জীবন যেখানে যেমন
গিয়াসউদ্দিন পিনা
যশোর জেলার শার্শা থানাটি দেশের দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের এক সমৃদ্ধ জনপদ। বেনাপোল স্থলবন্দরের কাছাকাছি হওয়ায় শহরটির গুরুত্ব অনেক বেশি। ছোটখাটো শহর হলেও এখানকার মানুষের আর্থিক অবস্থা ক্রমেই উন্নতির দিকে। বৈধ-অবৈধ উভয় পথেই এখানে আয়-রোজগারের পথটি বেশ প্রশস্ত। সীমান্তবর্তী শহরগুলোর এই এক সুবিধা। প্রলেতারীয়দের জীবিকার অভাব হয় না। বেঁচে থাকার আকাক্সক্ষা তাদেরকে কোনো না কোনো কাজ জুটিয়ে দেয়।
এ রকম গুরুত্বপূর্ণ থানায় পোস্টিং পেতে পুলিশ সদস্যদের মধ্যে হরহামেসা আগ্রহ লক্ষ্য করা যায়। অনেক সময় দেন-দরবারও চলে। কিন্তু সাব ইন্সপেক্টর আহসান কবির এখানে পোস্টিং পেয়েছেন একজন শিক্ষানবীশ অফিসার হিসেবে। বাহ্যিক ঠাট-বাট, চাল-চলনে, তাকে বেশ রাশভারী মনে হলেও ভেতরটা তার শিমুল তুলোর মতোই পেলব। বুদ্ধিদীপ্ত চেহারা, অমায়িক ব্যবহার, আর সুঠামদেহের অধিকারী কবির সাহেব শার্শা থানায় নিজেকে একজন মেধাবী অফিসার হিসেবে প্রমাণ করার নিরন্তর চেষ্টায় নিরত থাকলেও মাঝে মাঝেই তিনি মানবিক বোধের কাছে পরাজিত হন। এ পরাজয় কখনও বা গৌরবের, কখনও বা অমর্যাদার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। কুষ্টিয়া দৌলতপুরের এক সাধারণ পরিবারে তার জন্ম। সাত ভাইবোনের মধ্যে তিনি বড়। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স করার পর খবরের কাগজে বিজ্ঞাপন দেখে তিনি সাবইন্সপেক্টর পদে চাকরির আবেদন করেছিলেন ভাগ্যটাকে পরোখ করার মানসে। কিন্তু এতো সহজে ভাগ্য প্রসন্ন হবে, তা ছিলো ভাবনার অতীত। সীমান্তবর্তী এলাকায় চোরাচালানি নতুন কিছু নয়। রাতারাতি ভাগ্যটাকে বদলে ফেলার বাসনায় অনেকে চোরাচালানি ব্যবসার সাথে জড়িয়ে পড়ে। প্রকৃতজনরা জীবিকার তাড়নায় এ পথ বেছে নেয়। এ সকল মানুষের চোখে ছোট-বড় অনেক স্বপ্নই খেলা করে। কারো স্বপ্ন পূরণ হয়, কারোবা অধরা থেকে যায়। এভাবে আলো-আঁধারের মধ্যদিয়ে তাদের জীবন এগিয়ে চলে জীবনের প্রয়োজনে। সময়ের ভেলায় কবির সাহেবের জীবনতরীও ভেসে চলে সমান্তরালে।
