মুজিবনগর প্রতিনিধি:মেহেরপুরের মুজিবনগর উপজেলার তারানগর গ্রামে ১৬৫টি টিউবওয়েলের মধ্যে ১৬০টিতেই অধিক মাত্রার আর্সেনিক শনাক্ত করেছে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর ও কয়েকটি বেসরকারি এনজিও। সুপেয় পানির ব্যবস্থা না থাকায় গ্রামের এক পাশের ডোবার নোংরা পানিই এখন গ্রামবাসীর একমাত্র ভরসা। গোটা গ্রামের ভূ-গর্ভস্থ পানিতে মাত্রাতিরিক্ত আর্সেনিক হওয়ায় বার বার চেষ্টা করেও সুপেয় পানির ব্যবস্থা করা যাচ্ছে না বলে জানান জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের কর্মকর্তা।
মুজিবনগর উপজেলার তারানগর গ্রামে বসবাস করে প্রায় ২ হাজার ২৫৮ জন মানুষ। অনেক দিন ধরে আর্সেনিকযুক্ত পানি পান করায় আর্সেনিকে আক্রান্ত হয়ে বিভিন্ন সময়ে মারা গেছে বেশ কয়েকজন। বর্তমানে আর্সেনিকোসিস রোগে আক্রান্তের সংখ্যা রয়েছে প্রায় ২শ ৪৮ জন। বিভিন্ন এনজিও-র দেয়া সুপেয় পানির উৎসগুলো নষ্ট হয়ে গেছে অনেক আগেই। পানির উৎসগুলো বিকল হয়ে থাকায় সংশ্লিদের কাছে বিভিন্ন সময়ে ধর্না দিয়ে কোনো ফল পায়নি গ্রামবাসী। নিরাপদ পানির উৎস স্থাপন ও অকেজো পানির উৎসগুলো মেরামতসহ আর্সেনিকোসিস রোগে আক্রান্তদের চিকিৎসা বৃদ্ধির দাবিতে বেশ কয়েকবার মানববন্ধনও করেছে আর্সেনিক প্রবণ এলাকার মানুষ। আগে গ্রামটিতে আর্সেনিকের মাত্রা কম থাকলেও বর্তমানে এর মাত্রা দাঁড়িয়েছে ৯৩ দশমিক ৫৮ ভাগ বলে জন স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে।
গ্রামটি ঘুরে দেখা গেছে, বিভিন্ন সময়ে এনজিও কর্তৃক দেয়া অধিকাংশ রিংওয়েল টিউবওয়েল অকেজো হয়ে পড়ে আছে। যে কয়েকটি সচল আছে তাতে পানির পরিবর্তে কাদামাটি উঠছে। পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় এরূপ হচ্ছে বলে জানিয়েছে ভুক্তভোগীরা। দীর্ঘদিন ধরে সুপেয় পানির কোনো ব্যবস্থা না হওয়ায় গ্রামের এক পাশের একটি ডোবা থেকে অপরিষ্কার পানি সংগ্রহ করে তা ব্যবহার করার দৃশ্য চোখে পড়ার মতো। গৃহবধূরা দল বেধে ডোবাটি থেকে পানি সংগ্রহ করছেন। বছর তিনেক আগে সেভ দ্যা চিলড্রেন গ্রামবাসীদের মাঝে সুপেয় পানি সরবরাহ করার লক্ষ্যে একটি সিডকো প্লান্ট স্থাপন করে। কিন্তু বিদ্যুত সংযোগের অভাবে তা কোনো কাজেই আসেনি গ্রামবাসীর।
তারানগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জানান, এখানে প্রায় ৩০০ জন শিক্ষার্থীকে পাঠদান করা হয়। কিন্তু চৈত্রের দাবদাহ বৃদ্ধি পাওয়ায় পানির চাহিদা বেড়ে গেছে। কয়েকটি ফিল্টার দিয়ে সকলের পানির চাহিদা মেটানো যাচ্ছে না। এতে করে অনেক শিক্ষার্থীই বাধ্য হয়ে আর্সেনিক মিশ্রিত পানি পান করছে। কারিতাস দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও উন্নয়ন বিভাগের প্রতিনিধিরা বিভিন্ন সময়ে গ্রামবাসীদের সাথে সভা সেমিনার ওঠোন বৈঠক করে আর্সেনিকের ভয়াবহতার বিষয়টি অবহিত করার পাশাপশি আর্সেনিকে আক্রান্তদের চিকিৎসার জন্য অর্থনৈতিকভাবে সহযোগিতা করছে।
মুজিবনগর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. হাসান আলী জানিয়েছেন, দেশের অস্থিতিশীল অবস্থার কারণে এবারে আর্সেনিক আক্রান্তের কোনো তালিকা তৈরি করা হয়নি। গ্রামবাসীর ডোবার পানি ব্যবহারের বিষয়ে তিনি বলেন, অবশ্যই ডোবার পানি ফুটিয়ে পান করতে হবে তা না হলে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা আছে।
মুবিজনগর উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল কার্যালয় থেকে আর্সেনিক কবলিত তারানগর গ্রামের কোনো তথ্য না পেলেও একটি এনজিও সূত্রে জানা গেছে, অন্যান্য এলাকায় আর্সেনিক পরীক্ষা করে আর্সেনিকের মাত্রা সর্বোচ্চ ৫০ পিপিবি হলেও শুধু তারানগর গ্রামের পানির উৎসে ৩০০ পিপিবি থেকে ৭০০ পিপিবি পর্যন্ত পাওয়া গেছে। যার অবস্থা বিষের মতো।মেহেরপুর জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল ওয়াদুদ জানিয়েছেন, জেলার ভোলাডাঙ্গা, আলমপুর, আমঝুপি ও তারানগর এলাকায় অধিকমাত্রার আর্সেনিক শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে তারানগর গ্রামটির অবস্থা অত্যান্ত ভয়াবহ। গ্রামটিতে ১৬৫টি নলকুপের মধ্যে মাত্র ৫টি টিউবওয়েল আর্সেনিকমুক্ত। যা দিয়ে গোটা গ্রামের মানুষের সুপয়ে পানির চাহিদা মেটানো অসম্ভব। জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরর সুপেয় পানি সরবরাহ করার লক্ষ্যে সকল চেষ্টায় ব্যর্থ হয়েছে। এখানে ওয়াটার ট্রিটমেন্ট সাপ্লাই ছাড়া কোনোভাবেই সুপেয় পানির উৎস তৈরি সম্ভব নয়।