নির্যাতনের নির্মম বর্ণনা পেলেও ঘাতক গ্রেফতারে সক্ষমতা দেখাতে পারছে না পুলিশ!
স্টাফ রিপোর্টার:রিমান্ডের সময় শেষে সুস্থতার সাথেই জেলহাজতে গেছে নিমাই ঘোষ।মোমিনও মুখ খোলেনি।রিমান্ডের আসামি দুজনে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি আদায়ে ব্যর্থ হলেও মামলার আইও অবশ্য বলেছেন, এরা কিছু তথ্য দিয়েছে।
সাংবাদিক সদরুল নিপুলকে পরিকল্পিতভাবে মোমিনপুর রেলওয়ে স্টেশনে নিয়ে মাদক গ্রহণে বাধ্য করা হয়।নির্মমভাবে নির্যাতনের পর নিথর দেহ ফেলে রাখা হয় রেললাইনের ওপর।নির্যাতনের দৃশ্য দেখে ফেলার কারণে এক মহিলাকে গালিগালাজও শুনতে হয়েছে ঘটনার রাতে। এসব তথ্য পেলেও সাংবাদিক হত্যার অন্যতম হোতা বোয়ালমারীর ক্যাপ্টেনকে ধরতে পারছে না পুলিশ।অনেকেই মন্তব্য করতে গিয়ে বলেছেন,সাংবাদিক সদরুল নিপুল হত্যার প্রতিবাদে মোমিনপুরে আয়োজিত কর্মসূচি পালনকালে কেউ কেউ বড় বড় উক্তি আওড়ালেও হত্যাকারীদের ধরে আইনে সোপর্দ করার বিষয়ে তাদের তেমন উদ্যোগ লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। কিন্তু কেনো?
সাংবাদিক সদরুল হত্যা মামলায় গ্রেফতারকৃত চুয়াডাঙ্গা জেলা সদরের আমিরপুর হঠাৎপাড়ার শামসুলের ছেলে মোমিন ও মৃত গোপাল ঘোষের ছেলে নিমাই ঘোষকে তিন দিনের রিমান্ডে নেয়া হয়। গত বৃহস্পতিবার থেকে রিমান্ড শুরু হয়। একদিনের মাথায় গত শুক্রবার নিমাই অসুস্থ হয়ে পড়ে। সাংবাদিকদের অভিযোগ, সে নিজেকে রক্ষা করতে অসুস্থতার ভান ধরে।পুলিশ তাকে হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করায়। তিনদিনের রিমান্ড শেষে গতকাল নিমাইকে হাসপাতাল থেকে ছাড়াপত্র নিয়ে আদালতে সোপর্দ করা হয়। সদর থানা কাস্টডি থেকে মোমিনকেও নেয়া হয় আদালতে। বিজ্ঞ আদালত দুজনকে জেলহাজতে প্রেরণের আদেশ দেন।
সাংবাদিক সদরুল নিপুলকে গত ২০ মে রাতে তার বাড়ির নিকটস্থ মোমিনপুর রেলওয়ে স্টেশনে ডেকে নেয় চিহ্নিত মাদকচক্র। স্টেশন সংলগ্ন রেলওয়ের আমগাছের আম ২২ হাজার টাকায় বিক্রি করে ওই চক্র।নগদ টাকা পকেটে পেয়ে মাদকাসক্তচক্র বেপরোয়া হয়ে ওঠে।সেই বেপরোয়ারই বলি হন সাংবাদিক সদরুল নিপুল।পূর্বের মতো মাদকাসক্তচক্রের আমবিক্রির তথ্য ফাঁস করে দিতে পারে আশঙ্কায় সাংবাদিক সদরুল নিপুলকে কৌশলে হত্যা করা হয়। ঘটনা ভিন্নখাতে নিতে ঘাতকচক্র নিথর দেহ ফেলে রাখে রেললাইনের ওপর।জিআরপির দর্শনা ফাঁড়ি ইনচার্জ এসআই আবু মোনায়েমের পাশাপাশি সদর থানার অফিসার ইনচার্জ এবং ওসি (তদন্ত) ছায়া তদন্তে এসব তথ্য পেয়েছে বলে জানা গেছে।তথ্য পেলেও হত্যাকারীদের গ্রেফতারে পুলিশের সক্ষমতার নজির না পেয়ে সাংবাদিকমহল ক্ষুব্ধ।টানা ১০ দিন লাগাতার কর্মসূচি পালনের পর চুয়াডাঙ্গায় কর্মরত সাংবাদিকেরা আবারও কর্মসূচি হাতে নিতে যাচ্ছে। একই সাথে সাংবাদিকদের তরফেও তদন্ত টিম গঠনের কথা ভাবা হচ্ছে। ইতোমধ্যেই সাংবাদিকদের মাঝে প্রশ্ন জেগেছে,এলাকার প্রভাবশালী ব্যক্তির ইঙ্গিতছাড়া ওই এলাকার পকেটমারও রাস্তা পার হওয়ার সাহস পায় না, অথচ সেই জনপদে সেই ব্যক্তির গ্রিনসিগন্যাল ছাড়া একজন সাংবাদিক হত্যা হলো কীভাবে?সভা সমাবেশে বড় বড় বুলিতে সাংবাদিকেরা সন্তুষ্ট নন,প্রভাবশালী ওই ব্যক্তি বাস্তবে হত্যকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিলে সন্দেহের তীর তার দিকেই তীব্রতর হবে বলে অভিমত স্থানীয় সাংবাদিক নেতৃবৃন্দের।
উল্লেখ্য, চুয়াডাঙ্গা মোমিনপুরের নীলমণিগঞ্জের মৃত নূর মোহাম্মদের ছেলে সদরুল আলম নিপুল ওরফে সদরুল নিপুল দৈনিক মাথাভাঙ্গার মোমিনপুর ইউনিয়ন প্রতিনিধি ছিলেন। এক কন্যার জনক সদরুল নিপুলকে গত ২০ মে রাতে কৌশলে ডেকে নেয়া হয়। পরদিন রেল স্টেশনের স্টেশনমাস্টারের অফিসের অদূরে আপলাইন থেকে সাংবাদিক সদরুল নিপুলের খণ্ডবিখণ্ড লাশ উদ্ধার করা হয়। প্লাটফর্মের ওপর থাকা রক্ত দেখে স্থানীয়রা নিশ্চিত হন, সাংবাদিক সদরুল নিপুল ট্রেনে কেটে নয়, তাকে নির্যাতনের পর নিথর দেহ রেললাইনের ওপর ফেলে রাখে ঘাতকচক্র। পুলিশি প্রাথমিক তদন্তে এর সত্যতা মিলেছে। গ্রেফতার করা হয়েছে মোমিন ও নিমাইকে। মোমিন ঘটনার রাতে সদরুল নিপুলের সাথে মোটরসাইকেলযোগে চুয়াডাঙ্গায় যাওয়া এবং ফেরার বিষয়টি স্বীকার করলেও রাতে হত্যার সাথে জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করেছে। নিমাই তেমন তথ্য দেয়নি। জিজ্ঞাসাবাদ এড়াতেই বুকে ব্যথার কথা বলে অসুস্থতার ভান করে। হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক বলেছেন, নিমাইয়ের শরীরে প্রয়োজনীয় পরীক্ষা করে তেমন গুরুতর অসুস্থতা বোঝা যায়নি।