দামুড়হুদায় চাঁদার টাকা ভাগাভাগি নিয়ে চাঁদাবাজ চক্রের আভ্যন্তরীণ কোন্দলের বহির্প্রকাশ

 

 

জেকের ও বাসুকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে জখম : ৮ জনকে আসামি করে মামলা

স্টাফ রিপোর্টার: দামুড়হুদা চারুলিয়ার দুজনকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে জখম করা হয়েছে। বাসু ও জেকের নামের দুজনকে মুমূর্ষু অবস্থায় চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। হেমায়েতপুর বেড়বাড়ি এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। জখম দুজন এলাকার চিহ্নিত চাঁদাবাজ ও নারিবাজ বলে জানিয়েছে এলাকার অনেকেই। চাঁদার টাকা ভাগাভাগি নিয়ে নিজেদের মধ্যে এ কোপাকুপির ঘটনা ঘটে বলে সূত্র জানায়। গুরুতর জখম দুজনকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করা হয়েছে।

চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার নতিপোতা ইউনিয়নের চারুলিয়া গ্রামের নিলু খার ছেলে রাশেদুল ওরফে বাসু (৩০) ও একই গ্রামের রবিউল খার ছেলে জাকির হোসেন ওরফে জেকের (৩৫) সম্পর্কে চাচাতো ভাই। এরা এলাকায় নারীবাজ ও চাঁদাবাজ হিসেবে পরিচিত। এলাকার একটি সূত্র জানায়, তারা একটি সন্ত্রাসী ও চাঁদাবাজ চক্রের সাথে বিভিন্ন এলাকায় চাঁদাবাজি করে বেড়ায়। গতকাল শনিবার বিকেলে তারা এলাকায় চাঁদার টাকা আনতে যায়। পরে দুজনকে সম্ভবত নারীর লোভ দেখিয়ে চাঁদাবাজ চক্র হেমায়েতপুর বেড়বাড়ি এলাকার করিমপুরমোড়ে মোবাইলফোনে ডাকে বলে কেউ কেউ জানিয়েছে। জখম বাসুর মা তফিরা বেগম ও জেকেরের স্ত্রী নাসিমা খাতুন অভিযোগ করে বলেন, হেমায়েতপুরের মৃত খয়রুদ্দিনের ছেলে বজলু, মৃত মিরার ছেলে উম্বাদ ও একই গ্রামের নাজিমসহ কয়েকজন সন্ধ্যার আগে করিমপুর মোড়ে ডাকার পর সেখানে একটি কলাবাগানে নিয়ে বাসু ও জেকেরকে এলোপাতাড়ি কোপানো হয়। কোপানোর পর সেখানেই পড়ে ছিলো জখম দুজন। তাদের গুঁঙানি শব্দ শুনে আশপাশের লোকজন তাদেরকে উদ্ধার করে সন্ধ্যার পর চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে নেয়। হাসপাতালসূত্রে জানা গেছে, দুজনের শরীরে অসংখ্য কোপানো হয়েছে। দুজনেরই কব্জি কেটে পড়ে যাওয়ার উপক্রম। তাছাড়া সমস্ত শরীরে অসংখ্য কোপানো হয়েছে। তারা কথা বলতে পারছে না। অচেতন অবস্থায় কর্তব্যরত চিকিৎসক দুজনকেই রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করা হয়েছে।

কেউ কেউ বলেছে, হেমায়েতপুর বেড়বাড়ি বদর উদ্দিন শেখের ছেলে আব্দুর রশিদ সেলপার্সের দোকানি। গত দিন ১৫ আগে তার কাছ থেকে ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। করিমপুর-গোপালপুর মাঠে রাতের বেলায় বাড়ি ফেরার সময় এ ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। এ ছিনতাইয়ের ঘটনায় বাসু ও জেকেরকে সন্দেহ করা হয়। কিন্তু অভিযুক্ত বাসু ও জেকের তা অস্বীকার করে দোষ চাপায় হেমায়েতপুরের খয়রুদ্দিনের ছেলে বজলুর ওপর। এ নিয়ে দু পক্ষের মধ্যে কয়েকদিন ধরে উত্তেজনা চলে আসছিলো। এরই মধ্যে গতকাল সন্ধ্যার কিছুক্ষণ আগে বাসু ও জেকেরকে উপর্যুপরি কুপিয়ে জখম করা হলো।

