তিনজন সাবেক চেয়ারম্যানকে হারিয়ে বিজয়ের হাসি হাসলেন আজিজুর রহমান

 

পুনর্নির্বাচিত হওয়ার মতো আস্থা অর্জন করেননি কেউ?

স্টাফ রিপোর্টার: দামুড়হুদা উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে কেউই পুনর্নির্বাচিত হননি। পুনর্নির্বাচিত হওয়ার মতো ভোটারদের মন জয় করতে পারেননি তারা। প্রথম নির্বাচনে ফজলুর রহমান, দ্বিতীয় নির্বাচনে লিয়াকত আলী শাহ, তৃতীয় নির্বাচনে আজাদুল ইসলাম আজাদের পর এবার এলেন আজিজুর রহমান। তিনি কি ভোটারদের আস্থা ধরে রাখতে পারবেন? নাকি পূর্বসুরীদের মতো তাকেও ছিটকে পড়তে হবে আগামী নির্বাচনে। গতপরশু দামুড়হুদা উপজেলা নির্বাচনে সাবেক তিনজনকে পরাজিত করে জামায়াতের মাও. আজিজুর রহমানের জয়লাভের পর এরকমই প্রশ্ন এখন সাধারণ ভোটারদের মনে।

দেশের ইতিহাসে উপজেলা পরিষদের প্রথম নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ১৯৮৫ সালে। ওই নির্বাচনে তৎকালীন বাঘা বাঘা নেতাদের পরাজিত করে নির্বাচিত হয়েছিলেন জুড়ানপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ফজলুর রহমান। এরপর দ্বিতীয় দফা উপজেলা পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ১৯৯০ সালে। ওই নির্বাচনে চেয়ারম্যান ফজলুর রহমানসহ বেশ কয়েকজনকে পরাজিত করে নবাগত হিসেবে লিয়াকত আলী শাহ নির্বাচিত হন। তৃতীয় দফার উপজেলা পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ২০০৯ সালে। এ নির্বাচনে লিয়াকত আলী শাহ্‌সহ বেশ কয়েকজনকে হারিয়ে নির্বাচিত হন আওয়ামী লীগের আজাদুল ইসলাম আজাদ। ২০১৪ সালে অনুষ্ঠিত চতুর্থ উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের আজাদুল ইসলাম আজাদ, বিএনপির ফজলুর রহমান ও লিয়াকত আলী শাহ, সাবেক এ তিন চেয়ারম্যানকে পরাজিত করে বিজয়ী হয়েছেন নতুন মুখ আজিজুর রহমান। এরা প্রত্যেকেই একবার করে উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন। কিন্তু, কেউই দ্বিতীয় বার আর নির্বাচিত হতে পারলেন না। তাই দামুড়হুদা উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে পরবর্তীতে কি আবার নতুন মুখ আসবে? নাকি নবাগত চেয়ারম্যান আজিজুর রহমান দ্বিতীয়বার নির্বাচিত হয়ে ভাঙবেন বিগত দিনের রেকর্ড।

উপজেলা পরিষদে ভাইস চেয়ারম্যান পদে প্রথমবার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ২০০৯ সালে। দামুড়হুদা উপজেলা নির্বাচনে প্রথমবার ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবে নির্বাচিত হয়েছিলেন- আওয়ামী লীগের অ্যাড. রফিকুল আলম রান্টু ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন রওশন আকবর লাইলী। অ্যাড. রফিকুল আলম রান্টু আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী নির্বাচনে বাদ পড়েন এবং নির্বাচনে অংশ নেননি। রওশন আকবর লাইলী আওয়ামী লীগের দলীয় সমর্থন পেলেও নির্বাচনে পরাজিত হয়ে বাদ পড়েন। এবার ভাইস চেয়ারম্যান পদে আব্দুল কাদের (জামায়াত) ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ছালমা জাহান (বিএনপি) নির্বাচিত হয়েছেন। দামুড়হুদা উপজেলা পরিষদ নির্বাচন নিয়ে বেশ কয়েকজন রাজনীতিবিদের সাথে কথা বললে তারা নির্বাচনে পরাজয়ের কারণ সম্পর্কে বেশকিছু বিষয় তুলে ধরেছেন। এ ব্যাপারে দামুড়হুদা উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি সিরাজুল আলম ঝন্টু জানান, আওয়ামী লীগের প্রার্থী আজাদুল ইসলাম আজাদ নির্বাচনের আগে অসুস্থ ছিলেন। এছাড়া, উপজেলায় দায়িত্ব পালনকালে তিনি সিনিয়র নেতাদের সন্তুষ্ট করতে পারেননি। সে কারণে তারা ফেডআপ ছিলেন। দলীয় নেতা-কর্মীদের সমন্বয়হীনতার কারণে এ পরাজয়। দামুড়হুদা উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মনিরুজ্জামান মনি জানান, বিএনপির দাবিদার দু প্রার্থী হওয়ায় ভোটাররা রাগে-ক্ষোভে জামায়াতকে ভোট দিয়েছেন। এটাই বিএনপির পরাজয়ের মূল কারণ। এ ব্যাপারে দামুড়হুদা উপজেলা যুবদলের সভাপতি মোকাররম হোসেন জানান, ভোটের শেষ সময়ে ফজলুর রহমানের পক্ষে ফ্যাক্সবার্তা আসায় ভোটাররা ক্ষুব্ধ হয়েছেন। যে কারণে বিএনপির পরাজয় ঘটেছে।

দামুড়হুদা উপজেলা জামায়াতের আমির নায়েব আলী জানান, বর্তমান সরকার জামায়াতের নেতা-কর্মীদের ওপর যে জুলুম-নির্যাতন করেছে তারই বহির্প্রকাশ তাদের দু প্রার্থী বিজয়ী হওয়া। স্বতঃস্ফূর্তভাবে মানুষ তাদেরকে ভোট দিয়েছেন। চুয়াডাঙ্গা ওয়ার্কার্স পার্টি জেলা সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম শেখ জানান, আওয়ামী লীগের আভ্যন্তরীণ বিভেদ, টিমওয়ার্ক না থাকা ও আত্মঅহমিকার কারণে এ পরাজয় ঘটেছে। চুয়াডাঙ্গা জেলা জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. এসএম রফিউর রহমান জানান, ১৯ দলীয় জোটের তিনজন প্রার্থী থাকায় ভোটাররা তাদের পছন্দের প্রার্থীকে বেছে নিয়েছেন।