মাথাভাঙ্গা মনিটর: মালয়েশিয়ার নিখোঁজ বিমান নিয়ে সবার দৃষ্টি এখন পাইলটদের প্রতি। ওই বিমানের প্রধান পাইলট মালয়েশিয়ার বিরোধীদলীয় নেতা আনোয়ার ইব্রাহিমের অনুসারী। সম্প্রতি আনোয়ার ইব্রাহিমকে আদালতে হাজির করা হলে সেখানে উপস্থিত হন ওই পাইলট। তার নাম জাহারি আহমদ শাহ। এছাড়া এক সময় তার গায়ে রাজনৈতিক স্লোগান সংবলিত টি-শার্ট দেখা যায়। তাতে তার বুকের ওপর লেখা- ‘ডেমোক্রেসি ডেড’। অর্থাৎ মালয়েশিয়ায় গণতন্ত্র নেই, গণতন্ত্রের মৃত্যু হয়েছে। এ থেকে তার রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠেছে। আলোচনা-সমালোচনায় উঠে আসছে দু পাইলটের নাম। তাদের আরেকজন হলেন সহপাইলট ফারিক আবদুল হামিদ। মতাদর্শের দিক থেকে তাদের মধ্যে ছিলো দ্বন্দ্ব। এমএইচ-৩৭০ ফ্লাইটটিতে তারা দুজনে এক সাথে যেতে অস্বীকৃতিও জানিয়েছিলেন। ফলে বিমানটি উড্ডয়নের পর তাতে কি ঘটেছিলো তা আন্দাজ করা যাচ্ছে না। রহস্য ঘনীভূত হচ্ছে তাদেরকে কেন্দ্র করে। যখন প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাক ঘোষণা দিয়েছেন বিমানের ভেতর থেকে কেউ একজন ট্রান্সপন্ডার অচল করে দিয়েছিলো, তখন অনেকেরই দৃষ্টি চলে যায় দু পাইলটের দিকে। তাদের নিয়ে দেখা দেয়া সন্দেহ। এ নিয়ে দিনকে দিন রহস্য বাড়ছে। তবে কোনো প্রশ্নের উত্তর মিলছে না। ওদিকে নিখোঁজ বিমানের সর্বশেষ কথা ছিলো ‘অল রাইট, গুড নাইট’। অর্থাৎ সব কিছু ঠিক আছে। শুভ রাত্রি। এ কথাগুলো বিমানটির ক্যাপ্টেন জাহারি আহমদ শাহ-এর ছিলো না। এ কথা কয়টি বলেছিলেন সহপাইলট ফারিক আবদুল হামিদ। ওদিকে বিমানে আরোহণের আগে ক্যাপ্টেন জাহারিকে নিরাপত্তা রক্ষাকারীরা তল্লাশি করছেন এমন ফুটেজ প্রকাশ করা হয়েছে। এরপর সহপাইলট ফারিক হামিদকেও তল্লাশি করা হয়। মালয়েশিয়ার বিরোধী দলীয় নেতা আনোয়ার ইব্রাহিমের সমর্থক জাহারি আহমদ শাহ। ঘটনা আরও জট পাকিয়েছে। কারণ, বোয়িং ৭৭৭ বিমানটি যেদিন নিখোঁজ হয়ে যায় তার আগের দিন তার স্ত্রী ছেলেমেয়েকে সাথে নিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যান। ওই ফ্লাইটের দু পাইলট একসাথে বিমানে যেতে চাননি। এমন তথ্য প্রকাশ করেছে মালয়েশিয়ার পুলিশ। তবে সহপাইলট হামিদ খুব নমনীয় স্বভাবের এবং তিনি একজন মেধাবী পাইলট, এ কথা বলেছেন তার বন্ধুরা। এমএইচ-৩৭০ ফ্লাইটটি ২৩৯ আরোহী নিয়ে কুয়ালালামপুর থেকে চীনের উদ্দেশে উড্ডয়নের কিছুক্ষণ পরে নিখোঁজ হয়ে যায়। নিয়ন্ত্রণ কক্ষের সাথে সব যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এরপর থেকে বিমানটি ও এর আরোহীদের কি হয়েছে তা এক গভীর রহস্যে