস্থাপনার নিয়মকানুনগুলো সম্পর্কে সাধারণ মানুষকে অবহিত করতে হবে। যতো দূর জানা যায়, সংক্রমিত হওয়ার দু থেকে ২১ দিনের মধ্যে রোগের লক্ষণ প্রকাশ পায়। আক্রান্ত ব্যক্তির রক্ত, লালা ও অন্যান্য বডি ফ্লুইডের মাধ্যমে এ ভাইরাসটির সংক্রমণ ঘটে। বাদুড়ের মাধ্যমেও বিস্তার ঘটে। কাজেই বাদুড়ে খাওয়া ফল কিংবা তাল-খেজুরের রস খাওয়া থেকে সাবধান থাকতে হবে। এ রোগে জ্বরের পাশাপাশি গলায় ও পেশিতে ব্যথা হয়। বমি, ডায়রিয়ার পাশাপাশি শরীরে ফুসকুড়ি উঠতে পারে। শরীরের অভ্যন্তরে ও বাইরে রক্তক্ষরণ হয় এবং লিভার ও কিডনির কার্যক্ষমতা হ্রাস পায়। রোগী সাধারণত ছয় থেকে ১৬ দিনের মধ্যে মারা যায়। তাই বিদেশ থেকে আসা কোনো ব্যক্তির মধ্যে এ ধরনের কোনো লক্ষণ দেখা গেলেই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে। পাশাপাশি সরকারিভাবে এ রোগের প্রবেশ ঠেকাতে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নিতে হবে।