হেমন্তের স্নিগ্ধ এক সকালে কবির সাহেব মোটরবাইকে এক সিপাইকে নিয়ে যশোরে যাচ্ছিলেন সরকারি কাজে। শার্শা শহর পার হয়ে কিছুদুর আসতেই দেখেন, এক মহিলা কাপড়ের পোটলা মাথায় নিয়ে রাস্তার পাশ দিয়ে হেঁটে যাচ্ছেন। তার চলার মধ্যে সংশয় ভাব দেখে তিনি বুঝলেন, মহিলাটি ব্লাকের মাল নিয়ে যাচ্ছেন। শার্শা শহরের আশপাশে এ রকম দৃশ্য অহরহ চোখে পড়ে। তিনি দেখেও না দেখার ভান করে ব্যাপারটা এড়িয়ে যেতে চাইলেন। কিন্তু বাইকের পেছনে বসা সিপাইয়ের নজর এড়াইনি। সে মহিলাকে দেখে বারবার কবির সাহেবকে বাইক থামানোর জন্য অনুরোধ করতে লাগলো। নিশ্চিত সুযোগটা সে কোনোমতেই হাতছাড়া করতে চাই না। অনিচ্ছাসত্বেও কবির সাহেব বাইক থামালেন। মহিলা ততোক্ষণে পুলিশ দেখে মাঠের ভেতর নেমে গেছে। ধরা পড়ার আশঙ্কায় সে পায়ের গতি বাড়িয়ে দেয়। সিপাই বাইক থেকে নেমেই তাকে উচ্চস্বরে ডাকতে থাকে। সে, ডাকে সাড়া না দিয়ে ধান ক্ষেতের আইল দিয়ে দ্রুত পালিয়ে যেতে থাকে। কিন্তু দৃষ্টির আঁড়ালে চলে যাওয়ার আগেই সিপাইটি দৌঁড়ে গিয়ে তাকে ধরে নিয়ে আসে। এটুকু ভোগান্তি দেয়ার জন্য তার কপালে দু-চারটি চড় আর খিস্তি খেউর অনিবার্য হয়ে পড়ে। কবির সাহেব কাছে গিয়ে দেখেন, এক মধ্যবয়সী, বিগত যৌবনা মহিলা আনত নয়নে দাঁড়িয়ে রয়েছে। তার পোটলার ভেতরে ভারতীয় কিছু ক্রোকারিজ সামগ্রী। পরণে নীলাম্বর আটপৌরে শাড়ি, নিরাভরণ দেহ। কিন্তু তার মাঝে শালিনতার এক সোন্দর্য যেন মূর্ত্য হয়ে উঠেছে। অবয়ব খুব সুন্দর না হলেও সুশ্রীভাব তার সর্বাঙ্গজুড়ে ছড়িয়ে রয়েছে। এ যেন চোরাকারবারি চরিত্রের সাথে বড়ই বেমানান এক চরিত্র। তিনি মহিলার পরিচয় জিজ্ঞেস করলেন। কিন্তু সে কোনো প্রশ্নের জবাব দিলো না। সিপাই বার কয়েক ধমকও দিলো। তাতেও কোনো কাজ হলো না। কবির সাহেব অবাক হয়ে গেলেন। এ পর্যন্ত কতো মহিলাকে তিনি ব্লাকের মালসহ ধরেছেন, চালানও দিয়েছেন। ছাড়া পাওয়ার জন্য তারা কতো অনুনয় বিনয় করেছে। কিন্তু এ মহিলাকে সম্পূর্ণ ব্যতিক্রমী মনে হলো তার। ইতোমধ্যে সেখানে অনেক লোক জড়ো হয়ে গেছে। তাদের মধ্যে অনেকে বলতে লাগলো, ‘স্যার একে চালান দিয়ে দেন, এরা দেশের শত্র“।’ কবির সাহেব দোটানায় পড়ে গেলেন। মহিলার রহস্যজনক নিরবতা তাকে কৌতূহলী করে তুলেছে। স্থূল দৃষ্টি যার নাগাল পাই না, সুক্ষ্ম দৃষ্টিতে ঠিকই তার স্বরূপ ধরা পড়ে। ধীমান কবির সাহেব ভাবলেন, নিশ্চয় ভদ্রঘরের কোনো মহিলা হবে। অন্তরের অতল গহব্বর থেকে উদ্ভূত এক মায়া তাকে ক্ষণিকের জন্য আচ্ছন্ন করে ফেলে। কিন্তু পরক্ষণে তার মধ্যে পেশাদারী মনোভাব প্রবল হয়ে উঠে। নতুন চাকরির কথা ভেবে, মানবিক দুর্বলতাকে অগ্রাহ্য করে তিনি সিপাইকে দিয়ে তাকে থানায় পাঠিয়ে দিলেন। সন্ধ্যায় থানায় ফিরে দেখেন, মহিলাটি বিষণœ মনে নিরবে অশ্র“পাত করে চলেছে। নিয়মানুযায়ী তার বিরুদ্ধে মামলা হওয়াটা স্বাভাবিক। কিন্তু