মাজেদুল হক মানিক: শহরের বুকচিরে পিচঢালা প্রধান সড়ক। ভোর থেকেই সড়ক ব্যস্ততার মাঝে শালিক পাখির কিচিরমিচির আওয়াজ ভেসে আসে। গাছ-গাছালি, বৈদ্যুতিক ও টেলিফোন লাইনের খুঁটি, দোকান ঘরের ছাদ এবং রাস্তায় ছোটাছুটি করছে অসংখ্য শালিক পাখি। এমন পরিবেশের মধ্যেই খাবার হাতে দাঁড়ালেন কয়েকজন ব্যবসায়ী। এ যেন সন্তানের প্রতি মায়ের আদর। ঝাঁকে ঝাঁকে পাখিগুলো খাবারের কাছে উড়ে পড়ে। পরম মমতায় খাবারগুলো ছিটিয়ে দিয়ে পাখিগুলোর উদরপুরে দিলেন ব্যবসায়ীরা।
মেহেরপুরের গাংনী উপজেলা শহরে প্রতিদিন ভোরে এমনই দৃশ্য দেখা যায়। এ যেন মুক্ত আকাশের পাখির সাথে মানুষের অন্তরের মিতালি। নির্ভয়ে পাখিগুলো মানুষের কাছাকাছি ছুটে বেড়াচ্ছে খাবারে খোঁজে। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা ছাড়াও পথচারীরাও খাবার দিয়ে আনন্দ উপভোগ করেন। এর মধ্যে সংরক্ষণ হচ্ছে এসব পাখিগুলো। যা পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় এক অনন্য দৃষ্টান্ত বলে মন্তব্য স্থানীয়দের।
গাংনী বাজারের পিঁয়াজু বড়া বিক্রেতা রফিকুল ইসলাম ও রিপন হোসেনসহ কয়েকজন ৫/৬ বছর ধরে পাখিদের খাবার দিয়ে আসছেন। তাদের দেখাদেখি খাবার বিতরণকারীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। বৃদ্ধি পাচ্ছে পাখির সংখ্যাও।
বড়া বিক্রেতা রফিকুল ইসলাম বলেন, সারাদিন বড়া বিক্রির পরে অবশিষ্ট যে কুচিগুলো থাকতো তা শালিক পাখিরা খেয়ে যেতো। এরপরে আমরা দিন শেষে একসাথে গুছিয়ে রেখে পরদিন ভোরে খাবার ছিটানো শুরু করি। এতে পাখির সংখ্যা বাড়তে থাকে। বড়া বিক্রেতা রিপন হোসেন বলেন, দুয়েকটি শালিক পাখিকে খাবার দিতে দিতে এখন কয়েক হাজারে পৌঁছেছে। আমরা এদেরকে সন্তানের মতোই দেখি। চানাচুর, বড়ার কুচিসহ বিভিন্ন প্রকার খাবার খায় এসব শালিক পাখি। পথচারী গাংনী ঈদগাপাড়ার জিল্লুর রহমান গত রোবাবর ভোরে গাংনী বাসস্ট্যান্ডে চানাচুর ও মুড়ি ছিটাচ্ছিলেন। সেখানে হাজারো পাখি খাবারের জন্য জড়ো হয়।
জিল্লুর রহমান প্রতিক্রিয়ায় বলেন, পাখি দেখতে সুন্দর। পাখি তো সকলেই ভালোবাসে। এসব মুক্ত বিহঙ্গ খাবারের জন্য আমার কাছে আসছে এটা খুবই আনন্দের।
এদিকে গাংনী বাসস্ট্যান্ড ছাড়াও গাংনী কাঁচা বাজারে প্রতিদিন সকালে স্থানীয়রা বিভিন্ন প্রকার খাবার ছিটিয়ে দেয় শালিক পাখিদের জন্য। কাঁচা বাজারের শ্রমিক সর্দ্দার কালু মিয়া বলেন, পাখির খাবার খাওয়াতে খুব ভালো লাগে। এ বাজারের পক্ষ থেকে প্রতিদিন আমরা খাবার দিচ্ছি। বিপুল পরিমাণ শালিক পাখির দেখা মিলবে গাংনী উপজেলা শহরসহ আশেপাশে। শহর সংলগ্ন বিভিন্ন স্থাপনা ও গাছে ঝাঁকে ঝাঁকে মিলবে শালিক পাখির বিচরণ। দিন ও রাতে নিরাপদে থাকার পর ভোর থেকে বাসস্ট্যান্ড ও কাঁচা বাজার এলাকায় খাবার খায় এসব শালিক পাখি। পাখির দেখভালের বিষয়ে গাংনী বাজার কমিটি সভাপতি মাহবুবুর রহমান স্বপন বলেন, বাজারের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের চিন্তা ও ধ্যান ধারণার মধ্যে শালিক পাখিগুলোর অস্তিত্ব বিরাজ করছে। শুধু খাবার প্রদান নয় পাখিদের নিরাপত্তার জন্য ব্যবসায়ীরা সজাগ। কেউ যাতে পাখিগুলোর ক্ষতি সাধন না করতে পারে। পাখিগুলোকে সংরক্ষণের চেষ্টা করছি আমরা। এ পাখি সম্পর্কে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ভাত শালিক, গাঙশালিক, ঝুটি শালিক ও কারো শালিক দেখা মিলবে এখানে। তবে এর মধ্যে গাঙশালিকের সংখ্যা বেশি। বাকি জাতের শালিকগুলোর সংখ্যায় অনেক কম। তবে শালিকের বিভিন্ন প্রজাতি হলেও এক সাথেই খাবার খেয়ে থাকে। বিচরণ আর রাত্রিযাপন করে স্ব স্ব গোত্রের সাথে।