পুলিশ জানায়,শনিবার সন্ধ্যার আগ মুহূর্তে সদ্য হাজত থেকে বের হওয়া জেকের ও বাসু উপজেলার হেমায়েতপুর গ্রাম থেকে জনৈক বজলু নামের নিজেদের গ্যাং গ্রুপের এক সদস্যকে ভুল করে মোটরসাইকেলে কৌশলে অপহরণ করে কানাইয়ের বাঁক নামক স্থানে নিয়ে আসে । ওই খানেই অপেক্ষা করছিলো সন্ত্রাসী দলের অন্য সদস্যরা। জেকের ও বাসুর ভুল ধরা পড়া মাত্রই দলীয় ক্যাডাররা ধারালো অস্ত্র নিয়ে তাদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। এলোপাতাড়ি কুপিয়ে দুজনেরই হাত-পায়ের রগ কেটে দেয় চক্রের সহযোগীরা। এছাড়া শরিরের বিভিন্ন স্থানে কুপিয়ে মৃত ভেবে ফেলে রেখে যায়। গ্রামবাসীর সহায়তায় সন্ধ্যার পর দুজনকে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে নেয়া হয়। হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের কনসালটেন্ট ওয়ালিউর রহমান জানিয়েছেন,জাকির এবং রাশেদের অবস্থা শঙ্কটাপন্ন। উন্নত চিকিৎসার জন্য রাত ১টার দিকে তাদেরকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার প্রস্তুতি চলছিলো। দামুড়হুদা থানার ওসি শিকদার মশিউর রহমান ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে জানিয়েছেন,সন্ত্রাসীদের ধরতে পুলিশি অভিযান শুরু হয়েছে।

জাকির হোসেন ওরফে জেকেরের স্ত্রী নাসিমা খাতুন বলেন আজ (গতকাল) বিকেলে স্বামী জেকের দামুড়হুদা থানার এসআই রবিউল স্যারকে আম দিতে যায়। সেখান থেকে ফেরার পর এ ঘটনা ঘটে। এ ব্যাপারে দামুড়হুদা থানার এসআই রবিউল ইসলামের কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি আম নেয়ার কথা অস্বীকার করে বলে সে আমার সাথে দেখা করতে এসেছিলো। তার একটি চাঁদাবাজি মামলা আছে আমার কাছে। শিগগিরই চার্জশিট দেয়া হবে। এ কারণেই সে দেখা করতে এসেছিলো।

রাশেদুল ওরফে বাসু ও জাকির হোসেন ওরফে জেকেরকে কোপানোর ব্যাপারে গতরাতে দামুড়হুদা থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।দামুড়হুদা নাপিতখালী গ্রামের মৃত হায়াত আলীর ছেলে নাসির উদ্দিন বাদী হয়ে ৮ জনকে আসামি করে মামলা করেছেন। বাদী নাসির উদ্দিন আহত জেকের আলীর মামা। মামলার আসামিরা হলো হেমায়েতপুরের মৃত খয়ের উদ্দিনের ৩ ছেলেবজলু (৫০),আবু তালেব (৪৮), মজনু (৪০), এরশাদের ছেলেমহিদুল (৩৫), বজলুর দু ছেলে ছেলেনাজিম (৩২) ওনাসির (৩০), নতিপোতার মৃত মল্লিক পালের ছেলেগোলাম হোসেন (৪০) ও তারা চাঁদের ছেলেবিল্লাল (৪৫)। মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে শনিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬ টার দিকে ১ নং আসামি বজলু মোবাইলফোনে জেকেরকে ডেকে নিয়ে বেড়বাড়ি সরকারি প্রাইমারি স্কুলের পাশে পাকা রাস্তার ওপর পূর্ব শত্রুতার জের ধরে ৮/৯ মিলে ধারালো অস্ত্র দিয়ে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে রক্তাক্ত জখম করে।