ঘেরা। প্রায় দু ডজন দেশ মিলে বিমানটিকে খুঁজে পাচ্ছে না। কোনো রাডারেও ধরা পড়েনি তা। ফলে এ নিয়ে নানা গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়ছে। অনেকে বলছেন, ভিন গ্রহ থেকে আসা এলিয়েনরা ছিনতাই করেছে বিমানটি। আবার কেউ বলছেন, ফিলাডেলফিয়া এক্সপেরিমেন্টের মতো এ বিমানটি নিয়েও পরীক্ষা চালানো হয়েছে। কখনও বৃটিশ সন্ত্রাসীরা বলছে, জুতা বোমা ব্যবহার করা হয়ে থাকতে পারে বিমানে। আবার কোনো কোনো পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, মোবাইলফোন ব্যবহার করে বিশ্বের প্রথম সাইবার আক্রমণ চালানো হয়েছে ওই বিমানে। এটি বিচ্ছিন্ন কোন দ্বীপে অবতরণ করানো হতে পারে। এসবই গুঞ্জন। এর কোনটিরই সত্যতা মিলছে না। এর আগে বলা হয়েছিলো, বিমানটি থেকে সর্বশেষ কথাটি এসেছিলো ক্যাপ্টেন জাহারি আহমদ শাহ-এর কাছ থেকে। কিন্তু মালয়েশিয়ার কর্মকর্তারা তা সংশোধন করেছেন। তারা বলেছেন, ওই কথাটি বলেছিলেন সহপাইলট ২৭ বছর বয়সী ফারিক আবদুল হামিদ। বিমানের রিলে ডাটা যখন অচল হয়ে পড়ে তার পরই তিনি ট্রাফিক কন্ট্রোলের সাথে এ কথাগুলো বলেন। বিমানের একটি যোগাযোগ ব্যবস্থা বিকল হয়ে যাওয়ার পর এমন বক্তব্য আসে সহপাইলটের কণ্ঠ থেকে। এতে কোনো বিপদের আভাসও পাওয়া যায় না। ফলে বিমানের কেউ হয়তো জানতো এর নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা সম্পর্কে। সেই বিমানটিকে দিক পরিবর্তন করিয়ে অন্য দিকে নিয়ে যেতে পারে। ওদিকে গতকাল সংবাদ সম্মেলন করেছেন মালয়েশিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রী হিশামউদ্দিন হোসেন। তিনি বলেছেন, বিমানটি খুঁজে পাওয়া এখন তাদের প্রধান লক্ষ্য। এটি অক্ষত অবস্থায় পাওয়ার আশা এখনও তিনি ত্যাগ করেন নি। তিনি বলেন, কোন বিপদজনক সংকেত ছিলো না। কোন পণ চাওয়া হয়নি। কোনো পক্ষ থেকে বিমানটি নিখোঁজ হওয়ার বিষয়ে দায়িত্ব স্বীকার করা হয়নি। তাই সব সময়ই আমাদের মাঝে আশা বেঁচে আছে। কর্মকর্তারা বলছেন, এখনও বিমানটি কোথাও অবতরণ করেছে বলে তারা বিশ্বাস করতে চান। তারা বিমানটির সাথে যোগাযোগের জন্য উপগ্রহের মাধ্যমে সঙ্কেত পাঠাচ্ছেন। তবে মার্কিন সিনিয়র কর্মকর্তারা বলছেন, বিমানটি ভবিষ্যতের সন্ত্রাসী হামলা হিসেবে পরিচালিত হয়ে থাকতে পারে। এর মাধ্যমে সন্ত্রাসীরা পরীক্ষা করতে চাইছে যে বিমানকে রাডার ও উপগ্রহ এড়িয়ে ছিনতাই করা যায় কিনা। এফবিআই গোয়েন্দারা বলছেন, এমএইচ ৩৭০ ফ্লাইটটি অদৃশ্য হয়ে যাওয়া হতে পারে একটি পাইরেসি। হতে পারে বিমানের আরোহীদের কোন অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।