এম আর বাবু: দালালের খপ্পরে পড়ে বিদেশে ভালো চাকরির আশায় গিয়ে ওমানে মানবেতর জীবনযাপন করছেন জীবননগর উপজেলার পাথিলা গ্রামের পারুল আক্তার (৩২)। দালাল প্রথমে তাকে দুবাই পাঠালেও সেখান থেকে আবার তাকে দ্বিতীয় দফায় ওমানে বিক্রি করে দিয়েছে তাকে। সেখানে খেয়ে না খেয়ে মানবেতর জীবন কাটছে পারুল আক্তারের। ওমানে এক পরিবারের নিকট বন্দি পারুল দেশে ফেরার আকুতি জানিয়েছেন। এ জন্য তিনি সরকারসহ দেশের মানবাধিকার সংগঠনগুলোর সহযোগিতা কামনা করেছেন।
পারুলের মা জীবননগর পাথিলার নার্গিস আক্তার ওরফে সুফিয়া অভিযোগ করে বলেন, পার্শ্ববর্তী ঝিনাইদহ জেলার মহেশপুর উপজেলার গোকুলনগর গ্রামের মৃত মকিম সরদারের ছেলে দালাল আলমগীর হোসেনের প্রলোভনে পড়ে চলতি বছরের ১৬ মে কোলের ১ বছরের মেয়ে চৈতিসহ ৩ সন্তান রেখে সোনালী দিনের আশায় দুবাই পাড়ি জমান পারুল আক্তার। সেখানে তাকে গৃহপরিচালিকা হিসেবে এক পরিবারের নিকট বিক্রি করে দুবাইয়ের দালাল। দুবাইয়ের ওই পরিবারের অমানুষিক নির্যাতনে সে মারাত্মকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ে। অসুস্থতার কারণে গৃহ পরিচালিকার কাজ করতে অক্ষম হয়ে পড়লে ওই পরিবার তাকে ওমানের এক পরিবারের নিকট বিক্রি করে দেয়। সেখানে কাজ করতে না পারার কারণে ওই পরিবার তার ওপর ধারাবাহিকভাবে নির্যাতন করে চলেছে। খাবার খেতে দেয় না।
সুফিয়া জানান, সর্বশেষ ঈদের দিন পারুলের সাথে তার কথা হয়। এসময় সে তার মায়ের নিকট আকুতি জানিয়ে বলে ‘মা গত ১৫ দিন ধরে আমি অভুক্ত’। যে পরিবারে আছি তারা সকালে কেবল এক পিস পাউরুটি খেতে দেয়।দিনের বেশির ভাগ সময় তাকে অভুক্ত থাকতে হয়। এ অবস্থায় আজ একজন বাঙালির মাধ্যমে ১ কেজি চাল কিনে এনেছি। তাই চিবিয়ে খাচ্ছি। দুঃসহ এই জীবন থেকে আমি বাঁচতে চাই। তুমি আমাকে দেশে ফিরিয়ে নাও’।
তিনি জানান, সর্বশেষ ঈদের দিন কথা হওয়ার পর আর পারুলের সাথে কোনো যোগাযোগ নেই। সে বেঁচে আছে নাকি মারা গেছে তা আল্লাই জানে। এ অবস্থায় ওই দালালের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণসহ তাকে উদ্ধারের জন্য তিনি জীবননগর থানায় লিখিত অভিযোগ করলেও পুলিশ অদ্যবধি কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। ফলে তিনি রাজনৈতিক দলের নেতা ও জনপ্রতিনিধিদের সরণাপন্ন হন। তারাও কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না। সকলেই ‘দেখছি’ বলে কেবলই ঘুরাচ্ছে। এ অবস্থায় ৩ সন্তানের জননী তার একমাত্র মেয়ে স্বামী পরিত্যক্তা পারুল আক্তারকে ওমান থেকে ফিরিয়ে আনতে সরকারসহ দেশের মানবাধিকার সংস্থাগুলোর সহযোগিতা কামনা করেছেন।
এ ব্যাপারে জীবননগর থানার ওসি (তদন্ত) শাখাওয়াৎ হোসেন জানান, সুফিয়া তার নিকট মৌখিকভাবে বিষয়টি জানিয়েছেন। তবে তিনি কোনো অভিযোগ করেননি বলে তিনি জানান।