হঠাৎ করেই আবার বেড়েছে চালের দাম। গত সপ্তায় যে চালের কেজি ৩৫ টাকা ছিলো, সেই চালই এখন বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকায়। তবে এ সময়ে চালের দাম বেড়ে যাওয়ার কোনো কারণ নেই বলে দাবি করেছেন আড়তদাররা। খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, চালের সরবরাহ বাজারে কম থাকার কারণে দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। ক্রেতাদের অভিযোগ, সরকারি নজরদারির অভাবেই বাজারে চালের দাম বেড়েছে। সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী এই বৃদ্ধিকে ইতিবাচক হিসেবেই দেখছেন। তার মতে এর ফলে কৃষকরা দাম বেশি পাবে। এ দেশের কৃষকরা ন্যায়মূল্য কি কখনো পেয়েছে? বাংলার কৃষকরা সব সময়েই বঞ্চিত। চালের দাম কেজিপ্রতি ৫ টাকা বাড়ার কারণে স্বল্পআয়ের মানুষ যে সমস্যায় পড়বে তা বলাই বাহুল্য।
হঠাৎ করে চালের দাম বাড়ার যৌক্তিক কোনো কারণ নেই। এটা অতি মুনাফাখোর ও লোভী ব্যবসায়ীদের কারসাজি। তারা একেক সময় একেক অজুহাত তুলে পণ্যের দাম বাড়িয়ে দেয়। তারা কখনোই ক্রেতাদের স্বার্থ বিবেচনা করে না। যেমন তারা ইচ্ছেমতো বাড়িয়ে দিয়েছিলো পেঁয়াজের দাম। বিক্রেতাদের অভিমত ‘আমরা বেশি মূল্য দিয়ে কিনলে কম মূল্যে বিক্রি করব কীভাবে?’ বেশি মূল্য দিয়ে কিনেছে- তাদের এই বক্তব্য কি প্রমাণ সাপেক্ষ? চাল ও পেঁয়াজের ক্ষেত্রে তারা যে অজুহাত তুলেছে এই অজুহাত অত্যন্ত পুরোনো। আমাদের প্রশ্ন হচ্ছে, ভাতপ্রধান বাঙালি যদি তাদের চাহিদামতো চাল কিনতে না পারে, তবে এর চেয়ে দুঃখজনক ঘটনা আর কী হতে পারে। বিশেষ করে মোটা চালের দামবৃদ্ধি কোনোভাবেই যুক্তিসঙ্গত নয়। কারণ দেশের স্বল্পআয়ের মানুষ মোটা চাল নির্ভর। তাদের পরিবারে অধিকসংখ্যক পোষ্য থাকায়, চালের পরিমাণও বেশি লাগে। মনে রাখতে হবে চালের দাম বেড়ে গেলে সবকিছুর দাম বেড়ে যায়। সুতরাং যে করেই হোক, চালের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতেই হবে।
আসলে পণ্যের সরবরাহ বা সংকটের সঙ্গে দাম বাড়ার কোনো সম্পর্ক নেই। এটা হচ্ছে ব্যবসায়ীদের হীন মানসিকতা। তারা একেক সময় একেক পণ্যের দাম বাড়িয়ে ক্রেতাদের পকেট কেটেছে এবং দুবছর আগেও পেঁয়াজের কেজি হয়েছিলো ১৪০ টাকা, আর এবার হয়েছে ২৭০ টাকা। পেঁয়াজের দাম অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। ভরা মৌসুমেও মানভেদে দেশি পেঁয়াজ ৮০ থেকে ১০০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। একইভাবে তারা চিনির দামও বাড়িয়েছিলো। লবণের দাম বাড়ানোর চেষ্টা করেছিলো। আর চাল পেঁয়াজের দাম তো নানা অজুহাতে কয়েক দফা বাড়লো। এটা তাদের অসুস্থ ব্যবসায়িক-সংস্কৃতি। এটা হচ্ছে বাজার সিন্ডিকেটের কারসাজি। এরা কখনোই জনগণের স্বার্থের দিকে নজর দেয় না। এরা বাজার সন্ত্রাসী। কীভাবে অসৎ উপায় অবলম্বন করে দ্রুত ধনী হবে এটাই তাদের প্রধান উদ্দেশ্য। ফলে তাদের কাছে দেশের অসহায় জনগণ জিম্মি হয়ে পড়ে বারবার। ক্ষেত্র বিশেষ সরকারও তাদের কাছে জিম্মি। চাল পেঁয়াজের অস্বাভাবিক দাম বৃদ্ধি এর বড় প্রমাণ। বাজার নিয়ে অতীতে অনেক পদক্ষেপ ও পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে, প্রচুর লেখালেখি হয়েছে, কোনো কাজ হয়নি। বিক্রেতাদের মানসিকতার কোনো পরিবর্তন হয়নি। এটা সত্যিই দুর্ভাগ্যজনক। বিক্রেতাদের মানসিকতার পরিবর্তন যতোদিন না ঘটবে ততদিন পেঁয়াজ চালসহ নিত্যপণ্যের বাজার অস্থির থাকবেই এবং দেশের জনগণও তাদের কাছে জিম্মি থাকবে।