স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গা-মেহেরপুরসহ দেশের অধিকাংশ এলাকায় আইডিয়াল কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেডের (আইসিএল) নামে হাজার হাজার টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে। ঋণ ও মোটা অঙ্কের লাভের প্রলোভনে ফেলে লগ্নিকারীদের অর্থআত্মসাতের অভিযোগে আইসিএল’র এমডিপত্নী ও প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক কাজী শামছুন নাহার লিমা অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ নিজের ঘাদে না নিয়ে তার দোষ চাপিয়েছেন স্বামী শফিকুর রহমানের ওপর। তিনি জানিয়েছেন, এমডিই প্রতিষ্ঠানটির মালিক।
গতকাল সোমবার বিকেলে জিজ্ঞাসাবাদের পূর্বে দুদকের ওয়েটিংরুমে অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি পরিচালনা পর্ষদের সদস্যমাত্র। দুদক আমায় তলব করায় এসেছি। পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান-এমডি আইসিএল গ্রুপের বিভিন্ন বিষয়ে জানেন। আমি বিস্তারিত জানি না। অপরাধ থাকলে তাদের থাকতে পারে; আমার নয়।’ তাহলে দুদক কেন তলব করেছে? এ প্রশ্নের উত্তরে আইসিএলের এ পরিচালক বলেন- ‘এটা দুদককে জিজ্ঞেস করুন। আমাকে হাজির হওয়ার জন্য নোটিশ দিয়েছে, আমি এসেছি।’ নিজেকে নির্দোষ দাবি করে আইসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) শফিকুর রহমানের স্ত্রী কাজী লিমা বলেন, ‘গ্রাহকের টাকা আত্মসাৎ বলে যেসব অভিযোগ করা হচ্ছে তার সঙ্গে আমি জড়িত নই। কোনো কিছুর দায় আমার উপর বর্তায় না।’
দুদক সুষ্ঠু অনুসন্ধান করলে অন্যদের বিরুদ্ধে অপরাধ পাওয়া গেলেও তার বিরুদ্ধে পাওয়া যাবে না বলে তিনি জানান। বেলা সোয়া ৩টায় এমডিপত্মী কাজী লিমা দুদকের প্রধান কার্যালয়ে আসেন। সাড়ে ৩টা থেকে ৫টা পর্যন্ত চলে তার জিজ্ঞাসাবাদ। অভিযোগ রয়েছে-সাধারণ মানুষের প্রায় সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ করে আইসিএল। এ অভিযোগে প্রতিষ্ঠানটির পরিচালনা পর্ষদকে তলব করে দুদক। সোমবার আইসিএল গ্রুপের এমডির স্ত্রী, চেয়ারম্যান রফিকুল আলম এবং এমডির শ্যালক মো. আনিসুর রহমান বাবু দুদকের তলবে সাড়া দেন। সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত পর্যায়ক্রমে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে দুদকের অনুসন্ধান টিম। সংস্থাটির উপপরিচালক মো. নাসির উদ্দিনের নেতৃত্বে একটি টিম তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করেন।
এদিকে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে বিকেলে দুদক কমিশনার সাহাবউদ্দিন চুপ্পু অনানুষ্ঠানিক এক ব্রিফিঙে বলেন, ‘আইসিএল যেভাবে লোভ দেখিয়ে সদস্য সংগ্রহ করেছে এবং তাদের কার্যক্রম চালিয়েছে তা সম্পূর্ণরুপে বেআইনি।’ দুদকের প্রধান এ নির্বাহী আরও বলেন, ‘আইসিএল অনেকটা এমএলএম (মাল্টি লেভেল মার্কেটিং) পদ্ধতিতে তাদের কার্যক্রম চালিয়ে মানুষের কাছ থেকে মুনাফা দেখিয়ে টাকা নিয়েছে। এতে সাধারণ মানুষ তাদের প্রতারণার শিকার হয়েছে।’ দুদকে আসা অভিযোগে দেখা যায়, আইসিএল ২০০১ সাল থেকে মুনাফার লোভ দেখিয়ে গ্রাহকদের কাছ থেকে টাকা আত্মসাৎ করে। এছাড়া তাদের ডিপিএস, মাসিক মুনাফা, দ্বিগুণ বৃদ্ধি আমানত, শিক্ষা আমানত, আবাসন আমানত, ব্যবসায়িক আমানত, দেনমোহর আমানত, কোটিপতি ডিপোজিট স্কিম, লাখপতি ডিপোজিট স্কিম প্রকল্পের নামেও বিপুল পরিমাণ মানুষের কাছ থেকে অর্থ সংগ্রহ করে।
জানা গেছে, পাঁচ লাখ গ্রাহকের কাছ থেকে প্রতিষ্ঠানটির সংগৃহীত আমানতের পরিমাণ প্রায় তিন হাজার কোটি টাকা। প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) শফিকুর রহমানকে গত ২২ আগস্ট কুমিল্লায় গ্রেফতার করা হয়। এরপর ২৫ আগস্ট জামিন পান।