এই উচিত কাজটি করতে কেন জানি তার মন চাচ্ছে না। তিনি মহিলাটিকে অভয় দিয়ে বললেন, ‘আপনাকে দেখে চোরাকারবারি বলে মনে হচ্ছে না, নিশ্চয় কোন বিপদে পড়ে এ পথে নেমেছেন? যদি সত্যি ঘটনাটা বলেন, তবে আপনাকে সাহায্য করতে পারি’। একথা শুনে মহিলার চোখে-মুখে যেন এক পশলা আলোর বন্যা বয়ে গেলো। ঘন মেঘের আড়ালে তিনি যেন সহসা রুপালি চাঁদের দেখা পেলেন। ধীরে ধীরে মেঘাচ্ছন্ন আকাশের গুমোট ভাবটি কেটে গিয়ে এক নির্মল বাতাস বইতে শুরু করলো। কবির সাহেব তাকে হাজতখানার বাইরে নিয়ে এসে একটা চেয়ারে বসালেন। মহিলাটি মৌনতা ভেঙে সুমিষ্ট বচনে কবির সাহেবকে বললেন যে, তিনি একজন অবসরপ্রাপ্ত আর্মির সিনিয়র ওয়ারেন্ট অফিসারের স্ত্রী। বছর পাঁচেক আগে তার স্বামী মারা গেছে। তার দু ছেলে, এক মেয়ে রাজশাহী ইউনিভার্সিটিতে পড়ে। বড় ছেলে ফলিত রসায়নে অনার্স পাস করে মাস্টার্স করছে। মেয়েটি সমাজবিজ্ঞানে, আর অন্য ছেলেটি রাষ্ট্রবিজ্ঞানে অনার্স পড়ছে। তাদের পড়াশুনার খরচ চালাতে গিয়ে তিনি স্বামীর জমানো সব টাকা খরচ করে ফেলেছেন। উপায়ান্তর না পেয়ে সন্তানদের পড়াশুনার খরচ চালাতে তিন মাস হলো তিনি এপথে নেমেছেন। যেকোনোভাবে তাদেরকে মানুষ করতে হবে এ তার প্রত্যাশা। পড়াশুনার ক্ষতি হবে ভেবে ছেলেমেয়েদের কোনোকিছুই তিনি বুঝতে দেননি। এখন যদি তারা জানতে পারে, তাদের মা চোরাকারবারি করে তাদের পড়াশুনার খরচ চালায়, তাহলে এ লজ্জা-অপমানে তার আত্মহত্যা করা ছাড়া কোনো উপায় থাকবে না। একথা বলে মহিলাটি অঝর ধারায় কাঁদতে লাগলেন। জীবনযুদ্ধে এক বিধবা নারীর দুর্বিনেয় সংগ্রামের কথা শুনে কবির সাহেব বাকরুদ্ধ হয়ে গেলেন। হৃদয়ের সুক্ষ্ম বীণায় করুণ রাগের সুর ঝংকৃৃত হয়ে উঠলো। গভীর শ্রদ্ধা আর মমতায় অন্তরটা তার আবেগাপ্লুত হয়ে উঠল। কিন্তু পুলিশ অফিসার হিসেবে এতোটা আবেগপ্রবণ হওয়া তার মানায় না। তার ওপর নতুন চাকরি। তাই মানবিক বোধ আর পেশাদারীত্বের দ্বন্দ্বে তিনি নির্বাক স্থানুর মতো বসে রইলেন। স্বল্পকাল পরে আত্মস্থ হয়ে তিনি মহিলাটিকে হাজতখানায় ফেরত পাঠালেন। নিশি অবসানে পরদিন সকালে অন্য এক আসামিসহ তাকে যশোর কোর্র্টে পাঠিয়ে দিলেন। যশোরের কাছাকাছি পৌঁছে পুলিশ সিপাই মহিলাটিকে গাড়ি থেকে আচমকা নামিয়ে দিয়ে চলে গেল। সিপাইয়ের এ অদ্ভুত আচরণে সে বিস্মিত হয়ে অপসৃয়মান গাড়িটির দিকে নির্নিমেষ তাকিয়ে থাকলো। ওইদিন সন্ধ্যায় কবির সাহেব সবেমাত্র বাইরে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। হঠাত