সাইকেল চালিয়ে ওষুধ কিনতে এসে লাশ হয়ে বাড়ি ফিরলেন আলমডাঙ্গা জোড়গাছার ঘরজামাই
স্টাফ রিপোর্টার: বাইসাইকেল চালিয়ে মুন্সিগঞ্জে ওষুধ কিনতে গিয়ে শেষ পর্যন্ত লাশ হয়ে বাড়ি ফিরলেন জোড়গাছার বাসিন্দা আলম শাহ (৪৫)। গতকাল মঙ্গলবার সকালে মুন্সিগঞ্জের হাতুড়ে ডাক্তার আব্দুর রাজ্জাকের সেবা ক্লিনিকে গেলে তাকে স্যালাইনসহ কিছু ওষুধ প্রয়োগের পর তিনি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। সেখান থেকে তার নিকটজনেরা খানেকটা জোর করেই হাসপাতালে নেয়ার পরও সুস্থ করে তোলা যায়নি। বিকেলেই মারা যান তিনি।
আলম শাহর স্ত্রী রুশিয়া খাতুনসহ নিকটজনেরা অভিযোগ করে বলেছেন, মুন্সিগঞ্জের হাতুড়ে ডাক্তার রাজ্জাকের ভুল চিকিৎসার কারণেই মৃত্যু হয়েছে কৃষক আলম শাহর। তিনি চুয়াডাঙ্গা আলমডাঙ্গার খাসকররা গ্রামের মৃত আজিমুদ্দিন শাহর ছেলে। জোড়গাছার সাদেক আলীর মেয়ে রুশিয়ার সাথে বিয়ের পর থেকেই তিনি জোড়গাছা গ্রামে বসবাস করে আসছিলেন। গতকাল সকালে তিনি মাঠে যান। মাঠে যাওয়ার পর অসুস্থতা বোধ করলে তিনি নিজেই বাইসাইকেল চালিয়ে মুন্সিগঞ্জের আব্দুর রাজ্জাকের ওষুধের দোকানে আসেন। অসুস্থতার কথা জানান। স্যালাইনসহ কিছু ওষুধ প্রয়োগের পর বাড়িতে খবর দেয়া হয়। ঘণ্টা দেড়েকের মাথায় স্ত্রী রুশিয়াসহ নিকটজনেরা সেখানে ছুটে আসেন। রোগীর শারীরিক অবস্থা ক্রমাবনতি দেখে তারা হাসপাতালে নেয়ার তাগিদ দিলেও অভিযোগ- রাজ্জাক ডাক্তার রোগীকে হাসপাতালে নিতে বাধা দেন। বেলা সাড়ে ১২টার দিকে খানেকটা জোর করেই সেখান থেকে রোগী উদ্ধার করে নেয়া হয় চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে। ভর্তি করা হয়। অবস্থা আশঙ্কাজনক দেখে কর্তব্যরত চিকিৎসক রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার পরামর্শ দেন। রাজশাহী নেয়ার আগেই বিকেলে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে মারা যান আলম শাহ।
মুন্সিগঞ্জ প্রতিনিধি জানিয়েছেন, গতকাল মঙ্গলবার সকাল ৮টার দিকে আলমডাঙ্গার নাগদাহ ইউনিয়নের জোড়গাছা গ্রামের আজিমুদ্দিনের ছেলে দরিদ্র দিনমজুর আলম (৪০) ব্রেনস্ট্রোক করেন। আলমডাঙ্গার মুন্সিগঞ্জ রেলস্টেশন সংলগ্ন হাতুড়ে ডাক্তার রাজ্জাকের ক্লিনিকে যান। তিনি তাকে কয়েকটি ট্যাবলেট, ক্যাপসুল ও স্যালাইন দিয়ে রাখেন। বেলা ১টার দিকে রোগীর অবস্থা আশঙ্কাজনক হলে তড়িঘড়ি করে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে নেয়া হয়। সদরে নেয়ার কিছুক্ষণের মধ্যে রোগীর মৃত্যু হয়।
স্থানীয়রা জানায়, রোগীর অবস্থার অবনতি হলে রাজ্জাক ডাক্তার আলমসাধু ডেকে হাসপাতালে পাঠানোর সময় রোগী একেবারে নেতিয়ে যান। অনেক আগেই মারা গেছে বলে অনেকেই জানায়।
গতকাল জোড়গাছা গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, গ্রামজুড়ে চলছে শোকের মাতম। মৃতের স্ত্রী ও সন্তানের কান্নায় এলাকার আকাশ বাতাস ভারী হয়ে উঠেছে। দু মেয়ে নিয়ে অকুলপাথারে পড়েছেন নিহতের স্ত্রী। একমাত্র উপার্জনক্ষম স্বামীকে হারিয়ে সান্ত্বনা খুঁজে পাচ্ছেন না তিনি। নিহত আলম শাহের ছবি তুলতে গেলে গ্রামের কয়েকজন এই প্রতিবেদককে বাধা প্রদান করে। বলে এই ব্যক্তি ব্রেনস্ট্রোকে মারা গেছে। রোগীর সাথে থাকা এক ব্যক্তির এই প্রতিবেদকের সাথে কথা হলে তিনি জনসম্মুখে সত্যকে মিথ্যা করে বলতে থাকেন। গ্রামের কয়েকজন সংবাদপত্রে নিউজ করতে নিষেধ করে বলেন, লেখালেখি করে আর কী হবে, লেখালেখি করলে কবর থেকে লাশ তুলবে, ঝামেলা বাড়বে। গরিব মানুষ মরে গেছে ঝামেলা কইরেন না। ডাক্তারের হাতে তো কতো রোগীরই মৃত্যু হচ্ছে, কী হচ্ছে? কোনো ডাক্তারেরই তো কিছু হয় না। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত গ্রামে চাপা উত্তেজনা বিরাজ করছে। রাজ্জাক ডাক্তার গ্রামের প্রভাবশালী লোকজনকে ম্যানেজ করার চেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন।
এ ব্যাপারে মুন্সিগঞ্জ রেলস্টেশন সংলগ্ন হাতুড়ে ডাক্তার রাজ্জাকের কাছে গেলে তিনি জানান, সকালে রোগী আলম মাথায় ব্যথা বলে চিকিৎসা নিতে এলে তাকে একটি বি-৫০, ডিএ স্যালাইন ও টপনিল ট্যাবলেট দিই। কয়েক ঘণ্টা ঘরে স্যালাইন দেয়ার পর তার অবস্থা গুরুতর হওয়ার পর তাকে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে পাঠিয়ে দিই। ডাক্তারি কোনো ডিগ্রি আছে কি না এমন প্রশ্নের জবারে তিনি এল.এমএফ ডিগ্রি আছে বলে জানান।
তবে জোড়গাছা গ্রামের অনেকেই দাবি করেন, ব্রেনস্ট্রোক হওয়ার পর রাজ্জাক ডাক্তারের কাছে নিলে তিনি ভুল চিকিৎসা করেন। তিনি একজন পল্লি চিকিৎসক হয়ে ইনজেকশন ও স্যালাইন দেয়ার ক্ষমতা রাখতে পারেন না। গতকাল রাত ১০টার দিকে জানাজা শেষে গ্রামের পারিবারিক কবরস্থানে আলমের দাফনকাজ সম্পন্ন করা হয়েছে বলে গ্রামসূত্রে জানা গেছে।
উল্লেখ্য হাতুড়ে ডাক্তার রাজ্জাক আলমডাঙ্গা কোর্টপাড়ার বাসিন্দা। তিনি কেদারনগরের ছাত্তার ফরাজীর ছেলে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।