ক্রমঅবনতিশীল আইনশৃঙ্খলা

 

দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে বেশ কিছুদিন ধরেই। সাম্প্রতিক সময়ে খুন ও অপহরণের মাত্রা যে হারে বেড়ে চলেছে, তাতে কখন কে কার হাতে খুন হবে, তা বলা যাচ্ছে না। কিছুদিন আগে রাজধানীর অভিজাত এলাকা গুলশানে বিপণি বিতান শপার্স ওয়ার্ল্ডের সামনে যুবলীগ নেতা রিয়াজুল হক মিল্কিকে যেভাবে হত্যা করা হয়েছে, ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরায় ধারণকৃত সেই দৃশ্য দেখে মানুষ আঁতকে উঠেছিলো। এরপর একের পর এক খুনের ঘটনায় মানুষের সেই আতঙ্ক আরও বাড়ছে। গত বুধবার সিলেটে প্রকাশ্যে অস্ত্রের মহড়া দিয়ে এক সোনার মার্কেটে ডাকাতি করার সময় গুলি করে এক ব্যক্তিকে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। তারা লুট করে নিয়ে গেছে প্রায় এক হাজার ভরি সোনার গয়নাগাটি। একই দিনে মেহেরপুর সদর উপজেলার শুভরাজপুর গ্রামে এক স্কুলশিক্ষককে গুলি করে হত্যা করে তার নাতিকে অপহরণ করেছে সন্ত্রাসীরা। গত বুধবার রাতে ঘটেছে আরও একটি হত্যার ঘটনা। শেরপুরের শ্রীবর্দীতে এক ব্যবসায়ীকে গুলি করে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। বস্তুত প্রতিদিনই দেশের কোথাও না কোথাও ঘটছে খুনের ঘটনা। এসব হত্যাকাণ্ডের কোনো কোনোটাতে রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা থাকলেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রে হত্যাকাণ্ডগুলো ঘটছে শত্রুতাবশত। দেশে প্রকৃত অর্থে আইনের শাসন থাকলে, অপরাধীদের সাজা হলে খুন-খারাবির ব্যাপকতা কমে আসতো। কিন্তু বাস্তবতা হলো- গত কয়েক বছর ধরে দেশে একের পর এক খুন, গুম, অপহরণ ঘটে চলেছে, অথচ আইনশৃঙ্খলাবাহিনী এসব অপরাধের কোনো কূল-কিনারা করতে পারছে না। ফলে অপরাধীদের মনে এ ধরনের ঘটনা সংঘটনে কোনোরকম ভীতি কাজ করছে না। আলোচিত মামলাগুলোর তদন্তে গতি না থাকায় অপরাধীরা ওই ধরনের ঘটনা ঘটাতে উৎসাহিত হচ্ছে।

 

সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনী হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে প্রায় দেড় বছর আগে। কিছুদিন আগে তাদের অ্যাপার্টমেন্ট ভবনের দারোয়ানের খোঁজ মিললেও মামলার তদন্তে গতি আসেনি। অথচ বলা হচ্ছিলো- তাকে পাওয়া গেলে এ হত্যা রহস্য উদঘাটন করা সহজ হবে। বস্তুত আলোচিত হত্যাকাণ্ডগুলোর সাথে জড়িতদের আইনের আওতায় নিয়ে আসতে ব্যর্থ হয়েছে পুলিশ প্রশাসন। বিএনপি নেতা ইলিয়াস আলী নিখোঁজ হয়েছেন এক বছরেরও বেশি সময় আগে। তার সাথে তার গাড়ি চালকেরও খোঁজ মিলছে না। এক্ষেত্রেও নেই মামলার অগ্রগতি। এসব ক্ষেত্রে পুলিশের গোয়েন্দা ব্যর্থতা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। সরকারের উচিত অবিলম্বে এদিকে নজর দেয়া। যেকোনো অপরাধের ক্ষেত্রে অপরাধীকে দ্রুত শনাক্ত করে শাস্তির আওতায় আনা জরুরি। তা না হলে দেশে অপরাধ প্রবণতা বাড়বে এটাই স্বাভাবিক। শুধু তাই নয়, এর ফলে আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর ওপর জনগণ আস্থা হারিয়ে ফেলবে। এ পরিস্থিতি সরকার বা কারও জন্যই মঙ্গলজনক নয়। আমরা বেশ বুঝতে পারছি, আইনশৃঙ্খলার ব্যাপারে সরকার সচেতন না হলে এবং তাদের দৃষ্টিভঙ্গি না পাল্টালে পরিস্থিতির কোনো উন্নতি হবে না। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর জবাবদিহিতা বলেও কিছু নেই এখন। তারা একের পর এক ব্যর্থ হচ্ছে। অথচ এ ব্যর্থতার দায় নিতে হচ্ছে না তাদের। সাফল্যের জন্য পুরস্কার ও ব্যর্থতার জন্য শাস্তি- এ রীতি অনুসরণ না করলে বর্তমান আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর কাছ থেকে ইতিবাচক কিছু পাওয়া সম্ভব নয়।

 

দেশের যে জায়গায় খুন বা অন্য কোনো অপরাধ সংঘটিত হবে, ওই এলাকার সংশ্লিষ্ট থানাকে অবশ্যই সেই অপরাধের দায় নিতে হবে। জবাবদিহিতার এ বাধ্যবাধকতা ছাড়া পুলিশকে সঠিক পথে ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে না বলে প্রতীয়মান হয়। দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতিকল্পে আর কী কী করা যায়, তা নিয়েও গভীরভাবে ভাবতে হবে সরকারকে। গোয়েন্দা দক্ষতা ও আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর তৎপরতা বৃদ্ধির মাধ্যমেই অপরাধীদের শনাক্ত ও গ্রেফতার করতে হবে।