দরজায় কড়া নাড়ার শব্দ। তিনি দরজা খুলে দেখলেন, সেই মহিলা। হাতে একগুচ্ছ রজনীগন্ধার তোড়া। কবির সাহেব হতচকিত হয়ে গেলেন। কিছু বুঝে উঠার আগেই তাকে অবাক করে দিয়ে মহিলাটি বললেন, ‘ফুলের তোড়া আপনাকে দিতে আসিনি, দিতে এসেছি আপনার সেই গর্ভধারিণী মাকে, যে আপনার মতো সন্তানকে জন্ম দিয়েছেন। গর্বিত সেই মাকে আমার পক্ষ থেকে ফুলেল শুভেচ্ছা’। এ কথা বলে তিনি ফুলের তোড়াটি তার হাতে দিয়ে চলে গেলেন। কবির সাহেব ষ্টাচুর মতো তার চলে যাওয়া দেখলেন। এক অপার্থিব আনন্দের অনুভূতি ছুয়ে গেল তার মন। হৃদয় মুকুরে রিমঝিম শব্দে অনির্বাচ্য বেহালার সুর বেজে উঠলো। সেই ইন্দ্রজালিক সুরের মূর্ছনায় তিনি নিমিষে হারিয়ে গেলেন অন্য এক ভুবনে। চোখের পাতা দুটো তার ভিজে উঠলা অকারণে।
বন্ধু তুমি কেমন আছ
Ñমোছাঃ সোহানা ইয়াসমিন
বন্ধু তুমি কেমন আছ
চিঠি লিখে আমায় জানাও,
কাগজ কেটে কেমন করে
নৌকা তুমি বানাও!
জবাব পেলে হব খুশি
যাব তোমার বাড়ি,
জবাব যদি না পায় তবে
তোমার সাথে আড়ি!
ওদরে ধরে মারো
-চত্তিরঞ্জন সাহা চতিু
কারবাইডে পাঁকায় এমন
আম কলা আর পঁেপ,ে
খলেইে বপিদ রক্ষা তো নইে
পটেটা যাবে ফঁেপ।ে
ঘুরবে মাথা ধরবে রোগে
মরবে মানুষ ঠকি,
কাজ হবে না কোনো কছিুই
ঘুরবে চর্তুদকি।
ফরমালনিও দচ্ছিে মাছে
নইেতাে আর বাক,ি
কমেন করে এই সমাজে
সুস্থ বলো থাক।ি
আইনকানুন কউে মানে না
দব্যিি চালায় কাজ,
তুলো গোজা দু’কানতেে
নইেতাে তাদরে লাজ।
ফল খাবে না মাছ খাবে না
সবাই এবার ছাড়ো,
মশিায় যারা বষিগুলো সব
তাদরে ধরে মারো।
মুক্ত আলোচনাÑ১
Ñশ ম রেজাউল হক রাজু
মূল আলোচনায় যাবার আগে বলছিলাম যদি কোন সময় একবারের তরেও
এখানে বলে রাখি ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে যারাই উপস্থিত রাষ্ট্র ক্ষমতা আমার হাতে আসে তাহলে
আছেন আজকের এই বিশেষ সভায়, আপনারা সকলেই আমার চৌদ্দ পুরুষ সারা জীবন বসে বসে খাবে
আমার মেহমান, আমার শুভাকাঙ্খীও বটে! এমন চিন্তা না করে সত্যি সত্যি দেশটাকে
আমি আপনাদের কোন রকম অসম্মান করবনা, উন্নয়নের জোয়ারে ভরে দেব।
এমনকি আমার কোন আচরণে আপনারা কষ্ট পাওয়া আপনারা কি আমাকে এদেশের রাষ্ট্র ক্ষমতায় দেখবেন?
তো দূরের কথা একটুও বিরক্তবোধ করবেননা। আপনারা কি আমাকে নেতা নয় কবি হিসাবে মানবেন?
আমি কথা দিচ্ছি আপনাদের মহামূল্যবান সময় নষ্ট হতে যদি রাষ্ট্র ক্ষমতায় দেখেন, কবি হিসাবে মানেন
দেবনা খুব শর্ট টাইমে সভা শেষ করব। তাহলে আমি আপনাদের স্বপ্ন দেখার সুযোগ করে দেব।