যে কবিরাজের দাওয়াই সেবনে শিশুর মৃত্যু হয়েছে সেই কবিরাজের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা হবে না কেন? হয় না বলেই তো ওই ধরনের প্রতারকরা সমাজে প্রকাশ্যে প্রতারণার সুযোগ পায়। প্রাণ হারায় সরল-সোজা পিতা-মাতার অবুঝ সন্তান। অসংখ্য মানুষ জটিল রোগে আক্রান্ত হয়ে দুর্বিষহ যন্ত্রণা নিয়ে জীবনের অবশিষ্ট দিনগুলো পার করে। প্রতিকার মেলে না। চিকিৎসার নামে অপচিকিৎসা রোধে দেশে আইন প্রচলিত থাকলেও তার যথাযথ প্রয়োগের অভাবে সরল-সোজা মানুষগুলো প্রতারিত হয়। হচ্ছে। অবশ্য সচেতনতার অভাবও প্রতারিত হওয়ার জন্য কম দায়ী নয়।
অবশ্যই এক সময় অধিকাংশ মানুষ কবিরাজদের ওপরই নির্ভরশীল ছিলেন। প্রয়োজনের তাগিদেই মানুষ সুচিকিৎসা নিশ্চিত করার পথে হেঁটেছে। তারই সুফল আজকের স্বাস্থ্যবিজ্ঞান। অত্যাধুনিক যুগে স্বাস্থ্যবিজ্ঞান যখন অপারেশন থিয়েটারে শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ কেটে ছিঁড়ে প্রতিস্থাপন করে চোখের পলকে শুকিয়ে দিচ্ছে ক্ষত, তখনও সমাজে তথাকথিত কবিরাজি তথা অনুমাননির্ভর অপচিকিৎসা থাকে কীভাবে? জানা-বোঝার অভাবের কারণেই তথাকথিত ওঁঝা-কবিরাজদের অপতৎপরতা জিইয়ে রয়েছে।
ভাবতেও গা শিউরে ওঠে, চিকিৎসার নামে যে দাওয়াই দেয়া হয়েছে, তা সেবনে ফুটফুটে এক শিশু ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়েছে। যখন ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়েছে তখনও প্রতারক কবিরাজ শিশুকে হাসপাতালে নেয়ার পরামর্শ দেয়নি। শিশুর পিতা-মাতাও হাসপাতালে নেয়ার তাগিদ অনুভব না করে কবিরাজের ওপর নির্ভরশীল হয়ে সন্তানের সুস্থতা কামনা করেছেন। শেষ পর্যন্ত শিশু মারা গেছে। এ ঘটনাটি ঘটেছে চুয়াডাঙ্গা জেলা সদরের বোয়ালমারী গ্রামে। গতকাল দৈনিক মাথাভাঙ্গা পত্রিকায় এ সংক্রান্ত বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।
চিকিৎসার নামে শুধু কি গ্রাম মহল্লার কবিরাজ ওঁঝারাই প্রতারণা করছে? ওঁঝা-কবিরাজদেরও সচেতনতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠা সঙ্গত। অনেকেই বংশপরম্পরায় পৈত্রিক পেশা হিসেবে পূর্বপুরুষের দেখিয়ে দেয়া বা চিনিয়ে দেয়া গাছ গাছড়ার শেকড় বাকড় দিয়ে চিকিৎসা দিয়ে থাকে। ওঁঝাদেরও অনেকে আছে ওস্তাদ ধরে শিখেছে। মন্ত্রতন্ত্রে কাজ হয় না, শেকড় বাকড়ে বিপত্তি ডেকে আনতে পারে। এসব বিষয়ে ওদেরকে দায়িত্বশীল করতে হলে অবশ্যই সচেতনমূলক প্রশিক্ষণের পাশাপাশি সতর্ক করা দরকার। সতর্ক করেও কাজ না হলে উপযুক্ত শাস্তি নিশ্চিত করলে ওদের অপতৎপরতা বন্ধ হতে বাধ্য। তাতে সমাজে সচেতনতার আলোছড়াতেও সহায়ক হবে।
শুধু কি তথাকথিত ওঁঝা-কবিরাজ? সরকারি বড় বড় স্বাস্থ্য কেন্দ্রের আশে পাশেও চিকিৎসার নামে অপচিকিৎসা তথা প্রতারণার দোকান খোলা হয়েছে। স্বাস্থ্য প্রশাসনের দৃষ্টি সেদিকে খুব একটা পড়ে না। কেন পড়ে না, কেন অপচিকিৎসা বন্ধে স্বাস্থ্য প্রশাসনের কর্তাদের নড়াচড়া নেই, তাও বোদ্ধাদের অজানা নয়। অনিয়ম-দুর্নীতি মুক্ত স্বাস্থ্য প্রশাসনই পারে সর্বস্তরে সুচিকিৎসা নিশ্চিত করতে। আইনের যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত করার পাশাপাশি সচেতনতার আলো ছড়িয়েই বন্ধ করতে হবে স্বাস্থ্য সেবার নামে প্রতারণা। অপচিকিৎসায় মৃত্যু হলে হত্যা হিসেবে গণ্য করেই বিচার করা প্রয়োজন।