চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে জামায়াতের বিজয়

 

ক্ষুব্ধ সাধারণ সমর্থক : গৃহদাহে অঙ্গার বিএনপিকে গ্রাস করছে জামায়াত

স্টাফ রিপোর্টার: উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে জামায়াতের মাও. আজিজুর রহমান নির্বাচিত হয়েছেন। বিগত তিন উপজেলা নির্বাচনে বিজয়ী বাঘা বাঘা তিনজন সাবেক চেয়ারম্যানকে পরাজিত করে তার নির্বাচিত হওয়ার বিষয়টি বেশ আলোচিত হয়ে উঠেছে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের কাছে। অনেকেরই অভিমত, দামুড়হুদা উপজেলা নির্বাচনে বিএনপির একাধিক প্রার্থী এবং দলীয় নেতাকর্মী ভাগাভাগির সুফল ঘরে তুলেছে জামায়াতে ইসলামী। সে হিসেবে বলা যায়, গৃহদাহে অঙ্গার বিএনপিকে গ্রাস করছে জামায়াত।

উপজেলা পরিষদ অরাজনৈতিক হলেও এবারের নির্বাচন রাজনৈতিকভাবেই হচ্ছে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ যেমন একক প্রার্থী দিয়ে জয় নিশ্চিত করতে মরিয়া, তেমনই বিএনপি ও জামায়াতও দলীয়ভাবে প্রার্থী দিয়ে ভোটযুদ্ধে নামছে। জামায়াত-বিএনপি জোটভুক্ত হলেও অধিকাংশ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আলাদা আলাদাভাবে ভোটযুদ্ধে মেতেছে তারা। চুয়াডাঙ্গার ৪টি উপজেলার মধ্যে তৃতীয় ধাপে দামুড়হুদা উপজেলা নির্বাচন গত শনিবার সম্পন্ন হয়েছে। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে কেন্দ্র দখলসহ ভোট কারচুপির অভিযোগ উত্থাপন হলেও প্রায় ১০ হাজার ভোটের ব্যবধানে নির্বাচিত হয়েছেন জামায়াত সমর্থিত প্রার্থী মাও. আজিজুর রহমান। প্রথম দিকে তিনি তেমন আলোচনায় না থাকলেও শেষপর্যন্ত তিনিই বিজয়ের হাসি হাসলেন। তার নির্বাচিত হওয়াকে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকমহল নানাভাবে দেখছে। তাদের অনেকেরই অভিমত, চুয়াডাঙ্গা বিএনপি বহুভাগে বিভক্ত। নির্বাচনে একক প্রার্থী নিশ্চিত করতে না পারায় বিএনপির তৃণমূল নেতা-কর্মীরা যেমন বিভক্ত হয়ে পড়েন, তেমনই সমর্থকরাও হন ক্ষুব্ধ। সেই ক্ষোভের কারণেই বিএনপি থেকে মুখ ফিরিয়ে তারা জামায়াতের দিকে ঝুঁকেছে। বিএনপির কোন্দলকেই জামায়াতে ইসলামী মূলত সুযোগ হিসেবে কাজে লাগিয়েছে। অবশ্য সেই সুযোগটা চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার ক্ষেত্রে তারা প্রার্থী না রাখায় হাতছাড়া হয়েছে। দামুড়হুদা উপজেলা নির্বাচনে জয়ের পর চুয়াডাঙ্গা সদরের পেক্ষাপটে তাদের অনেকেই পস্তাচ্ছেন বলেও গুঞ্জন রয়েছে। দামুড়হুদা উপজেলা নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী ছিলেন দুজন। দুজনই উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান। এরা হলেন- লিয়াকত আলী শাহ ও ফজলুর রহমান। লিয়াকত আলী শাহকে জেলা বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা দেয়া হয়। ফজলুর রহমানকে বিএনপির একক প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা দেয় জেলা বিএনপির একাংশ। নির্বাচনের একদিন আগে কেন্দ্রীয়ভাবে জানানো হয়, ফজলুর রহমানই বিএনপির একক প্রার্থী। এসব নিয়ে শুধু বিভ্রান্তিই ছড়ায়নি, বিএনপির সমর্থকদের মধ্যে বাড়ে ক্ষোভ। তারই বহির্প্রকাশ বিএনপির দু প্রার্থীরই করুণ পরাজয়। এক সময়ের বিএনপি অধ্যুষিত এলাকা হিসেবে পরিচিত দামুড়হুদায় বিএনপির করুণ অবস্থা দেখে রাজনৈতিক সচেতন অনেকেই মন্তব্য করতে গিয়ে বলেছেন, বিএনপি ধ্বংস হচ্ছে বিএনপির কারণেই। কেন্দ্রীয়ভাবে না আছে নিয়ন্ত্রণ, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে না আছে চেইন অব কমান্ড। সকলেই নেতা সাজতে গিয়ে বিএনপির এখন করুণ দশা। অবশ্য উপজেলা নির্বাচনে বিএনপির বহু প্রার্থী হওয়ার আড়ালে জামায়াতের কুটকৌশল আছে বলেও উপজেলা বিএনপির অনেকেরই অভিযোগ। দামুড়হুদা উপজেলা নির্বাচনে জামায়াতের জয়লাভের প্রেক্ষিতে আসন্ন সংসদ নির্বাচনে ১৯ দলীয় জোটের মনোনয়ন বিএনপির হাতছাড়ার আশঙ্কাকে জোরদার করে তুললো। অবশ্য জামায়াতের কর্মী সমর্থকদের বক্তব্য ভিন্ন। তাদের দাবি, জামায়াতে ইসলামী দীর্ঘদিন ধরে দামুড়হুদায় ধীরে ধীরে সাংগঠনিক ভিত মজবুত করে তুলেছে। তারই সুফল মিলতে শুরু করেছে।

জামায়াতের সাথে জোটভুক্ত হয়ে বিএনপি লাভবান হচ্ছে? চুয়াডাঙ্গা বিএনপির দিন দিন পতনের ধরণ দেখে অনেকেই মন্তব্য করতে গিয়ে বলেছেন, সাবেক সংসদ সদস্য হাজি মো. মোজাম্মেল হকের বিরুদ্ধে দর্শনার আখতারুল ইসলামের উত্থানের আড়ালে জামায়াতের সূক্ষ্ম সহযোগিতার বিষয়টি দীর্ঘদিন ধরেই আলোচিত। পরবর্তীতে চুয়াডাঙ্গা-২ আসন এলাকায় বিএনপিকে বহু ভাগে বিভক্তির আড়ালেও আছে সূক্ষ্ম রাজনীতি। এরকম সন্দেহ ঘনীভূত হলেও বিএনপি নেতাদের অদূরদর্শিতাই মূলত পতনের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এলাকার সাধারণ কর্মী-সমর্থকরা উপজেলা নির্বাচনে করুণ পরাজয়ের পর এরকমই মন্তব্য করে বলেছে, কেন্দ্রীয়ভাবে শক্ত হাতে বিরোধ নিষ্পত্তি না করলে বিএনপির অস্তিত্ব খুঁজতে হবে ল্যাম্প জ্বালিয়ে।